নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপির সম্পর্কে কথা বলতেই আমার ঘৃণা হয় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, বিএনপির নানা ধরনের বক্তব্য এবং অবরোধের ডাক দিচ্ছেন, গাড়ি-ঘোড়া পোড়ানোর জন্য। যে দলে গাড়ি-ঘোড়া পোড়ালে, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করলে রাজনৈতিক পদের প্রমোশন হয়, সেই দল সন্ত্রাসী সংগঠনের চেয়েও ভয়ংকর। এদের সম্পর্কে আমার কথা বলতেই ঘৃণা হয়।
বিএনপির নেতা রুহুল কবির রিজভী গুপ্ত জায়গা থেকে যখন-তখন হরতাল-অবরোধ ডাকছেন, এ সুযোগ কি সরকার তৈরি করে দিচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার কেন করে দেবে? তিনিই তো গুপ্তস্থান থেকে করছে এবং তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্টও জারি হয়েছে। সরকার অনেককেই খুঁজে পাচ্ছে না। বিএনপির নেতারাতো সবাই এখন গুপ্তস্থানে চলে গেছেন। রুহুল কবির রিজভীও গুপ্তস্থান থেকে নানা রকমের বক্তব্য দিচ্ছেন। অবরোধের ডাক দিচ্ছেন, অবরোধের নামে গাড়ি পোড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছেন।
তিনি বলেন, যে দলে গাড়ি পোড়ালে, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করলে প্রমোশন হয় সেটিতো একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের থেকেও জঘন্য একটি সংগঠন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপির অপরাজনীতি চিরদিনের জন্য বন্ধ করতে হবে। তারা জনগণের স্বাভাবিক জীবন প্রতিহত করার জন্য গোপন অবরোধের ডাক দেয়। দেশের মানুষ তাদের ডাকে সাড়া না দিয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আর লন্ডন থেকে ওয়ার্ডপর্যায়ে ফোন করে গাড়ি-ঘোড়া পোড়ানোর জন্য বলা হয়। আবার সেটির ভিডিও চিত্র ধারণ করে লন্ডনে পাঠাতে হয়। সেটি পাঠালে তার রাজনৈতিক প্রমোশন হয়। যে দলে গাড়ি-ঘোড়া পোড়ালে, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করলে পদের প্রমোশন হয় সেটি তো একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের থেকেও জঘন্য একটি সংগঠন। এদের সম্পর্কে বলতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে।
যারা ট্রেনের লাইন কেটেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে ড. হাছান বলেন, অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা মনে করছেন লাইন কেটেছেন, তাদের পুলিশ খুঁজে পাবে না, এটা ঠিক নয়। পুলিশ অবশ্যই তাদেরকে খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবে এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিএনপির তথাকথিত অবরোধ কোথাও পালিত হয়নি দাবি করে হাছান মাহমুদ বলেন, দেশের নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৩০টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল নির্বানে অংশ নিচ্ছে। কিন্তু নির্বাচন প্রতিহত করার লক্ষ্যে ক্রমাগতভাবে গুপ্তস্থান থেকে অবরোধের ডাক দেওয়া হচ্ছে। সেই অবরোধে দেশের মানুষের বিন্দুমাত্র সাড়া নেই। দেশের মানুষ স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
সেই কাজকর্মকে ব্যাহত করতে ২৮ অক্টোবর থেকে ক্রমাগতভাবে গাড়িঘোড়ায় আগুন দেওয়া হচ্ছে দাবি করে সরকারের এ মন্ত্রী বলেন, গতকাল গাজীপুরে রেল লাইনের ২০ ফুট কেটে দেওয়া হয়েছে। এতে ৭টি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। একজন যাত্রী নিহত ও অর্ধশত যাত্রী আহত এবং ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছে। পাশাপাশি রাজধানীতে কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, তাদের এই তথাকথিত অবরোধ কোথাও পালিত হয়নি। কিন্তু এ পর্যন্ত সাড়ে ৩০০ যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে। গাড়িতে আগুন দেওয়া এ কোন রাজনীতি? পৃথিবীর কোথাও দেখিনি রাজনীতির নামে বাসে আগুন দেওয়া হয়। গাড়িতে আগুন দেওয়ায় এ পর্যন্ত ৭ জনের বেশি মানুষ নিহত ও বহু মানুষ আগুনে দগ্ধ হয়েছে। এই অপরাজনীতি অচিরেই বন্ধ হওয়া দরকার।
বিএনপি বলছে তারা গণতান্ত্রিক আন্দোলন করছে। গাড়িঘোড়া পুড়িয়ে কি গণতান্ত্রিক আন্দোলন? মানুষ পোড়ানো কি গণতান্ত্রিক আন্দোলন? এভাবে জনজীবন ব্যাহত করে জানমালের ক্ষতি করে কখনো গণতান্ত্রিক আন্দোলন নয়। এগুলো দেশবিরোধী, সন্ত্রাসী, জনবিরোধী কর্মকাণ্ড। তারা যে কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে এগুলো বর্বরতা, হিংস্রতা, যা হিংস্র হায়নাকেও হার মানিয়েছে। তাদের এই অপরাজনীতি চিরদিনের মতো বন্ধ করতে হবে, বলেন তথ্যমন্ত্রী।
২৮ অক্টোবর বিএনপির পাশাপাশি অন্যান্য সমমনাদল ছিল, তারা কিন্তু জড়িত ছিল। তারা কিন্তু প্রকাশ্যে মিছিল-মিটিং করছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাঙ অনেক ছোট, কিন্তু তার আওয়াজ অনেক বড়। আমাদের রাজনীতিতেও কিছু দল আছে ব্যাঙের মতো ছোট, কিন্তু আওয়াজ অনেক বড়। তারা নানা ধরনের কথা বলে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে কেউ প্রকাশ্যে আসতে নিষেধ করেনি। তারা বিশ্ব মানবাধিকার দিবসের দিন নানা জায়গায় অনুষ্ঠান করেছে। আবার গর্তের মধ্যে লুকিয়ে গেছে। তাদের তো সরকার বা আওয়ামী লীগ বলেনি আপনারা গর্তের মধ্যে ঢুকে যান। যারা অপরাধ করে তারা গা-ঢাকা দেন। তারা অপরাধ করেছে এজন্য নিজেরাই গা-ঢাকা দিয়েছেন।’
জাতীয় পার্টির নির্বাচনে আসা নিয়ে কোনো আশঙ্কা রয়েছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, জাতীয় পার্টির মহাসচিব এরই মধ্যে স্পষ্ট করেছেন তারা নির্বাচন করার জন্য নমিনেশন জমা দিয়েছেন এবং নির্বাচন করবেন। আমিও বিশ্বাস করি তারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ভালো ফল করবেন। আর জাতীয় পার্টি আমাদের দীর্ঘদিনের সহযোগী। গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য তারা সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আজকের পরিস্থিতিতেও জাতীয় পার্টি আগের মতো সহযোগী হিসেবে কাজ করবে।
১৮ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দের পর শুধু নির্বাচন সংক্রান্ত সভা-সমাবেশ করা যাবে, অন্য কোনো সভা-সমাবেশ করা যাবে না, এ ধরনের একটি নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন নির্বাচন কমিশন নানা নির্দেশনা দিচ্ছে। এটি নিয়ে নানা বিচার-বিশ্লেষণ বা সিদ্ধান্ত সেটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে নেবে। নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার পর প্রকৃতপক্ষে পুরো ক্যানভাসটাই তো নির্বাচন কমিশনের অধীনে। সুতরাং নির্বাচন কমিশনের যে কোনো নির্দেশনা দেওয়ার অধিকার আছে। সেক্ষেত্রে দেখতে হবে এতে সংবিধানিক অধিকারগুলো ক্ষুণ্ন হচ্ছে কি না সেটি দেখার বিষয়। তবে নির্বাচন কমিশনের যে কোনো নির্দেশনা দেওয়ার এখতিয়ার আছে।