আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার প্রধান হাসপাতাল আল- শিফা হাসপাতালের পরিচালক এবং হাসপাতালের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক ও কর্মীদের গ্রেফতার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার লাইভ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
খবরে কখন তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে সে ব্যাপারে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। তবে আল শিফা হাসপাতালের চিকিৎসক খালিদ আবু সামরার বরাত দেওয়া হয়েছে।
আবু সামারা আল জাজিরাকে বলেছেন, বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি বাহিনী হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সালমিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে। তার সঙ্গে কয়েকজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কেন, কোন অভিযোগে ইসরায়েলি বাহিনী তাদের গ্রেপ্তার করেছে, সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোনো কারণ উল্লেখ করেনি সংবাদমাধ্যমটি। তবে, গত কয়েকদিন ধরে আল শিফায় অভিযান চালিয়ে যাচ্ছিল দখলদার দেশ ইসরায়েলের সেনাবাহিনী।
তাদের অভিযোগ ছিল, ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সংগঠন হামাস তাদের কমান্ড সেন্টার হিসেবে আল শিফাকে ব্যবহার করছিল। হাসপাতালের নিচে বাঙ্কার পাওয়া গেছে, এবং সেখান থেকে অস্ত্র-গোলাবারুদও উদ্ধার করা হয়েছে।
চিকিৎসক খালিদ আবু সামরা আরও বলেছেন, গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে আল শিফা ইসরায়েলি অভিযানের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু ছিল।
এদিকে, অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ২০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। খান ইউনিস ও নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে চালানো পৃথক হামলায় এ নিহতের ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার এ হামলায় আহত হয়েছেন আরও অনেকেই।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় শরণার্থী শিবির ও বসতবাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের পূর্বে পাঁচটি বাড়ি লক্ষ্য করে চালানো হামলায় অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। নিখোঁজও হয়েছেন অনেকে।
এ ছাড়া মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহে আরও দুটি বাড়ি ও একটি অ্যাপার্টমেন্ট লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায়ও কয়েকজন হতাহত হন।
মধ্যাঞ্চলীয় শরণার্থী শিবিরের একটি বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এ ঘটনায় পাঁচজন নিহত, বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
সম্প্রতি আল-শিফা হাসপালা যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল। বেশ কয়েকদিন ধরে এ হাসপাতাল অবরুদ্ধ করে রাখে ইসরায়েলি বাহিনী। এরপর সেখানে চতুর্দিক থেকে অভিযান শুরু করে। ইসরায়েলের দাবি, হামাস এই হাসপাতালকে তাদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে। তবে হামাস ইসরায়েলি বাহিনীর এ দাবি উড়িয়ে দিয়েছে।
গাজায় গত এক মাসের বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চলছে। এতে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ১৪ হাজার ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছে ৩০ হাজারের বেশি।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নিহতদের ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু।
গত ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইসরায়েল অভিমুখে হাজার হাজার রকেট ছুড়ে হামাস। তাদের দাবি, মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে ইসরায়েলে পাঁচ হাজার রকেট ছুড়েছে। সেইসঙ্গে হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলের সীমান্ত ভেদ করে দেশটিতে তাণ্ডব চালায়। এতে ইসরায়েলে নিহত হয়েছে ১২০০জন। আহত তিন হাজারের বেশি। সেইসঙ্গে ২৪০ জনকে জিম্মি করে হামাসের যোদ্ধারা। এরপর থেকেই গাজায় হামলা চালিয়েছে যাচ্ছে ইসরায়েল।