Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সেতুর নামকরণ নিয়ে সমালোচনার মুখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেয়র

সেতুর নামকরণ

ভিক্ষুকদের সরিয়ে ‘ফকিরাপুল’ থেকে ‘থানা ব্রিজ’ নামকরণ করার পর থেকেই সমালোচনা-নিন্দার ঝড় বইছে সর্বত্র। হঠাৎ করে সেতুটির নামকরণ করে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন দেড়শ বছরেরও পুরনো ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার প্রথম নারী মেয়র নায়ার কবির।

জানা গেছে, শহরের টি.এ. রোড এলাকার টাউন খালের ওপর থাকা ওই সেতুতে বসে দীর্ঘদিন ধরে ভিক্ষাবৃত্তি করে আসছিলেন ভিক্ষুকরা। এর ফলে সেতুটি ‘ফকিরাপুল’ হিসেবেই মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করে। তবে সেতুতে বসে ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করার জন্য ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেজন্য ওখানকার কয়েকজন ভিক্ষুককে ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে জেলা প্রশাসন, পৌরসভা ও সমাজসেবা অধিদফতরের পক্ষ থেকে নগদ ২৫ হাজার করে টাকা ও ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়।

ভিক্ষুকদের নগদ অর্থ ও চাল দেওয়ার পরের দিনই ব্রিজে নামকরণের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয় পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। সেতুটির পাশেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানা ভবনের অবস্থান।

সেতুর নামকরণ নিয়ে কয়েকদিন ধরে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। ‘থানা ব্রিজ’ নামকরণের প্রতিবাদ জানিয়ে সেতুটিকে আগের প্রচলিত নাম ‘ফকিরাপুল’ অথবা ‘ঘোড়াপট্টির পুল’ রাখার দাবি জানিয়েছেন অনেকে।

ফেসবুক সংগঠন ‘আমরাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া’র প্রতিষ্ঠাতা বিবর্ধন রায় ফেসবুক পেজে সেতুটির নাম ‘ঘোড়াপট্টির পুল’ রাখার দাবি জানিয়ে লিখেন, ‘ঐতিহ্যবাহী এই পুলের আদি নামকরণের সঙ্গে আমাদের আবেগ জড়িত। আমাদের আবেগের মর্যাদা দেবেন বলেই আপনাদের আমরা নির্বাচিত করেছি এবং আপনাদের ওপর পূর্ণ আস্থা রেখেছি। নাম বদলে ফেলার এই অনুশীলন আমাদের ভবিষ্যতে অন্য স্থানগুলোর নাম বদলাতে উৎসাহিত করতে পারে এবং এই অনুশীলন যথেষ্ট নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করবে বলেই বিশ্বাস।’

আরও পড়ুন : মা জননী সেতু : চলনবিলে বিশাল জলরাশির সৌন্দর্য

হাসান হাশমী নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘কোনদিন যেন শহরের নামটাও বদলে যায়! পরিবর্তন আমরা সবাই চাই, কিন্তু যদি বাপের নাম পরিবর্তন আনা হয়, তা মেনে নেওয়া যায় না!’

মেহেদী হাসান লেনিন লিখেছেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার ইতিহাসের প্রথম নারী মেয়র মহোদয়া কর্তৃক ঐতিহাসিক নামকরণ! মেয়র মহোদয়া অনুগ্রহ করে এসব ঐতিহাসিক স্থাপনার নতুন নতুন নামকরণ বাদ দিয়ে পৌরবাসীর দুর্ভোগ লাগবে উদ্যোগী হোন।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাহিত্য একাডেমির সভাপতি জয়দুল হোসেন বলেন, ‘সেতুটি যেখানে আছে, এর কাছেই যাতায়াতের ঘোড়া এসে দাঁড়াত। এজন্য এলাকাটি ঘোড়াপট্টি হিসেবে পরিচিতি পায়। পরে সেখানে সেতু নির্মাণ হলে সবাই সেতুটিকে ঘোড়াপট্টির পুল হিসেবেই চিনত। পরবর্তীকালে এ সেতুতে ভিক্ষুকরা বসে ভিক্ষাবৃত্তি করার কারণে ফকিরাপুল নামে পরিচিতি পায়। নাম পরিবর্তনের জন্য সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা যেত। ঘোড়াপট্টির পুল নাম দিলে ঐতিহ্যের সঙ্গে মিল থাকতো।’

এ ব্যাপারে মেয়র নায়ার কবির বলেন, ‘ভিক্ষুকরা বসে ভিক্ষাবৃত্তি করতেন বলে মানুষ ব্রিজটিকে ফকিরাপুল নামে ডাকত। কিন্তু ব্রিজের কোনো নামকরণ ছিল না। ফকিরাপুল শুধু মানুষের মুখে মুখেই ছিল।’

‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে। যারা ব্রিজে বসে ভিক্ষাবৃত্তি করতেন, তাদের নগদ অর্থ ও এক মাসের খাবার দেওয়া হয়েছে। ফরিকরাপুল নাম ঘুচানোর জন্যই ব্রিজটির নামকরণ করা হয়েছে,’ উল্লেখ করেন মেয়র।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সেতুর নামকরণ নিয়ে সমালোচনার মুখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেয়র

প্রকাশের সময় : ১২:৫২:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ অক্টোবর ২০২০

ভিক্ষুকদের সরিয়ে ‘ফকিরাপুল’ থেকে ‘থানা ব্রিজ’ নামকরণ করার পর থেকেই সমালোচনা-নিন্দার ঝড় বইছে সর্বত্র। হঠাৎ করে সেতুটির নামকরণ করে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন দেড়শ বছরেরও পুরনো ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার প্রথম নারী মেয়র নায়ার কবির।

জানা গেছে, শহরের টি.এ. রোড এলাকার টাউন খালের ওপর থাকা ওই সেতুতে বসে দীর্ঘদিন ধরে ভিক্ষাবৃত্তি করে আসছিলেন ভিক্ষুকরা। এর ফলে সেতুটি ‘ফকিরাপুল’ হিসেবেই মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করে। তবে সেতুতে বসে ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করার জন্য ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেজন্য ওখানকার কয়েকজন ভিক্ষুককে ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে জেলা প্রশাসন, পৌরসভা ও সমাজসেবা অধিদফতরের পক্ষ থেকে নগদ ২৫ হাজার করে টাকা ও ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়।

ভিক্ষুকদের নগদ অর্থ ও চাল দেওয়ার পরের দিনই ব্রিজে নামকরণের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয় পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। সেতুটির পাশেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানা ভবনের অবস্থান।

সেতুর নামকরণ নিয়ে কয়েকদিন ধরে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। ‘থানা ব্রিজ’ নামকরণের প্রতিবাদ জানিয়ে সেতুটিকে আগের প্রচলিত নাম ‘ফকিরাপুল’ অথবা ‘ঘোড়াপট্টির পুল’ রাখার দাবি জানিয়েছেন অনেকে।

ফেসবুক সংগঠন ‘আমরাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া’র প্রতিষ্ঠাতা বিবর্ধন রায় ফেসবুক পেজে সেতুটির নাম ‘ঘোড়াপট্টির পুল’ রাখার দাবি জানিয়ে লিখেন, ‘ঐতিহ্যবাহী এই পুলের আদি নামকরণের সঙ্গে আমাদের আবেগ জড়িত। আমাদের আবেগের মর্যাদা দেবেন বলেই আপনাদের আমরা নির্বাচিত করেছি এবং আপনাদের ওপর পূর্ণ আস্থা রেখেছি। নাম বদলে ফেলার এই অনুশীলন আমাদের ভবিষ্যতে অন্য স্থানগুলোর নাম বদলাতে উৎসাহিত করতে পারে এবং এই অনুশীলন যথেষ্ট নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করবে বলেই বিশ্বাস।’

আরও পড়ুন : মা জননী সেতু : চলনবিলে বিশাল জলরাশির সৌন্দর্য

হাসান হাশমী নামে আরেকজন লিখেছেন, ‘কোনদিন যেন শহরের নামটাও বদলে যায়! পরিবর্তন আমরা সবাই চাই, কিন্তু যদি বাপের নাম পরিবর্তন আনা হয়, তা মেনে নেওয়া যায় না!’

মেহেদী হাসান লেনিন লিখেছেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার ইতিহাসের প্রথম নারী মেয়র মহোদয়া কর্তৃক ঐতিহাসিক নামকরণ! মেয়র মহোদয়া অনুগ্রহ করে এসব ঐতিহাসিক স্থাপনার নতুন নতুন নামকরণ বাদ দিয়ে পৌরবাসীর দুর্ভোগ লাগবে উদ্যোগী হোন।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাহিত্য একাডেমির সভাপতি জয়দুল হোসেন বলেন, ‘সেতুটি যেখানে আছে, এর কাছেই যাতায়াতের ঘোড়া এসে দাঁড়াত। এজন্য এলাকাটি ঘোড়াপট্টি হিসেবে পরিচিতি পায়। পরে সেখানে সেতু নির্মাণ হলে সবাই সেতুটিকে ঘোড়াপট্টির পুল হিসেবেই চিনত। পরবর্তীকালে এ সেতুতে ভিক্ষুকরা বসে ভিক্ষাবৃত্তি করার কারণে ফকিরাপুল নামে পরিচিতি পায়। নাম পরিবর্তনের জন্য সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা যেত। ঘোড়াপট্টির পুল নাম দিলে ঐতিহ্যের সঙ্গে মিল থাকতো।’

এ ব্যাপারে মেয়র নায়ার কবির বলেন, ‘ভিক্ষুকরা বসে ভিক্ষাবৃত্তি করতেন বলে মানুষ ব্রিজটিকে ফকিরাপুল নামে ডাকত। কিন্তু ব্রিজের কোনো নামকরণ ছিল না। ফকিরাপুল শুধু মানুষের মুখে মুখেই ছিল।’

‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে। যারা ব্রিজে বসে ভিক্ষাবৃত্তি করতেন, তাদের নগদ অর্থ ও এক মাসের খাবার দেওয়া হয়েছে। ফরিকরাপুল নাম ঘুচানোর জন্যই ব্রিজটির নামকরণ করা হয়েছে,’ উল্লেখ করেন মেয়র।