Dhaka শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সমাবেশে যোগ দিয়ে মান্না বললেন, ‘আমি দালাল না’

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

সপ্তম দফায় আবারও সরকার পতনের এক দফা দাবিতে সারাদেশে বিএনপির ডাকা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি রোববার (২৬ নভেম্বর) সকাল থেকে শুরু হয়েছে। অবরোধের সমর্থনে রাজধানীর প্রেসক্লাবের সামনে গণসংহতি আন্দোলনের কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। রাজপথে ফিরেই এত দিন কোথায় ছিলেন- তার জবাব দিয়েছেন তিনি। সেখানে বক্তৃতায় তিনি বলেন, মাহমুদুর রহমান মান্না দালাল না।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বেশ কিছুদিন একটু অসুস্থ ছিলাম। এখনো আমি পুরো সুস্থ নই। আজকের এই সমাবেশে আসব এ রকম সিদ্ধান্ত ছিল না। কিন্তু পরিস্থিতি আমাকে আসতে বাধ্য করেছে। এই যে পুরো এক মাস গণতন্ত্র মঞ্চ লাগাতার লড়াই করছে। মিছিল-মিটিংয়ে কোনো ত্রুটি রাখেনি। আমার দল নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সারসহ পুরো সংগঠনের নেতারা এই আন্দোলনের মধ্যে আছেন। কিন্তু হঠাৎ করে কেউ কেউ পত্রিকায় মিডিয়ায় লিখলেন, মাহমুদুর রহমান মান্না কোথায়? হঠাৎ আমার জন্য এত দরদ, নাকি। সরকারি দল করে না এ রকম। বিএনপি কই, মাঠে তো দেখি না। আন্দোলন তো করে না। আবার একজন শীর্ষ ক্ষমতার মালিক বলেন, তারেক ব্যাটা এত যদি সাহস থাকে দেশে আয়। উনি যদি দেশে আসেন তাহলে আপনি কী করবেন? সোজা এয়ারপোর্ট থেকে ধরে নিয়ে জেলে পাঠাবেন। এমনি এমনি জেলে যাওয়ার জন্য আসবে কেন?

তিনি আরও বলেন, এখন বলছে, রাজপথে কোথায় বিরোধী দলের নেতা বিশেষ করে বিএনপিকে তো দেখি না। বিএনপি নেতাদের ওপরে যে নির্যাতন করেছে , ২৮ তারিখ যে ঘটনাটা ঘটিয়েছে , এখনো টপাটপ চিল যেমন মুরগির বাচ্চা ধরে নিয়ে যায় এ রকম বিএনপি নেতাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। বিচার করছেন রাত-দিন মিলে। প্রতিদিন পত্রিকায় দেখবেন ৬০-৬৫ জন, কারও নামে দুবছর, কারও নামে আড়াই বছর, কার নামে তিন বছর সাজা দিয়ে দিচ্ছে। মামলা চালুই হয়নি অথচ সাজা নির্ধারিত।

নির্বাচনের কত চমৎকার পরিবেশ বিরাজ করছে সরকারি দলের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে মান্না বলেন, আপনারা আপনাদের অফিসের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করেন, খাওয়া-দাওয়া করেন। ক্যান্ডিডেটদের তো ঠিক নেই। কতদিন আওয়ামী লীগ করেন তারও ঠিক নেই। কেনোমতে যাতে একটা নমিনেশন পাওয়া যায়, নমিনেশন কিনছেন। অতএব আপনাদের তো উৎসব হবেই।

তিনি বলেন, ‘নায়ক-নায়িকারা যাচ্ছেন। অনেকে তাদের দেখতে যায়। কেউ আবার বিরাট বিরাট ক্রিকেটারকে দেখতে যাচ্ছেন। বিরাট উৎসব। মাল ছাড় কাম কর। এটা হলো আওয়ামী লীগ। এই হলো নির্বাচন। আরে এই নির্বাচনের কথা বলে আমার নামে পত্রিকায় লিখছে, ওনাকে এতদিন ধরে দেখা যাচ্ছে না কেন? ঘটনা তো খারাপ। আমরা শুনছি, সরকারি বড় বড় মন্ত্রীদের সঙ্গে তার বৈঠক হয়েছে। ’ এ সময় কার সঙ্গে তার বৈঠক হয়েছে যে কোনো একজনের নাম জানতে চান মান্না।

তিনি আরো বলেন, এই নির্বাচন সরকারের জন্য, আওয়ামী লীগের জন্য কোনও নির্বাচন নয় এটা তাদের নির্বাসনে পাঠাবে, অপেক্ষা করেন। তিনি বলেন, ‘চেষ্টা করেছে না বিরোধী দল ভাঙতে, নতুন নতুন দল করতে। খেয়াল করে দেখেন, পাকিস্তান আমলে পর্যন্ত রাজাকার পাওয়া গেছে। এবার তো রাজাকারও পাওয়া যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগ এবার রাজাকার-আলবদরও পায় না। নতুন নতুন প্রার্থী দেবে, তাও পায় না। খালি আওয়ামী লীগ আছে, আর কেউ নেই।’

সমাবেশে মাহমুদুর রহমান মান্না সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘চিল যেমন মুরগির বাচ্চা ধরে নিয়ে যায়, এমন করে বিএনপির নেতাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছেন, বিচার করছেন, রাত-দিন করে কারও নামে দুই বছর, কারও নামে আড়াই বছর, কারও নামে তিন বছর সাজা দিয়ে দিচ্ছেন। মামলা চালুই হয়নি, সাজা নির্ধারিত। দুই হাত কাটা মানুষের নামে সন্ত্রাসের মামলা, মৃত মানুষের নামে ফৌজদারি সাজা। আর ওনারা (সরকার) বলছেন, নির্বাচনের চমৎকার পরিবেশ বিরাজ করছে।’

নির্বাচন ঠেকে গেছে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ‘ওরা বিভিন্ন সময় বলে—বিরোধী দল নির্বাচন প্রতিহত করতে চায়, এই নির্বাচন ঠেকাতে পারবে? আমি বলি, নির্বাচন ঠেকে গেছে। নির্বাচন কি হচ্ছে? যারাই যা করেন পার পাবেন না। ওদের নির্বাচনই নেই, ঠেকাবো কী? জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছেন নির্বাচন। বিশ্ববাসী প্রত্যাখ্যান করেছে এই নির্বাচন।’

এজেন্সির টাকা খেয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের নামে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে অভিযোগ করে মান্না বলেন, আমরা রাজনীতির চামচিকা নই। আমরা রাজনীতির কিং। আমরা লড়াই করেছি জনগণের জন্য। লড়াই চলছে, লড়াই চলবে। থামবে না।

এ সময় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুমসহ গণতন্ত্র মঞ্চের আওতাধীন বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে অবরোধের পক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে মিছিল করে তারা।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

সমাবেশে যোগ দিয়ে মান্না বললেন, ‘আমি দালাল না’

প্রকাশের সময় : ০৩:৫৫:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

সপ্তম দফায় আবারও সরকার পতনের এক দফা দাবিতে সারাদেশে বিএনপির ডাকা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি রোববার (২৬ নভেম্বর) সকাল থেকে শুরু হয়েছে। অবরোধের সমর্থনে রাজধানীর প্রেসক্লাবের সামনে গণসংহতি আন্দোলনের কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। রাজপথে ফিরেই এত দিন কোথায় ছিলেন- তার জবাব দিয়েছেন তিনি। সেখানে বক্তৃতায় তিনি বলেন, মাহমুদুর রহমান মান্না দালাল না।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বেশ কিছুদিন একটু অসুস্থ ছিলাম। এখনো আমি পুরো সুস্থ নই। আজকের এই সমাবেশে আসব এ রকম সিদ্ধান্ত ছিল না। কিন্তু পরিস্থিতি আমাকে আসতে বাধ্য করেছে। এই যে পুরো এক মাস গণতন্ত্র মঞ্চ লাগাতার লড়াই করছে। মিছিল-মিটিংয়ে কোনো ত্রুটি রাখেনি। আমার দল নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সারসহ পুরো সংগঠনের নেতারা এই আন্দোলনের মধ্যে আছেন। কিন্তু হঠাৎ করে কেউ কেউ পত্রিকায় মিডিয়ায় লিখলেন, মাহমুদুর রহমান মান্না কোথায়? হঠাৎ আমার জন্য এত দরদ, নাকি। সরকারি দল করে না এ রকম। বিএনপি কই, মাঠে তো দেখি না। আন্দোলন তো করে না। আবার একজন শীর্ষ ক্ষমতার মালিক বলেন, তারেক ব্যাটা এত যদি সাহস থাকে দেশে আয়। উনি যদি দেশে আসেন তাহলে আপনি কী করবেন? সোজা এয়ারপোর্ট থেকে ধরে নিয়ে জেলে পাঠাবেন। এমনি এমনি জেলে যাওয়ার জন্য আসবে কেন?

তিনি আরও বলেন, এখন বলছে, রাজপথে কোথায় বিরোধী দলের নেতা বিশেষ করে বিএনপিকে তো দেখি না। বিএনপি নেতাদের ওপরে যে নির্যাতন করেছে , ২৮ তারিখ যে ঘটনাটা ঘটিয়েছে , এখনো টপাটপ চিল যেমন মুরগির বাচ্চা ধরে নিয়ে যায় এ রকম বিএনপি নেতাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। বিচার করছেন রাত-দিন মিলে। প্রতিদিন পত্রিকায় দেখবেন ৬০-৬৫ জন, কারও নামে দুবছর, কারও নামে আড়াই বছর, কার নামে তিন বছর সাজা দিয়ে দিচ্ছে। মামলা চালুই হয়নি অথচ সাজা নির্ধারিত।

নির্বাচনের কত চমৎকার পরিবেশ বিরাজ করছে সরকারি দলের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে মান্না বলেন, আপনারা আপনাদের অফিসের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করেন, খাওয়া-দাওয়া করেন। ক্যান্ডিডেটদের তো ঠিক নেই। কতদিন আওয়ামী লীগ করেন তারও ঠিক নেই। কেনোমতে যাতে একটা নমিনেশন পাওয়া যায়, নমিনেশন কিনছেন। অতএব আপনাদের তো উৎসব হবেই।

তিনি বলেন, ‘নায়ক-নায়িকারা যাচ্ছেন। অনেকে তাদের দেখতে যায়। কেউ আবার বিরাট বিরাট ক্রিকেটারকে দেখতে যাচ্ছেন। বিরাট উৎসব। মাল ছাড় কাম কর। এটা হলো আওয়ামী লীগ। এই হলো নির্বাচন। আরে এই নির্বাচনের কথা বলে আমার নামে পত্রিকায় লিখছে, ওনাকে এতদিন ধরে দেখা যাচ্ছে না কেন? ঘটনা তো খারাপ। আমরা শুনছি, সরকারি বড় বড় মন্ত্রীদের সঙ্গে তার বৈঠক হয়েছে। ’ এ সময় কার সঙ্গে তার বৈঠক হয়েছে যে কোনো একজনের নাম জানতে চান মান্না।

তিনি আরো বলেন, এই নির্বাচন সরকারের জন্য, আওয়ামী লীগের জন্য কোনও নির্বাচন নয় এটা তাদের নির্বাসনে পাঠাবে, অপেক্ষা করেন। তিনি বলেন, ‘চেষ্টা করেছে না বিরোধী দল ভাঙতে, নতুন নতুন দল করতে। খেয়াল করে দেখেন, পাকিস্তান আমলে পর্যন্ত রাজাকার পাওয়া গেছে। এবার তো রাজাকারও পাওয়া যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগ এবার রাজাকার-আলবদরও পায় না। নতুন নতুন প্রার্থী দেবে, তাও পায় না। খালি আওয়ামী লীগ আছে, আর কেউ নেই।’

সমাবেশে মাহমুদুর রহমান মান্না সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘চিল যেমন মুরগির বাচ্চা ধরে নিয়ে যায়, এমন করে বিএনপির নেতাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছেন, বিচার করছেন, রাত-দিন করে কারও নামে দুই বছর, কারও নামে আড়াই বছর, কারও নামে তিন বছর সাজা দিয়ে দিচ্ছেন। মামলা চালুই হয়নি, সাজা নির্ধারিত। দুই হাত কাটা মানুষের নামে সন্ত্রাসের মামলা, মৃত মানুষের নামে ফৌজদারি সাজা। আর ওনারা (সরকার) বলছেন, নির্বাচনের চমৎকার পরিবেশ বিরাজ করছে।’

নির্বাচন ঠেকে গেছে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ‘ওরা বিভিন্ন সময় বলে—বিরোধী দল নির্বাচন প্রতিহত করতে চায়, এই নির্বাচন ঠেকাতে পারবে? আমি বলি, নির্বাচন ঠেকে গেছে। নির্বাচন কি হচ্ছে? যারাই যা করেন পার পাবেন না। ওদের নির্বাচনই নেই, ঠেকাবো কী? জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছেন নির্বাচন। বিশ্ববাসী প্রত্যাখ্যান করেছে এই নির্বাচন।’

এজেন্সির টাকা খেয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের নামে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে অভিযোগ করে মান্না বলেন, আমরা রাজনীতির চামচিকা নই। আমরা রাজনীতির কিং। আমরা লড়াই করেছি জনগণের জন্য। লড়াই চলছে, লড়াই চলবে। থামবে না।

এ সময় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুমসহ গণতন্ত্র মঞ্চের আওতাধীন বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে অবরোধের পক্ষে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে মিছিল করে তারা।