স্পোর্টস ডেস্ক :
শুরুটা হয়েছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে হার দিয়ে। শেষও হলো একই ফলাফল দিয়ে। কিন্তু এর মাঝে বিশ্বকাপে রূপকথার গল্প লিখেছে আফগানিস্তান। গত আসরে একটি জয়ও না পাওয়া দলটি এবার আসরে জয় পেয়েছে চারটিতে। শুধু তা-ই নয়, হারিয়েছে ইংল্যান্ড, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়নকে। যদিও শেষটা প্রত্যাশামতো হয়নি। তবে সেখানেও ছিল লড়াইয়ের ছাপ।
দক্ষিণ আফ্রিকার সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয়েছে আগেই। আহমেদাবাদে আফগানিস্তানের বিপক্ষে লিগ পর্বের শেষ ম্যাচটা ছিল প্রোটিয়াদের দলের সমন্বয় নিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষার সুযোগ। জয়ে সেমিফাইনালের আগে আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ ছিল এই ম্যাচ। আফগানদের বিপক্ষে ৫ উইকেটের জয়ে দুটিই অর্জন করল প্রোটিয়ারা। আফগানিস্তানকে ২৪৪ রানে থামিয়ে ৪৭.৩ ওভারে ৫ উইকেট হাতে রেখে লক্ষ্য টপকে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। অপরাজিত ৭৬ রান করে ম্যাচসেরা রেসি ফন ডার ডুসেন।
আফগানদের দেওয়া ২৪৫ রানতাড়ায় শুরুটা ভালো করেছিলেন দুই প্রোটিয়া ওপেনার কুইন্টন ডি কক ও টেম্বা বাভুমা। উদ্বোধনী জুটিতে তারা ৬৪ রান যোগ করেছিলেন। তবে এরপর আফগান-স্পিন প্রোটিয়াদের স্বস্তি দেয়নি। পাওয়ার প্লেতে ৫৪ রান তোলার পরের ওভারেই প্রোটিয়া অধিনায়ক বাভুমাকে (২৩) ক্যাচ বানান স্পিনার মুজিব-উর-রহমান। ১১তম ওভারের সে ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই ১৪তম ওভারে ডি কক আউট। আরেক স্পিনার মোহাম্মদ নবীর বলে ৪১ রান করে এলবিডব্লু হন ডি কক।
মাঝের ওভারে থিতু হয়ে আউট হয়েছেন এইডেন মার্করাম (২৫) ও হেইনরিখ ক্লাসেন (১০)। আফগান স্পিন ত্রয়ীর আরেক সদস্য রশিদ খানের বলে দুজনই আউট হন। এরপর দলটিকে মূলত প্রায় একাই টেনেছেন তিনে নামা রসি ফন ডার ডুসেন। এর মাঝেই দুটি গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েন মার্করাম ডেভিড মিলারের সঙ্গে। মার্করামের সঙ্গে ৬০ বলে ৫০ রানের জুটি গড়ার পর মিলারের সঙ্গে আরও ৪৩ রান যোগ করেন ডুসেন।
বিশ্বকাপের আগের ম্যাচগুলোতে এরপরই অর্ডারে দেখা যেত মার্কো ইয়ানসেনকে। আজ তার জায়গায় সুযোগ পাওয়া আরেক অলরাউন্ডার পেহলুকাওকে নিয়ে বাকি পথটা পাড়ি দেন ডুসেন। দুজন মিলে ষষ্ঠ উইকেটে ৬২ বলে অবিচ্ছিন্ন ৬৫ রানের জুটি গড়েন। ডুসেন ৯৫ বলে ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় অপরাজিত ৭৬ রান করেন। পেহলুকাওর ব্যাট থেকে এসেছে ৩৭ বলে ৩৯ রান। ৪৭তম ওভারে ৬-৪-৬ এর বাউন্ডারিতে জয় নিশ্চিত করেন পেহলুকাও। আফগানিস্তানের হয়ে ২টি করে উইকেট নেন রশিদ খান ও মোহাম্মদ নবি। একটি উইকেট যায় মুজিব উর রহমানের ঝুলিতে।
টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন আফগানিস্তান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শাহিদি। ব্যাট করতে নেমে শুরুটা বেশ ভালোই করেন দুই আফগান ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহীম জাদরান। উদ্বোধনী জুটি থেকে আসে ৪১ রান। ইনিংসের ৯ম ওভারের প্রথম বলে কেশভ মহারাজের করা বলে গুরবাজের ব্যাটের কানায় লেগে স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা ফিল্ডার হেনরিখ ক্লাসেনের হাতে ধরা পড়লে ভাঙে এই জুটি। ২২ বলে ৩ চার ও ১টি ছক্কার সাহায্যে ২৫ রান করেন গুরবাজ।
গুরবাজের বিদায়ের পর নিয়মিত উইকেট হারাতে থাকে তারা।। মাত্র ৪ রানের ব্যবধানে আরও ২ উইকেট হারায় আফগানরা। জেরাল্ড কোয়েৎজের বলে ডি ককের গ্লাভসে ক্যাচ আউট হয়ে ইব্রাহীম সাজঘরে ফেরেন ৩০ বলে ১৫ রান করে। ফর্মে থাকা শহিদিও নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। মহারাজের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরেন ২ রান করে। এরপর চতুর্থ উইকেট জুটিতে আজমত ও রহমত শাহ মিলে যোগ করেন ৪৫ রান। রহমত ফিরেছেন ৪৬ বলে ২৬ রান করে। এরপর ইকরাম আলী খিল বেশিক্ষণ থিতু হতে পারেননি। তার ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ১২ রান। ২ রান করে আউট হয়েছেন মোহাম্মদ নবি। ১১৬ রান তুলতেই ৬ উইকেট হারিয়ে বসে আফগানরা।
এরপর ৭ম উইকেটে রশিদ খানকে সঙ্গী করে চাপ সামাল দেন আজমত। দু’জনে মিলে গড়েন ৪৪ রানের জুটি। রশিদ ভালো শুরু পেলেও ১৪ রানের বেশি করতে পারেননি। ১৬০ রানে ৭ উইকেট খোয়ালে ২০০ রানে থেমে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়। তবে ব্যাটারদের আসা যাওয়ার মাঝে কেবল ব্যতিক্রম ছিলেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। নুর আহমেদকে সঙ্গী করে অষ্টম উইকেটে ফের লড়াই চালান এই অলরাউন্ডার। অষ্টম উইকেট জুটি থেকে আসে ৪৪ রান। ৩২ বল ২৬ রানের দারুণ একটি ইনিংস খেলে সাজঘরে ফেরেন নূর।
মুজিব আউট হন ৮ রান করে। তবে আজমতের দৃঢ়তায় শেষ বল পর্যন্ত লড়ে যায় আফগানিস্তান। ৫০ ওভারের শেষ বলে নাভিন রান আউট হলে ২৪৪ রানে থেমে যায় তাদের ইনিংস। ১০৭ বলে ৭ চার ও ৩ ছক্কায় ৯৭ রানে অপরাজিত থাকেন আজমত। আফ্রিকার হয়ে সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট শিকার করেন জেরাল্ড কোয়েৎজে। ২টি করে উইকেট পান লুঙ্গি এনগিদি ও কেশভ মহারাজ। একটি উইকেট গেছে আন্দিলে ফেহলুকায়োর ঝুলিতে।