নিজস্ব প্রতিবেদক :
স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ জনবলের ঘাটতি বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক।
সোমবার (০৬ নভেম্বর) দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সায়মা ওয়াজেদের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে বিজয় ও বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম কালাজ্বরমুক্ত এবং ফাইলেরিয়ামুক্ত ঘোষিত হওয়া উপলক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের হাসপাতালগুলোতে বর্তমানে প্রায় ৭০ হাজার শয্যা পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষিত জনবল দরকার। এখনো ইউনিভার্সেল হেলথ কাভারেজ দেয়া যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, আমি মনে করি স্বাস্থ্যসেবায় আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ জনগণের ঘাটতি। আমরা জনবল তৈরির চেষ্টা করছি। এটা মেটাতে অনেক সময় লাগে। আগে হাসপাতালে ৩০ হাজার বেড ছিল, এখন ৭০ হাজার বেড হয়েছে। ৭০ হাজার বেডকে যদি পরিচালিত করতে হয়, তাহলে অনেক জনবল প্রয়োজন। মেডিকেল কলেজসহ নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরি হচ্ছে, প্রশিক্ষিত জনবল দরকার, এটার ঘাটতি আছে।
চিকিৎসা নিতে ব্যক্তিগত খরচ বেশি হচ্ছে, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এই কথা আমি আংশিক নিতে পারি। সরকারি হাসপাতালে মোট জনগণের ৭০ শতাংশ মানুষ বিনামূল্যে সেবা নিয়ে থাকে। ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ আমরা এখনও পুরোপুরি শুরু করতে পারিনি, এটা একটা চ্যালেঞ্জ আমাদের জন্য। অসংক্রমণ ব্যাধি বেড়ে যাচ্ছে তার যে চিকিৎসা ব্যবস্থা, সেটা আমাদের জন্য আরেকটা চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, দেশে ওষুধের কোনো অভাব নেই। ওষুধ এখন রপ্তানি হয়। ১২০টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন বসানো আছে। অক্সিজেন প্ল্যান্ট বসানো আছে। যার ফলে করোনা নিয়ন্ত্রণে আমরা এশিয়ার মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছি। এটা তো জাদু নয়, কাজের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে গেছে। আমরা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করেছি। শিশু মৃত্যুহার কমিয়ে এনেছি। স্বাস্থ্যসেবা ভালো আছে বলেই টিটেনাস, পোলিও, ফাইলেরিয়া ও কালাজ্বরমুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। এগুলোর স্বীকৃতি বিশ্বই দিচ্ছে। বাংলাদেশে ওষুধের কোনো অভাব নেই, এছাড়া আইসিইউ বেড়েছে। তাছাড়া ৩৭ কোটি ভ্যাকসিন বিনামূল্যে দিয়েছি, এগুলো বড় অর্জন।
জাহিদ মালেক বলেন, চোখ বন্ধ করে থাকলে কিন্তু অর্জন দেখা সম্ভব নয়। বাংলাদেশ ১৭ কোটি মানুষকে চিকিৎসা দিচ্ছে। আজ বাংলাদেশে বাইপাস সার্জারি ও কিডনি প্রতিস্থাপন হচ্ছে। এগুলো আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা। পাঁচটি মেডিকেল ইউনিভার্সিটি কাজ করছে, এরপরেও কিছু দুর্বলতা আছে। আমাদের জনবলে কিছুটা ঘাটতি আছে। এ ঘাটতি আমেরিকা কিংবা অন্য দেশগুলোতেও আছে। আমরা প্রতিটি জেলা শহরে বার্ন ইন্সটিটিউটের একটি করে শাখা খোলার চেষ্টা করছি।
জাহিদ মালেক বলেছেন, পৃথিবীর মধ্যে প্রথম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ কালাজ্বর নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছে। এ কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি সনদও আমরা পেয়েছি। ডব্লিউএইচওর যে গাইডলাইন ছিল, সেটা আমরা ফলো করেছি। মানসম্মত চিকিৎসা এবং ল্যাব স্থাপনেও আমরা বিশেষভাবে কাজ করেছি। একইসঙ্গে বাংলাদেশ ফাইলেরিয়া মুক্ত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, আমরা গত চার বছরের তথ্য ডব্লিউএইচওর কাছে প্রদান করেছি। তারা রিভিউ করে দেখেছে, বাংলাদেশ আসলেই কালাজ্বর নির্মূল করতে পেরেছে। এ কারণে গত ৩০ অক্টোবরের ডব্লিউএইচও আমাদের সনদ প্রদান করে। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশ এখনো কালাজ্বর মুক্ত হতে পারেনি। আমরা একইসঙ্গে ফাইলেরিয়াও মুক্ত হয়েছি।
জাহিদ মালেক বলেন, বাংলাদেশে সত্তর দশকে বিভিন্ন এলাকায় কিছু সংখ্যক কালাজ্বরের রোগী শনাক্ত করা হয়েছিল। ৮০ সালে পাবনা জেলায় এর একটি প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল। এ রোগটি বেলে মাছির কামড়ের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। সময়মতো চিকিৎসা না হলে ৯৫ শতাংশ কালাজ্বর রোগীর মৃত্যু হয়। এই জ্বরের প্রধান লক্ষণগুলো অনিয়মিত দীর্ঘমেয়াদি জ্বর, যকৃতের বৃদ্ধি, ওজন হ্রাস এবং রক্ত স্বল্পতা।
তিনি বলেন, এছাড়া দেশ এখন ফাইলেরিয়া মুক্ত। ২০০১ সালে বাংলাদেশে একটি জরিপের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়, ৬৪টি জেলার মধ্য ১৯টি জেলায় ফাইলেরিয়া রোগের সংক্রমণের হার সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ ছিল। কিন্তু বর্তমানে সংক্রমণতার হার ১% এর নিচে অর্থাৎ নিয়ন্ত্রিত থাকায় ২০২২ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে একটি দলিল দাখিল করা হয়। দলিলটির সার্বিক মূল্যায়নে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৫ মে ২০২৩ সালে বাংলাদেশকে ফাইলেরিয়া মুক্ত ঘোষণা করে। বিশ্বে বাংলাদেশ সাফল্যের ১৮তম দেশ। একই সঙ্গে এশিয়া মহাদেশের চতুর্থ দেশ।
সায়মা ওয়াজেদ ডব্লিউএইচও’র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক পদে নির্বাচিত হওয়া প্রসঙ্গে জাহিদ মালেক বলেন, বাংলাদেশ, ভুটান, উত্তর কোরিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ভোটদানে অংশগ্রহণ করে। এতে সায়মা ওয়াজদে পান আট ভোট ও নেপালের প্রার্থী শম্ভু আচার্য পেয়েছেন দুই ভোট। ২০২৪ সাল থেকে পাঁচ বছরের জন্য দায়িত্বগ্রহণ করবেন সায়মা।