নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রণাঙ্গনে জয় বাংলা শ্লোগান দিয়েই পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল মুক্তিযোদ্ধারা। অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা ধরে রেখেই সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
শুক্রবার (১০ নভেম্বর) সকাল ১০টায় রাজধানীর বিজয় সরণিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য সম্বলিত মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যে মর্যাদা পেয়েছি তা ধরে রেখেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আজকের দিনের শিশুরা আগামী দিনের সৈনিক, তারাই স্মার্ট বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে এবং বাংলাদেশ পরিচালনা করবে। এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিশু কিশোরদের কাছে প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করেন, ‘পারবে না তোমরা?’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের ৯৮ ভাগ শিশু এখন স্কুলে যেতে পারে, গ্রাম পর্যায়ে সেভাবে স্কুল করে দিচ্ছি, বিনামূল্যে বই দিচ্ছি, বৃত্তি দিচ্ছি যেন কেউ বাদ না যায়। দরিদ্র মা-দের মোবাইল ফোনে সরাসরি বৃত্তির টাকা পৌঁছে দিচ্ছি। এভাবেই কিন্তু আমরা উদ্বুদ্ধ করছি।
তিনি বলেন, শিক্ষাই বড় সম্পদ, যা কেউ ছিনিয়ে নিতে বা চুরি করতে পারবে না। সেই শিক্ষা থাকলে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশকে আরও উন্নত সমৃদ্ধ করা যাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার এই ভাস্কর্য এটা শুধু একটি ভাস্কর্য নয়, এটি একটি ইতিহাস। আমাদের দেশকে জানার ইতিহাস।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে জাতির পিতার অবদান ও ত্যাগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এই বাঙালি জাতিকে আর্থ-সামাজিক মুক্তি দেওয়ার জন্যই ছিল জাতির পিতার সংগ্রাম। তিনি তার নিজের জীবনটাকে উৎসর্গ করেছিলেন এই দেশের মানুষের জন্য।
তিনি বলেন, ১৯৪৮ সালে মায়ের ভাষা বাংলার ভাষার অধিকার যখন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র। তখন থেকে তিনি তার প্রতিবাদ করেন এবং আন্দোলন গড়ে তোলেন। সেখানে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয় এবং মাতৃভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা করার সংগ্রাম শুরু হয়। সেই সংগ্রামের পথ বেয়েই কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা অর্জন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। এই স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং যুদ্ধের জাতির পিতা আহ্বান করেছিলেন ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণে। যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে সংগ্রাম করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ সেই আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলেন। সেভাবে অস্ত্র তুলে নিয়ে যুদ্ধ করে এবং আমরা বিজয়ী হই।
বিগত বছরগুলোতে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কার উন্নয়নের কথা তুলে ধরে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রত্যয় নিতে হবে আজকের বাংলাদেশ যে উন্নত-সমৃদ্ধ হয়েছে যতদূর; আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এটা ধরে রেখে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
শৈশবের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছোটবেলায় শিশুরা তোমরা বাবা মায়ের হাত ধরে স্কুলে যাও, আমাদের সেই সৌভাগ্য হয়নি। বাবার সঙ্গে দেখা হতো কারাগারে। মাসে দুইবার জেলগেটে যেতে পারতাম। স্কুল থেকে জেলগেটে গিয়েছি, কলেজ থেকে জেলগেটে গিয়েছি। এই ছিল আমাদের জীবন।
তিনি বলেন, তবে আমাদের কোনো ক্ষোভ ছিল না, আমরা জানি আমাদের বাবা সংগ্রাম করছেন দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। স্বাধীনতার পর থেকে তিনি সে প্রচেষ্টাই চালিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালি জাতি যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছে। বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছি। এ বাংলাদেশ একসময় আজকের বাংলাদেশ ছিল না। এমনকি ১৫ বছর আগের বাংলাদেশেও এখনকার বাংলাদেশ নয়। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, শিক্ষার অভাব, চিকিৎসাহীনতা, গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষের ক্রন্দনে বাংলার আকাশ-বাতাস ভারী ছিল। এই বাঙালি জাতিকে আত্মসম্মানে মুক্তি দেওয়ার জন্যই জাতির পিতার সংগ্রাম। জাতির পিতা নিজের জীবনটা উৎসর্গ করেছিল এ দেশের মানুষের জন্য।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে প্রায় ১৫ বছর হয়ে গেল, এর মধ্যে বাংলাদেশকে একটা বদলে যাওয়া বাংলাদেশে রূপান্তর করতে পেরেছি। আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশে আমাদের ওয়াইফাই কানেকশন আছে। আমরা স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করেছি। আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির শিক্ষা দিচ্ছি। অনেক আধুনিক প্রযুক্তির স্থাপনা করে আজকের দেশে মানুষকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত জ্ঞানসম্পন্ন জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে পেরেছি। আজকের শিশুরা হবে আগামী দিনের স্মার্ট বাংলাদেশের সৈনিক।
আজকের শিশুরা আগামী দিনের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার সৈনিক মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের আজকের ছোট শিশুরা আগামী দিনের সৈনিক, যারা স্মার্ট বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিনে এবং বাংলাদেশ পরিচালনা করবে। সেভাবেই তোমরা নিজেদের তৈরি করবে।
শিক্ষা অর্জনে শিক্ষার্থীদের মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা কথা মনে রাখতে হবে, শিক্ষাই জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ। টাকা-পয়সা, ধন-দৌলত, কোনো কিছুই সম্পদ না। (আসল) সম্পদ হচ্ছে একমাত্র শিক্ষা। শিক্ষা যে গ্রহণ করবে ভালো ভাবে, এটি কেড়েও নিতে পারবে না, ডাকাতিও করতে পারবে না। এটি নিজের কাছে থেকে যাবে। আর শিক্ষা থাকলে পরে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করা যাবে।
বিজয় সরণিতে ভাস্কর্য স্থাপনের কারণ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাশে জাতীয় সংসদ এবং এই এলাকা দিয়ে যেহেতু আন্তর্জাতিক ও দেশের অনেক মানুষ যাতায়াত করে সে কারণেই ভাস্কর্য স্থাপনের জন্য এই জায়গাটি বেছে নেওয়া হয়েছে। ১৯৫২ সাল থেকে শুরু করে আমাদের সব ইতিহাস সুন্দর করে এখানে তুলে ধরা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালি জাতি যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছে। কাজেই আমরা বিজয়ী জাতি হিসেবে মর্যাদা পেয়েছি। জাতির পিতার এ ভাস্কর্য শুধু একটা ভাস্কর্যই নয় বরং এটা একটা ইতিহাস, আমাদের দেশকে জানার ইতিহাস।
উদ্বোধনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ভাস্কর্যের গায়ে লেখা আছে ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’, তাই এটি শুধু একটি ভাস্কর্য নয়, এটি একটি ইতিহাস। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে আজ আমরা অনেকদূর অগ্রসর হয়েছি। তিনি তার স্বপ্ন পূরণ করে যেতে পারেননি। ঘাতকরা তাকে সেই সুযোগ দেয়নি। কিন্তু আমরা শুরু থেকেই তার স্বপ্ন পূরণে কাজ করে আসছি।
রাজধানী ঢাকার বিজয় সরণিতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন প্রসঙ্গে তিনি জানান, সেনা প্রধান এস এম শফিউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে আলোচনা করে কয়েকটি স্থান নির্বাচন করার পর এই স্থানটিকে চূড়ান্ত করা হয়েছে। কারণ এই স্থান দিয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ব্যক্তিরা যাতায়াত করে থাকেন। এছাড়া, স্থানটির পাশেই রয়েছে জাতীয় সংসদসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। প্রধানমন্ত্রী ভাস্কর্যটি স্থাপনার সঙ্গে জড়িত এবং উপস্থিত সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলামসহ সামরিক-বেসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন শ্রেণির স্কুল শিক্ষার্থী।