Dhaka রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫, ১৯ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময় : ১২:৩৯:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩
  • ১৯১ জন দেখেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সর্বস্তরের মানুষ ঢল। শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে জড়ো হতে শুরু করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

বৃহস্পতিবার (ডিসেম্বর ১৪) সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা লোকজন সারিবদ্ধভাবে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করছেন।শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসা বেশিরভাগ মানুষই শোকের প্রতীক কালো পোশাক পরে এসেছেন। তাদের হাতে ফুলের তোড়াসহ ছোট ছোট প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন দেখা যায়।

তীব্র শীতকে উপেক্ষা করে ভোরেই সেখানে শ্রদ্ধা জানাতে ফুল নিয়ে আসেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লাখো মানুষ। রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী আসার আগেই আশপাশের এলাকা লোকারণ্য হয়ে যায়। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা ছাড়াও সাধারণ মানুষ, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পরিবারের সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা, নতুন প্রজন্মের তরুণেরা সাতসকালেই হাজির হন। তারা নিজস্ব ব্যানার হাতে এসেছেন শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।

সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও ৭টা ৬ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর জনসাধারণের জন্য স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। পরে দলে দলে যোগ দেন শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা মিছিল সহযোগে আসতে থাকেন।

সকাল ৮টার দিকে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। শ্রদ্ধা জানাতে আসেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, অনেকে ভেবেছিল বুদ্ধিজীবী হত্যার রায় হলেও বাস্তবায়ন হবে না। কিন্তু অনেকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেও যুদ্ধপরাধীদের বিচার হয়েছে, সামনেও হবে।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, দেশ থেকে বিএনপি-জামায়াতের সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে যতদিন না নিশ্চিহ্ন না করতে পারবো, ততদিন পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবেই।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ১৯৭১ এর ১৪ ডিসেম্বর রাজাকার আলবদররা পরিকল্পিতভাবে এ দেশের মেধাবী সন্তানদের হত্যা করেছে। তারা এখনও নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। কোনোভাবেই যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকারদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হতে দেওয়া যাবে না।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক নুরুল হুদা বলেন, বুদ্ধিজীবী আমরা কাদের বলব? যারা শুধু স্কুল কলেজে পড়িয়েছে বা যারা সাংবাদিকতা করেছে তাদের? কিন্তু গ্রামীণ স্তরেও অনেক বুদ্ধিজীবী ছিলেন। তাদের লেখনী ও অবদান সম্পর্কে লোক সমীক্ষা হওয়া প্রয়োজন। বাংলা একাডেমি সেই কাজটি করবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করতে বিভিন্ন সময়ে নানা অপপ্রয়াস চলেছে। তাদের মধ্যে যেন একটা উপলব্ধি জাগ্রত হয় যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলা গঠনে একটি স্বপ্ন রেখে গেছেন। সেই সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য যে প্রত্যয়, সেই প্রত্যয় থেকেই আমরা আজ এখানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছি। যতদিন অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে আমরা এখানে আসবো।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের শেষ ভাগে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের এ দেশীয় দোসরদের সহযোগিতায় ৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর হত্যা করেছিল শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাংবাদিকসহ জাতির হাজারো মেধাবী সন্তানকে।

পরিকল্পিত গণহত্যাটি বাংলাদেশের ইতিহাসে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নামে পরিচিত। বন্দি অবস্থায়ও বুদ্ধিজীবীদের বিভিন্ন বধ্যভূমিতে নিয়ে হত্যা করা হয়।

এই ঘটনার দুদিন পর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাদের ক্ষত-বিক্ষত ও বিকৃত লাশ রায়েরবাজার এবং মিরপুর বধ্যভূমিতে পাওয়া যায়। অনেকের লাশ শনাক্তও করা যায়নি। পাওয়া যায়নি বহু মরদেহ। এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণ করে প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশে পালিত হয় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। এবারও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি পালন করছে জাতি।

অন্যদিকে রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদীতেও সকাল থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। সবাই ফুল হাতে সারিবদ্ধভাবে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করছেন।

অনেকেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে রায়েরবাজারে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পদচারণায় স্মৃতিসৌধ মুখরিত হয়ে উঠেছে।

বাঙালি জাতি বরাবরই ১৬ ডিসেম্বর বিজয় উৎসবের আগে এই দিনটিতে শ্রদ্ধা ও বেদনার সঙ্গে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করে থাকে। এবারও দিনটি উপলক্ষে সরকারিভাবে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

নেতা হয়েছেন শুধু ভোটের জন্য নয়, পথ দেখানোর দায়িত্বও আপনার : উপদেষ্টা সাখাওয়াত

শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা

প্রকাশের সময় : ১২:৩৯:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সর্বস্তরের মানুষ ঢল। শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে জড়ো হতে শুরু করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

বৃহস্পতিবার (ডিসেম্বর ১৪) সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা লোকজন সারিবদ্ধভাবে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করছেন।শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসা বেশিরভাগ মানুষই শোকের প্রতীক কালো পোশাক পরে এসেছেন। তাদের হাতে ফুলের তোড়াসহ ছোট ছোট প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন দেখা যায়।

তীব্র শীতকে উপেক্ষা করে ভোরেই সেখানে শ্রদ্ধা জানাতে ফুল নিয়ে আসেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লাখো মানুষ। রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী আসার আগেই আশপাশের এলাকা লোকারণ্য হয়ে যায়। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা ছাড়াও সাধারণ মানুষ, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পরিবারের সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা, নতুন প্রজন্মের তরুণেরা সাতসকালেই হাজির হন। তারা নিজস্ব ব্যানার হাতে এসেছেন শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।

সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও ৭টা ৬ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর জনসাধারণের জন্য স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। পরে দলে দলে যোগ দেন শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা মিছিল সহযোগে আসতে থাকেন।

সকাল ৮টার দিকে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। শ্রদ্ধা জানাতে আসেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, অনেকে ভেবেছিল বুদ্ধিজীবী হত্যার রায় হলেও বাস্তবায়ন হবে না। কিন্তু অনেকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেও যুদ্ধপরাধীদের বিচার হয়েছে, সামনেও হবে।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, দেশ থেকে বিএনপি-জামায়াতের সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে যতদিন না নিশ্চিহ্ন না করতে পারবো, ততদিন পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবেই।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ১৯৭১ এর ১৪ ডিসেম্বর রাজাকার আলবদররা পরিকল্পিতভাবে এ দেশের মেধাবী সন্তানদের হত্যা করেছে। তারা এখনও নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। কোনোভাবেই যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকারদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হতে দেওয়া যাবে না।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক নুরুল হুদা বলেন, বুদ্ধিজীবী আমরা কাদের বলব? যারা শুধু স্কুল কলেজে পড়িয়েছে বা যারা সাংবাদিকতা করেছে তাদের? কিন্তু গ্রামীণ স্তরেও অনেক বুদ্ধিজীবী ছিলেন। তাদের লেখনী ও অবদান সম্পর্কে লোক সমীক্ষা হওয়া প্রয়োজন। বাংলা একাডেমি সেই কাজটি করবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করতে বিভিন্ন সময়ে নানা অপপ্রয়াস চলেছে। তাদের মধ্যে যেন একটা উপলব্ধি জাগ্রত হয় যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলা গঠনে একটি স্বপ্ন রেখে গেছেন। সেই সোনার বাংলা গড়ে তোলার জন্য যে প্রত্যয়, সেই প্রত্যয় থেকেই আমরা আজ এখানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছি। যতদিন অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে আমরা এখানে আসবো।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের শেষ ভাগে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের এ দেশীয় দোসরদের সহযোগিতায় ৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর হত্যা করেছিল শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাংবাদিকসহ জাতির হাজারো মেধাবী সন্তানকে।

পরিকল্পিত গণহত্যাটি বাংলাদেশের ইতিহাসে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নামে পরিচিত। বন্দি অবস্থায়ও বুদ্ধিজীবীদের বিভিন্ন বধ্যভূমিতে নিয়ে হত্যা করা হয়।

এই ঘটনার দুদিন পর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাদের ক্ষত-বিক্ষত ও বিকৃত লাশ রায়েরবাজার এবং মিরপুর বধ্যভূমিতে পাওয়া যায়। অনেকের লাশ শনাক্তও করা যায়নি। পাওয়া যায়নি বহু মরদেহ। এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণ করে প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশে পালিত হয় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। এবারও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি পালন করছে জাতি।

অন্যদিকে রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদীতেও সকাল থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। সবাই ফুল হাতে সারিবদ্ধভাবে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করছেন।

অনেকেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে রায়েরবাজারে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পদচারণায় স্মৃতিসৌধ মুখরিত হয়ে উঠেছে।

বাঙালি জাতি বরাবরই ১৬ ডিসেম্বর বিজয় উৎসবের আগে এই দিনটিতে শ্রদ্ধা ও বেদনার সঙ্গে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করে থাকে। এবারও দিনটি উপলক্ষে সরকারিভাবে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।