নিজস্ব প্রতিবেদক :
আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, হত্যা-অগ্নিসংযোগকারীরা কোন মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে? যারা একাত্তরের পরাজিত শক্তির দোসর, তাদের এদেশে রাজনীতি করার অধিকার নেই। পাকিস্তানিরা পুড়িয়েছিল গোলা ভরা ধান, বিএনপি পোড়াচ্ছে চাল ভরা ট্রাক। সারা দেশে তারা অগ্নিসন্ত্রাস করে যাচ্ছে। হরতাল-অবরোধ ডেকে বসে থাকছে, অথচ তাদের নিজেদেরই দেখা নেই। গাড়ি পোড়ানো, মানুষ হত্যা, রেললাইনে নাশকতা-এই হচ্ছে তাদের কর্মসূচি।
বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ সভায় তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশকে হেয় চোখে দেখা হতো, যে বাংলাদেশকে পাকিস্তানিরা মনে করেছিল বোঝা, এটা চলে গেলেই ভালো; আজকে সেই পাকিস্তান বলে আমাদের বাংলাদেশ বানিয়ে দাও। আমরা বাংলাদেশের মতো উন্নত হতে চাই। আর যারা বলেছিল বটমলেস বাস্কেট, তারা দেখে যে বাংলাদেশ বাঙালিকে তো দাবায় রাখা যায় না, যেটা জাতির পিতা বলেছিলেন।
প্রতিটা নির্বাচনের আগে চক্রান্ত হয় মন্তব্য করে সরকারপ্রধান বলেন, এখন তাদের নানারকম চক্রান্ত শুরু হয়েছে। কিন্তু এদেশের মানুষের শক্তি হলো বড় শক্তি আমি যেটা বিশ্বাস করি। আর সেই বিশ্বাস আছে বলেই পরপর আমরা তিনবার (ক্ষমতায়) আসতে পেরেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘৯৬ এ যখন ক্ষমতায় এসেছিলাম, মাত্র পাঁচ বছর সময় পেয়েছিলাম। সেই একই শক্তির চক্রান্তে ২০০১ এ সরকারে আসতে পারিনি। অনেক ঘাত প্রতিঘাতের পর আমরা সরকারে এসেছি। আজকে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত আছে।’
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষ সেবা পায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের কোথায় হলো? আজকে তো সেই ছিন্ন কাপড় পরে মানুষ আদুল গায়ে ক্ষুধার্ত পেট নিয়ে আসে না। এখন তো মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা প্রতিটি মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে পেরেছি। আজকে মানুষ বিদেশে গেলে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে সম্মান পায়। আর এই সম্মানটা দিতে পারে না আমাদের দেশের কিছু কুলাঙ্গার। ঠিক একাত্তর সালে ওই হানাদার বাহিনীর দোসর যারা ছিল, এরাই তাদের প্রেতাত্মা হয়ে দেশের মানুষের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে মানুষ হত্যা করে যাচ্ছে, হত্যার পরিকল্পনা করছে।
তিনি আরও বলেন, যারা জ্বালাও পোড়াও করে, রেললাইনের ফিসপ্লেট তুলে ফেলে, এরা তো পরাজিত শক্তির দালাল, পরাজিত শক্তির দোসর। এদের বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার নেই। কারণ এই খুনি সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতিবাজ, এদের বাংলাদেশে কোনো স্থান নেই। বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ, বাংলাদেশের মানুষ তাদের গণতন্ত্রের অধিকার, ভোটের অধিকার ফিরে পেয়েছে। তারা ভোটের অধিকার প্রয়োগ করবে, শান্তিতে বাস করবে। মানুষ উন্নত জীবন পাবে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
বিএনপি’র সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, এখনও হানাদারদের প্রেতাত্মা হয়ে মানুষ হত্যার পরিকল্পনা চলছে। তাদের বিরুদ্ধে সচেতন হবার আহ্বানও জানান তিনি। বলেন, তারা ধ্বংস করতে পারে, শান্তি দিতে পারে না। কোথাও আগুন দিতে গেলে, নাশকতা করতে গেলে, দুর্বৃত্তদের সাধারণ মানুষ যেন রুখে দেয়, সে আহ্বানও জানান তিনি। বাংলাদেশকে আর কখনও পরাজিত শক্তির হাতে তুলে দেয়া হবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, যে দেশের দারিদ্যের হার ৪১ থেকে ১৮ শতাংশে নামানো হয়েছে, গৃহহীনদের ঘর তুলে দেয়া হচ্ছে, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে, গ্রামে গ্রামে স্কুল-কলেজ বানানো হচ্ছে, তখনও কেউ কেউ বলছে বাংলাদেশ শেষ হয়ে যাচ্ছে। বিদেশে গেলে আজ বাংলাদেশি হিসেবে সবাই সম্মান পায় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। যে অধিকার ক্যান্টনমেন্টে বন্দি ছিল। জনগণের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে, এই দেশ জাতির পিতার আদর্শে গড়ে উঠবে, স্বাধীনতার চেতনায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে উঠবে, সেই সিদ্ধান্ত নিয়েই আমাদের পথচলা। জনগণের সিদ্ধান্ত নিয়েই আমরা সরকারে এসেছি। যার ফলে আজকে বাংলাদেশ উন্নত হয়েছে। মাত্র তো ১৫ বছর একটানা সময় পেলাম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ এর নির্বাচনে জয়ী হয়েছি, ২০০৮ এ সরকার গঠন করেছি। ২০০৯ থেকে আজকে ২০২৩; বাংলাদেশ আজকে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।
খালেদা জিয়াকে ভোট চুরির অপরাধে বিদায় নিতে হয়েছিল বলে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, এক বার নয়, দুই বার বিদায় নিতে হয়েছিল। ২০০১ সালে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। আমি বলেছিলাম গ্যাস পাবে না। আল্লাহ-তায়ালাও যখন সম্পদ দেয়, মানুষ বুঝে দেয়। সেই গ্যাস দিতে পারেনি। কূপ খনন করে দেখে গ্যাস নাই।
শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া ৯৬ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচন করে বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল রশিদ ও হুদাকে এমপি বানাল; পার্লামেন্টে বিরোধী দলের নেতার আসন দিল। ফারুককেও চেষ্টা করেছিল নওগাঁ থেকে জিতিয়ে আনতে, সেটা পারে নাই। খালেদা ঘোষণা দিল যে সে দ্বিতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়েছে। বেশি দিন ক্ষমতায় বসতে পারেনি, ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হলো, ৩০ মার্চ জনগণের রুদ্ররোষে খালেদা জিয়াকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। নাকে খত দিয়ে পদত্যাগ করে বিদায় নিয়েছিল সে।
সরকারপ্রধান বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র তিন বছর সাত মাস সময় পান, এরই মধ্যে দেশটাকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলেন। স্বল্পোন্নত দেশের স্বীকৃতি জাতিসংঘ কর্তৃক আদায় করেন। এতো অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের উন্নতিটা আমাদের স্বাধীনতা বিরোধীরা ভাবতেও পারেনি।
তিনি আরও বলেন, যারা বলেছিল বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে কি হবে? এটা তো বটমলেস বাস্কেট হবে। তারা এই উন্নয়নটাকে মেনে নিতে পারেনি। একটা দেশ এত দ্রুত অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাবে, প্রবৃদ্ধি ৯ ভাগের ওপর উঠতে পারে, এটা তাদের ধারণার বাইরে ছিল। চক্রান্ত করে ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যেখানে বাস আছে, রেললাইন আছে; যেখানে এরকম (রেলপথ তুলে ফেলা) ঘটনা ঘটবে, সাথে সাথে যদি জনগণ মাঠে নামে তাহলে এরা হালে পানি পাবে না। এরা ধ্বংস করতে পারে, মানুষের জন্য সৃষ্টি করতে পারে না; এরা মানুষকে খুন করতে পারে, মানুষের জীবনে শান্তি নিরাপত্তা দিতে পারে না; এরা মানুষের সর্বনাশ করতে পারে, মানুষের জীবনটা উন্নত করতে পারে না। কাজেই তাদের কাছ থেকে সাবধান। আর কোথাও যদি এই ধরনের রেলের স্লিপ তুলে ফেলে, আগুন দেয়; যখনই করতে যাবে সরাসরি তাদের ধরতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
রেল লাইন থেকে বগি ফেলে দিয়ে মানুষ হত্যা করে, এরা আবার গণতন্ত্রের কথা বলে কোন মুখে? হত্যাকারীরা কখনো গণতন্ত্র দিতে পারে না। এটা দেশের মানুষকে বুঝতে হবে।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে সরকারপ্রধান বলেন, শহীদের রক্ত কখনও বৃথা যায়নি। আজকের বাংলাদেশ এই ১৫ বছরে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। সেই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। জাতির পিতার ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে আমরা সেই পথে এগিয়ে যাচ্ছি। দেশের মানুষ আর কারও কাছে কখনও হাত পেতে চলবে না, ভিক্ষা করে চলবে না। এদেশের মানুষ মর্যাদা নিয়ে চলবে। মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয়ী জাতি আমরা। বিজয়ী জাতি হিসেবেই এদেশ চলবে।
এ সময় সকল শহীদ বুদ্ধিজীবী, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমরা দেশকে আর কখনও এই পরাজিত শক্তির হাতে তুলে দেব না।
শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কার্যনির্বাহী সদস্য তারানা হালিন, লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, শহীদ বুদ্ধিজীবী সন্তান নুজহাত চৌধুরী প্রমুখ।
সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, উপ-প্রচার সম্পাদক আবদুল আউয়াল শামীম।