আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নিজের আয়ত্তে নেওয়ার প্রসঙ্গে আগের অবস্থান থেকে সরে গেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, যুদ্ধের পর গাজায় ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার কোনো পরিকল্পনা নেই তার সরকারের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে এই যুদ্ধে আমরা গাজা জয় করতে চাই না। আমরা গাজা দখল করতে চাই না এবং আমরা গাজা শাসনও করতে চাই না। আমরা চাই গাজায় এমন একটি নির্ভরযোগ্য বেসামরিক সরকার আসুক— যারা ইসরায়েলের ধ্বংস কামনা করবে না। সেই সঙ্গে সেখানে আর যেনো জঙ্গি উত্থানের সম্ভাবনা না থাকে।
গাজাকে ইসরাইল সরাসরি শাসন করবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে নেতানিয়াহু বলেন, আমার গাজাকে নিরস্ত্রীকৃত বা কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীমুক্ত পুনর্গঠিত এলাকা হিসেবে দেখতে চাই। এর বেশি কিছু অর্জন করার নেই আমাদের।
তিনি বলেন, আমরা কাউকে বাস্তুচ্যুত করার কথা ভাবছি না। আমরা যেটা করার চেষ্টা করছি, সেটি হলো গাজার উত্তরাংশ যেখানে যুদ্ধ চলছে, সেখান থেকে আমরা লোকজন সরিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে নেওয়ার চেষ্টা করছি, যেখানে আমরা নিরাপদ এলাকা প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা সেখানে ফিল্ড হাসপাতালও চালু করতে চাই। আমরা সেখানে মানবিক সহায়তাও যেতে দিচ্ছি এবং এভাবে আমরা যুদ্ধ চালাচ্ছি।
গত ৭ নভেম্বর ইসরায়েলি বাহিনী ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধের একমাস পূর্তির দিনে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরেও অনির্দিষ্টকালের জন্য গাজা উপত্যকার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব ইসরায়েলের হাতে থাকবে। এর পর নিজ দেশসহ বিশ্বজুড়ে তার এমন বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট বলেন, আমরা গাজা শাসন করতে চাই না। আমরা গাজার দায়িত্ব নিতে চাই না। কারণ এটি সম্ভবও নয়। নেতানিয়াহু নিজে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থ হয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
সেই বক্তব্যের দুই দিনের পরই কার্যত আগের অবস্থান পাল্টে নতুন সুর বাজালেন নেতানিয়াহু। আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, মূলত যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কারণেই সুর পাল্টেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী।
তবে তিনি বলেন, যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ভবিষ্যতে গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে যদি ফের হামলা চালানো হয়— তাহলে আবারো সেখানে অভিযান চালাবে ইসরায়েলি বাহিনী।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস। জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের বিমান বাহিনী। সেই অভিযান এখনও চলছে। হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক। এছাড়া হামলার প্রথম দিনই ইসরায়েল থেকে অন্তত ২৪২ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় ধরে নিয়ে গেছে হামাস যোদ্ধার। অন্যদিকে, ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর অভিযানে গাজায় নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ১০ হাজার। এই নিহতদের অর্ধেকেরও বেশি শিশু ও নারী।