নিজস্ব প্রতিবেদক :
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার আমন্ত্রণে বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) তিন দিনের সফরে দিল্লি যাচ্ছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। নির্বাচনের কিছু দিন আগে কেন এই সফর এ সম্পর্কে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন সচিব। তিনি বলেছেন, নির্বাচনকেন্দ্রিক বিশেষ কোনো এজেন্ডা নিয়ে ভারত যাচ্ছেন না। এটা নিয়মিত সফরের অংশ। ভারতের অবস্থানরত বিদেশি ৯০টি মিশনের দূতদের সঙ্গে বৈঠকে করবে তিিিন। সেখানে তিনি আসন্ন নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের অবাধ ও নিরপেক্ষ প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরবেন।
বুধবার (২২ নভেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানান পররাষ্ট্রসচিব।
মাসুদ বিন মোমেন জানান, ৯০টা দেশের দিল্লিতে দূতাবাস আছে। তাদের সঙ্গে মিলিত হবো দিল্লিতে। তাদের সঙ্গে একটা সেশনে ইন্টারেকশন করব। সেখানে আমরা এ সমস্ত মিশন প্রধানদের আমাদের উন্নয়ন অগ্রগতির পাশাপাশি বর্তমান পরিস্থিতি, আসন্ন নির্বাচনের কথা তুলে ধরব।
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, তাদের (বিদেশি দূতদের) বিশেষ করে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে সরকারে প্রতিশ্রুতির কথা বলব। নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি নিয়ে তাদের ব্রিফ করব। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পর্যবেক্ষকদের বিষয়ে বিষয়ে তাদের প্রশ্ন থাকতে পারে। ইতোমধ্যে কমিশন পর্যবেক্ষকদের জন্য তারিখ বাড়িয়েছেন।
দিল্লিতে বিদেশি দূতদের নিয়ে বৈঠকের সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানান মাসুদ বিন মোমেন। তবে দূতদের নিয়ে বৈঠকের কারণ হিসেবে বাংলাদেশের একটি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় তুলে ধরেন পররাষ্ট্রসচিব।
তিনি বলেন, আইওমোতে (আন্তর্জাতিক সমুদ্র চলাচল সংস্থা) বাংলাদেশের যে প্রার্থীতা আছে ক্যাটাগরি সিতে সেখানে একটা প্রচারণা চালানোর সুযোগ হবে। প্রায় ৯০টি দেশের সঙ্গে। এখানে (ঢাকায়) যারা আছেন, তাদের সবসময় বলতে পারি। কিন্তু ওদেরকে ওখানে গিয়েও সরাসরি বলাটা দরকার আছে।
এছাড়া বাংলাদেশে নিযুক্ত দিল্লির যেসব হাইকমিশন আছে সেগুলোর মধ্যে যেসব নতুন রাষ্ট্রদূত/হাইকমিশনাররা রাষ্ট্রপতির ব্যস্ততাসহ নানা কারণে তাদের পরিচয়পত্র পেশ করতে পারছেন না, তাদের আশ্বস্ত করা হবে বলেও জানান মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেন, যারা লাইনে আছেন তাদের আশ্বস্ত করা হবে। তাদের শিডিউল দেব।
ভারত সফরে কোনো লুকানো (গোপন) উদ্দেশ্য নেই দাবি করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এ রকম মনে করার কারণ নেই যে, এখানে লুকানো উদ্দেশ্য আছে। তবে যেহেতু সামনে নির্বাচন এবং তাদের পক্ষ থেকে যদি কিছু জানার থাকে, তবে সেটি আমি তাদের অবহিত করতে পারবো।
দুই দেশের যৌথ পরামর্শক সভার পাশাপাশি চলমান রাজনৈতিক সম্পর্ক বা প্রধানমন্ত্রীর কোনো রাজনৈতিক বার্তা নিয়ে ভারত যাচ্ছেন কি-না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনারা মেলাতে পারেন। সাধারণত গত এক বছরে আমাদের অগ্রগতি রয়েছে। সেগুলোর একটা টেকিং টকস এবং নির্বাচনের পরে বা আগামী বছরে আমরা কোন কোন জায়গায় আরও বেশি জোর দিতে পারি। যেন সময় নষ্ট না হয়, বিশেষ করে যোগাযোগের ক্ষেত্রে। সেগুলো থাকতে পারে।
বৈঠকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্য ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা থাকবেন বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব। তিনি জানান, এবারের বৈঠকে অগ্রাধিকার বিষয়গুলো হচ্ছে— রাজনৈতিক সম্পর্ক, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয়, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কানেক্টিভিটি বিষয়, জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও অভিন্ন নদী সম্পর্কিত বিষয়, আঞ্চলিক ও উপ- আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক সহায়তা সংক্রান্ত বিষয়, উন্নয়ন ও প্রকল্প সহায়তা এবং কনস্যুলার ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা।
কানেক্টিভিটিতে সবচেয়ে বেশি সময় লাগে জানিয়ে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, এখন গোটা বিষয়টি অনেক শেপে চলে এসেছে। উত্তর-পূর্ব ভারত, আমাদের মাতারবাড়ী এবং ধীরে ধীরে যে অগ্রগতি হচ্ছে, সেটি আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। এখানে জাপানের সম্পৃক্ততা এবং ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিকে আগ্রহ। আমাদেরও আগ্রহ আছে যে কী কী প্রকল্প নিতে পারি। ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুকে আমরা বলেছি এবং সেই আউটলুককে কীভাবে আরও দৃঢ় করতে পারি, সেটার বিষয়েও ভারতের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ আছে।
৯০টি দেশের অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত দিল্লি থেকে বাংলাদেশের স্বার্থ দেখাশোনা করেন জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, তাদের সঙ্গে আমি একটি বৈঠক করব। সেখানে ওইসব মিশনপ্রধানদের আমাদের উন্নয়নের যে অগ্রগতি সেটি সম্পর্কে জানাব। পাশাপাশি বর্তমান পরিস্থিতি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, বিশেষ করে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে সরকারের এবং নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি নিয়ে তাদের অবহিত করব। নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের বিষয়ে তাদের প্রশ্ন থাকতে পারে। কারণ, আমরা দেখেছি যে, পর্যবেক্ষকদের আবেদনের সময় বাড়ানো হয়েছে। সুতরাং, এ বিষয়গুলো আমরা তাদের জানাব।