আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
এক নারীর দুটি জরায়ুতে বড় হচ্ছে আলাদা ভ্রূণ। আপাতদৃষ্টিতে যমজ বলা হলেও চিকিৎসার পরিভাষায় ঠিক যমজ বলা যাচ্ছে না তাদের। কারণ তারা একই মায়ের দুটি আলাদা জরায়ুতে স্বতন্ত্রভাবে বেড়ে উঠছে।
কেলসি হ্যাচারের বাড়ি যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা অঙ্গরাজ্যে। পেশায় ম্যাসাজ থেরাপিস্ট তিনি। ঘটনাটি গত মে মাসের। ওই সময় আট সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন কেলসি। আলট্রাসাউন্ড করার পর জানতে পারেন, তাঁর গর্ভে যমজ সন্তান বেড়ে উঠছে। তবে আরেকটি বিষয় বেশ অবাক করে, দুটি ভ্রূণ বেড়ে উঠছে আলাদা দুটি জরায়ুতে।
ঘটনাটি অবাক করার মতোই। তবে কেলসি এতে খুব একটা বিচলিত হননি। কেননা আগে থেকেই কেলসি জানতেন, তাঁর শরীরে পৃথক দুটি জরায়ু রয়েছে। যখন তাঁর বয়স ১৭ বছর, তখন কেলসি প্রথমবারের মতো ব্যতিক্রমী এ বিষয়ে জানতে পারেন। স্বামী ক্যালেব ও তিন সন্তান নিয়ে তার সুখের সংসার। গত বসন্তে গর্ভবতী হয়েছেন এমন ধারণায় আল্ট্রা সোনোগ্রাফি করেন তিনি। সেই রিপোর্টেই জানা যায়, তার শরীরে এক জোড়া জরায়ু এবং সেই দুটি জরায়ুতে বড় হচ্ছে আলাদা ভ্রূণ।
কেলসি অন্য নারীদের থেকে ব্যতিক্রম। তিনি জন্ম থেকে একসঙ্গে দুটি জরায়ুর অধিকারী। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এটাকে বলে ‘ইউটেরাস জরায়ু ডিডেলফিস’। এটা খুবই বিরল। বিশ্বে দশমিক ৩ শতাংশ নারী দুটি জরায়ু নিয়ে জন্ম নেন। তাঁদেরই একজন কেলসি।
কেলসির বয়স ৩২ বছর চলছে। তিন সন্তানের মা তিনি। এখন সুস্থ যমজ সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন তিনি। নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে নিজের এমন ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন কেলসি। তিনি বলেন, একরকম বিস্মিত হয়েছিলাম। সেই প্রথম আলট্রাসাউন্ডের সময় অনেক হাসি পেয়েছিল।
তার চিকিৎসক ভারতীয় বংশোদ্ভূত শ্বেতা প্যাটেল পেশায় গাইনি চিকিৎসক। কেলসি এখন তাঁর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা করাচ্ছেন। শ্বেতা ইউনিভার্সিটি অব আলাবামার বার্মিংহামস ওমেন অ্যান্ড ইনফ্যান্টস সেন্টারে কাজ করেন। এই চিকিৎসক এবিসি চ্যানেলের ‘গুড মর্নিং আমেরিকা’ অনুষ্ঠানে বলেন, খুব সম্ভবত কেলসির দুটি জরায়ুতে আলাদাভাবে ডিম্বাণু এসেছিল। পরে শুক্রাণুর সংস্পর্শে দুটি জরায়ুতে দুটি ভ্রূণ আলাদাভাবে বেড়ে উঠতে শুরু করে।
সচরাচর দুটি জরায়ু নিয়ে জন্ম নেওয়া নারীরা গর্ভধারণের সময় নানা ধরনের জটিলতার মুখোমুখি হন। তবে এর আগে তিনটি সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে কেলসির কোনো জটিলতা হয়নি। প্রতিবার পূর্ণ সময় অন্তঃসত্ত্বা থাকার পর সুস্থ সন্তান জন্ম দিয়েছেন তিনি। এবারও তেমনটাই প্রত্যাশা করছেন তিনি।
এদিকে কেলসির সন্তান প্রসব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বার্মিংহামের আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক রিচার্ড ডেভিস। তার দাবি, বিশ্বের এক শতাংশের কম নারীর দু’টি করে জরায়ু থাকতে পারে। কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে যমজ সন্তানের জন্ম দেওয়ার প্রবণতা বা সম্ভাবনা খুব কম। কারণ অনেক ক্ষেত্রে একটি জরায়ু নিষ্ক্রিয় থাকে।
অধ্যাপক রিচার্ড ডেভিস আরও বলেন, দএই ধরনের ঘটনায় অন্তঃসত্ত্বা নারীর সফলভাবে প্রসবের চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি। কারণ এক সঙ্গেই দু’শিশুর জন্ম হবে। অনেক সময় সেই চাপ সহ্য করতে না পেরে প্রসূতির মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। আবার কিছু ক্ষেত্রে গর্ভে থাকা সন্তানেরও মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।দ
চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, এক্ষেত্রে একসঙ্গে দু’টি সন্তানের জন্ম না দেওয়াই ভালো। এক্ষেত্রে একটি শিশুর জন্মের পর কয়েকদিনের বিরতি দিয়ে দ্বিতীয় সন্তানটির প্রসবের ব্যবস্থা করতে হবে। কেলসির চিকিৎসক বলেন, দবিজ্ঞানের পরিভাষায় হয়তো একে যমজ বলা যাবে না। কিন্তু আমার মতে তারা যমজ শিশুই।দ চলতি বছরের বড়দিনের সময় কেলসি প্রসব করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে প্রসব জটিলতা নিয়ে মোটেও উদ্বিগ্ন নন এই মার্কিন নারী। ব্যতিক্রমী মাতৃত্ব উপভোগ করতেই মুখিয়ে রয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, দআগেও তিনবার মা হয়েছি। কিন্তু এবারের বিষয়টা সম্পূর্ণ আলাদা। এবারই আমার সন্তান প্রসবের দিকে তাকিয়ে আছে গোটা চিকিৎসক মহল। অনেকেই আলাদাভাবে আমার খোঁজ-খবর নিচ্ছেন, খেয়াল রাখছেন। এটি একটি বিরল এবং রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা বটে।