নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এইচএসসিতে ছাত্রীদের পাসের হার বেশি, এটার জন্য ধন্যবাদ। সবসময় আমাদের শুনতে হয় জেন্ডার ইকুয়ালিটি। এখন তো দেখি উল্টো হচ্ছে, ছেলেরা মেয়েদের থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবার দেখি মেয়েদের পাশের হার বেড়ে যাচ্ছে। এখন ছেলেদের পিছিয়ে যাওয়ার কারণ খুঁজে বের করতে হবে।
রোববার (২৬ নভেম্বর) সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ বছরের এইচএসসির ফলাফল হস্তান্তরের পর তিনি তার বক্তব্যে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একসময় মেয়েদের পড়াশোনাই করতে দেওয়া হতো না। অনেক দেশে এখনও মেয়েদের পড়াশোনা করতে দেয় না। আমাদের দেশের মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে, এজন্য তাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।
এসময় ছেলেদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছেলেদের বলবো- পিছিয়ে থেকো না। তোমরাও পড়াশোনা করো, সমানতালে চলো… সেটাই আমরা চাই।
তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছরের ফলে ইতিবাচক লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে। আমি বিশ্বাস করি আমরা যে বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং উদ্যোগ নিয়েছি সেগুলো এর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। শুধুমাত্র পড়ে পাস করলে হবে না, সেটা অর্থবহ হতে হবে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে যথেষ্ট হতে হবে।
মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তাদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছেলেদের বলছি তোমরা পিছিয়ে থেকো না। তোমরা পড়াশোনা করে সমান তালে চলো, সেটাই আমরা চাই। জিপিএতেও মেয়েরা এগিয়ে। যাই হোক আমি ছেলে-মেয়ে সবাইকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
তিনি বলেন, এখন আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে রেজাল্ট খুঁজতে হয় না। আজ মোবাইল ফোনে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফল দেখা যায়। এজন্য আমি সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।
তিনি আরও বলেন, ২০২১ ও ২০২২ সালে সমস্ত বিষয়ে পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়নি, যুক্তিসঙ্গতভাবে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সে সময় আমি দেখেছি, আমাদের এইচএসসি বা সমমনা পরীক্ষার ফলাফল ৬০ দিনে দেওয়ার যে একটা রীতি, সেটা কিন্তু আপনারা অব্যাহত রেখেছেন। সেটার জন্য আপনাদেরকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০২৩ সালের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩ লাখ ৭৪ হাজার চারশত ৮৮ জন। সেখানে আমি বলব সংখ্যাটা বৃদ্ধি পেয়েছে। তার মধ্যে ছাত্র সংখ্যা ৬ লক্ষ আটানব্বই হাজার ১৩৫ জন। ছাত্রীর সংখ্যা ৭৬ হাজার পাঁচশত ৫৩ জন।
যারা পাস করেছে তাদের অভিনন্দন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যারা হয়তো ভালো রেজাল্ট করতে পারেনি, তাদেরও হতাশ হওয়ার কিছু নেই। অভিভাবকদের বলব, যারা উত্তীর্ণ হতে পারেনি তাদের সহানুভূতি দেখাতে হবে। সে যে পারে নাই, সেটার কারণ বের করে তাকে আরও মনোযোগী হতে উৎসাহী করতে হবে। তাকে ধমক বা গালমন্দ করা ঠিক হবে না। এগুলো কোমলমতি ছেলেমেয়েগুলো নিতে পারে না। পরে তারা দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে। সমস্যা চিহ্নিত করে সেটি সমাধানে সহযোগিতা করলে ভবিষ্যতে তারা ভালো করতে পারবে।
কারও রাজনৈতিক অধিকারে সরকার হস্তক্ষেপ করেনি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এমনকি ২০১৩ সাল থেকে যারা অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ পোড়ানোর মামলার আসামি, তারাও ফিরে এসে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছিলেন। কাউকে গ্রেফতারও করা হয়নি। কিন্তু তারা আবার অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছে, তাই তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।
আসন্ন নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, আমাদের যেহেতু (সামনে) জাতীয় নির্বাচন। এটা সংবিধানের বাধ্যবাধকতা যে, আগামী জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। তাই নির্বাচনের জন্য তফসিলও ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের আশা ছিল, নভেম্বর মাসের মধ্যে স্কুলের পরীক্ষাগুলো শেষ করার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা কিন্তু কারও কোনও রাজনৈতিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করিনি। এমনকি ২০১৩ সাল থেকে যারা অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ পোড়ানো… যেখানে ৩ হাজারেরও বেশি মানুষকে পুড়িয়েছে, সেখানে কয়েক হাজার মানুষ মারাও গেছে… সেসময় যারা আসামি ছিল, যারা পলাতক ছিল; যখন বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু করেছে; তারা বহাল তবিয়তে এসেছে। তারা শান্তিপূর্ণ সভা যখন করেছে তাদের কোনও বাধা দেওয়া হয়নি। কিন্তু যখনই তারা আবার জ্বালাও-পোড়াও শুরু করলো, বিশেষ করে ২৮ অক্টোবর থেকে তাদের যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড… প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা, সেখানে ভাঙ্চুর করা; বিচারপতিদের বাড়িতে হামলা; পুলিশকে পিটিয়ে পিটিয়ে মারা, একটা বিভৎস চিত্র, যা চোখে দেখা যায় না; বাসে-গাড়িতে আগুন; এমনকি রেললাইনের কেটে রেখে দেওয়া হয়েছে… ট্রেনে চড়া সাধারণ মানুষকে হত্যা করতে। কিন্তু স্থানীয়রা সচেতন থাকায় কয়েকটি দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে।
তারপরও তারা কমিউটার ট্রেন পুড়িয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এছাড়াও তারা সাংবাদিকদের উপর হামলা করেছে, নারীদের উপর আক্রমণ করেছে, এখন তো তারা প্রতিনিয়ত অগ্নিসংযোগ করেই যাচ্ছে। ফলে ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠানো… এক ভীতির অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। অথচ যতদিন তারা সঠিকভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি করেছে, ততদিন তাদের অসুবিধা ছিল না। তাতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ভাবমূর্তিও বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু এখন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করার পর জনগণ থেকে দ্বারা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা মানুষ পুড়িয়ে মারবে, গাড়ি-রেল সবকিছু পোড়াবে… সাধারণ মানুষ, একটা মানুষ অনেক কষ্ট করে একটা বাস তৈরি করে, সেটা দিয়ে তার জীবন-জীবীকা চলে, সেটা যখন তার চোখের সামনে পুড়ে যায় বা বাসের হেলপার যখন ভেতরে ঘুমিয়ে আছে, সেই অবস্থায় যখন একটা গাড়ি পোড়ায়… এধরনের অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত বা যারা এর হুকুম দাতা বা অর্থদাতা, তাদের আমরা কী করবো, তাদের কি আমরা ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেবো? নাকি তাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যবস্থা নেবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে তারা জ্বালাপোড়াও করতেই থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকেই প্রশ্ন করেন, এদের কেন গ্রেফতার করা হলো? কিন্তু কেউ এটা বলে না যে, এরা অগ্নিসন্ত্রাসী, এরা পুলিশ হত্যা করেছে, মানুষ হত্যা করেছে। এখন ডিজিটাল যুগ, এখন সাধারণ মানুষই ভিডিও করে রাখে। এরা চিহ্নিত।
যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা আমাদের নিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণের স্বার্থে জনগণের সুরক্ষা স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এটা করে যাচ্ছে। জনস্বার্থে এটা করা হবে। যারা জাতীয় সম্পদ নষ্ট করবে, তাদের ছাড় দেওয়ার সুযোগ আছে বলে মনে করি না। তারা বন্ধ না করলে যা ব্যবস্থা নেওয়ার তা নিতেই হবে।
এর আগে সকাল ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল হস্তান্তর করা হয়। গণভবনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও বোর্ডের চেয়ারম্যানরা নিজ নিজ বোর্ডের ফলাফল প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।