Dhaka মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কক্সবাজার পৌঁছাল প্রথম ট্রেন

কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি : 

পর্যটন শহর কক্সবাজারে প্রথমবারের মতো ট্রেন গেছে রোববার। সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে কক্সবাজারের সদরের ঝিংলজায় অবস্থিত আইকনিক স্টেশনে প্রবেশ করে এই ট্রেন। নতুন রেললাইনে প্রথম ট্রেনকে স্বাগত জানাতে দুপুর থেকে স্টেশনে এসেছিলেন হাজারো মানুষ। ট্রেন প্রবেশ করতেই তুমুল হর্ষধ্বনি, করতালি আর মুঠোফোনের আলো জ্বালিয়ে ট্রেনকে বরণ করে নেন কক্সবাজারের মানুষ।

দীর্ঘ ১০ ঘণ্টা অপেক্ষার পর নিজেদের প্ল্যাটফর্মে ট্রেন দেখে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন দর্শনার্থীরা। এরআগে সকাল ৯টায় আটটি বগি ও একটি ইঞ্জিন নিয়ে ট্রেনটি চট্টগ্রাম স্টেশন ছাড়ে।

কক্সবাজারে আসা ট্রেনটিতে রয়েছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার ও রেলের পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তারা কক্সবাজারে অবস্থান করে ৬ নভেম্বর রেলস্টেশন ইয়ার্ড পরিদর্শন এবং ৭ নভেম্বর সকাল ৭টায় চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওয়ানা দেওয়ার কথা রয়েছে।

সরকারি রেল পরিদর্শক (জিআইবিআর) শাখা সূত্র জানায়, ট্রেনযোগে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে পৌঁছান রেল পরিদর্শন দপ্তরের টিম। এসময় নির্মাণাধীন দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন ও বিভিন্ন স্টেশন পরিদর্শন করা হয়েছে। পথে কোথাও কোনো ত্রুটি আছে কি না তা যাচাই করে দেখা হয়।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘এটি আমাদের রুটিন কাজ। এটিকে ট্রায়াল রান বলা যাবে না। আমাদের সঙ্গে রেল পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ছিলেন। তারা রেলপথ পরিদর্শন এবং ইন্টারলকিং সিগন্যালিং ব্যবস্থা, প্ল্যাটফর্ম উঁচু সঠিক কি না, কালভার্ট, লেভেল ক্রসিং গেট দেখেন। ফিরে গিয়ে পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সার্টিফাই করবেন। এরপর ট্রেন চলবে।’

দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক সুবক্তগীন বলেন, ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারে আসবেন। তিন ট্রেন চলাচল উদ্বোধনের পর বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলবে নভেম্বরের শেষ বা ডিসেম্বরের শুরু থেকে। কক্সবাজার রুটে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে ছয় জোড়া ট্রেন চলাচলের পরিকল্পনা আছে। তবে ইঞ্জিন ও বগি সংকটের কারণে এখনই তা হচ্ছে না। পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হবে।

কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশন ও রেলপথ নির্মাণে দায়িত্বে রয়েছেন প্রকৌশলী এনামুল হক সরকার এনাম। তিনি বলেন, আমার অবকাঠামোগত কাজ সমাপ্ত বলা যায়। এখন ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। আমরা ৯০ শতাংশ কাজ শেষ করতে পেরেছি। বাকি কাজ প্রকল্পের মেয়াদ শেষের আগেই সমাপ্ত হবে বলে আশাবাদী আমরা।

এর আগে সকাল নয়টায় চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে এই ট্রেন ছাড়ে। তবে এটি যাত্রীবাহী কোনো ট্রেন ছিল না। এটা ছিল পরিদর্শন ট্রেন। চট্টগ্রাম থেকে পৌঁছাতে ৯ ঘণ্টা ২০ মিনিট লাগে। মূলত পরিদর্শন দল বিভিন্ন স্টেশন, সেতু, রেলপথের শেষ হওয়া নির্মাণকাজ ঘুরে দেখে। এ জন্য বিভিন্ন স্থানে বিরতি দেওয়া হয়।

১১ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের আগে নতুন নির্মিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ পরিদর্শনের জন্য এই ট্রেন চালানো হয়। নতুন রেলপথে ট্রেনকে বরণ করে নিতে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দুই পাশে শত শত মানুষ হাজির হয়েছিলেন। নারী, পুরুষ, শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ যেন হাজির হয়েছিলেন ইতিহাসের সাক্ষী হতে। তাঁরা ফুল ছিটিয়ে ট্রেনে থাকা কর্মকর্তা ও রেলকর্মীদের শুভেচ্ছা জানান।

আজকের এই যাত্রায় নতুন নির্মিত এই রেললাইন যাচাই করে দেখেন পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এ সময় তাঁরা বিভিন্ন স্টেশন, সেতু ও নির্মিত রেলপথের নির্মাণকাজ পরিদর্শন করেন।

আজ সকাল নয়টায় চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে এই ট্রেন কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ট্রেনটিতে সরকারি রেল পরিদর্শক রহুল কাদের আজাদ, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজমুল ইসলামসহ সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও প্রকল্পসংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা ছিলেন। ট্রেনটিতে আটটি বগি রয়েছে।

সাধারণত দেশের কোথাও নতুন রেললাইন নির্মিত হলে পরিদর্শন অধিদপ্তর পরীক্ষা করে দেখে। অধিদপ্তর ছাড়পত্র দিলে নতুন রেলপথটি ট্রেন চলাচলের জন্য উপযোগী বলে বিবেচনা করা হয়। এরপর ট্রায়াল রান (পরীক্ষামূলক চলাচল) ও ট্রেন চলাচল শুরু করতে পারবে।

দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার লাইনের মধ্যে মোট প্রকল্পের কাজ ৯২ শতাংশ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন প্রকল্পটির কাজ ২০১৮ সালে শুরু হয়। আগামী বছরের জুন পর্যন্ত এই প্রকল্পের মেয়াদ থাকলেও তার আগে আগামী ডিসেম্বরের দিকে পুরোপুরি কাজ শেষ হবে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চালানোর জন্য এর আগেই বুঝিয়ে দেওয়া যাবে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সংস্কার না হওয়ায় খানাখন্দে চলাচলে অনুপযোগী, দুর্ভোগ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের

কক্সবাজার পৌঁছাল প্রথম ট্রেন

প্রকাশের সময় : ০৮:১৭:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ নভেম্বর ২০২৩

কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি : 

পর্যটন শহর কক্সবাজারে প্রথমবারের মতো ট্রেন গেছে রোববার। সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে কক্সবাজারের সদরের ঝিংলজায় অবস্থিত আইকনিক স্টেশনে প্রবেশ করে এই ট্রেন। নতুন রেললাইনে প্রথম ট্রেনকে স্বাগত জানাতে দুপুর থেকে স্টেশনে এসেছিলেন হাজারো মানুষ। ট্রেন প্রবেশ করতেই তুমুল হর্ষধ্বনি, করতালি আর মুঠোফোনের আলো জ্বালিয়ে ট্রেনকে বরণ করে নেন কক্সবাজারের মানুষ।

দীর্ঘ ১০ ঘণ্টা অপেক্ষার পর নিজেদের প্ল্যাটফর্মে ট্রেন দেখে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন দর্শনার্থীরা। এরআগে সকাল ৯টায় আটটি বগি ও একটি ইঞ্জিন নিয়ে ট্রেনটি চট্টগ্রাম স্টেশন ছাড়ে।

কক্সবাজারে আসা ট্রেনটিতে রয়েছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার ও রেলের পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তারা কক্সবাজারে অবস্থান করে ৬ নভেম্বর রেলস্টেশন ইয়ার্ড পরিদর্শন এবং ৭ নভেম্বর সকাল ৭টায় চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওয়ানা দেওয়ার কথা রয়েছে।

সরকারি রেল পরিদর্শক (জিআইবিআর) শাখা সূত্র জানায়, ট্রেনযোগে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে পৌঁছান রেল পরিদর্শন দপ্তরের টিম। এসময় নির্মাণাধীন দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন ও বিভিন্ন স্টেশন পরিদর্শন করা হয়েছে। পথে কোথাও কোনো ত্রুটি আছে কি না তা যাচাই করে দেখা হয়।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘এটি আমাদের রুটিন কাজ। এটিকে ট্রায়াল রান বলা যাবে না। আমাদের সঙ্গে রেল পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ছিলেন। তারা রেলপথ পরিদর্শন এবং ইন্টারলকিং সিগন্যালিং ব্যবস্থা, প্ল্যাটফর্ম উঁচু সঠিক কি না, কালভার্ট, লেভেল ক্রসিং গেট দেখেন। ফিরে গিয়ে পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সার্টিফাই করবেন। এরপর ট্রেন চলবে।’

দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক সুবক্তগীন বলেন, ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারে আসবেন। তিন ট্রেন চলাচল উদ্বোধনের পর বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলবে নভেম্বরের শেষ বা ডিসেম্বরের শুরু থেকে। কক্সবাজার রুটে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে ছয় জোড়া ট্রেন চলাচলের পরিকল্পনা আছে। তবে ইঞ্জিন ও বগি সংকটের কারণে এখনই তা হচ্ছে না। পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হবে।

কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশন ও রেলপথ নির্মাণে দায়িত্বে রয়েছেন প্রকৌশলী এনামুল হক সরকার এনাম। তিনি বলেন, আমার অবকাঠামোগত কাজ সমাপ্ত বলা যায়। এখন ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। আমরা ৯০ শতাংশ কাজ শেষ করতে পেরেছি। বাকি কাজ প্রকল্পের মেয়াদ শেষের আগেই সমাপ্ত হবে বলে আশাবাদী আমরা।

এর আগে সকাল নয়টায় চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে এই ট্রেন ছাড়ে। তবে এটি যাত্রীবাহী কোনো ট্রেন ছিল না। এটা ছিল পরিদর্শন ট্রেন। চট্টগ্রাম থেকে পৌঁছাতে ৯ ঘণ্টা ২০ মিনিট লাগে। মূলত পরিদর্শন দল বিভিন্ন স্টেশন, সেতু, রেলপথের শেষ হওয়া নির্মাণকাজ ঘুরে দেখে। এ জন্য বিভিন্ন স্থানে বিরতি দেওয়া হয়।

১১ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের আগে নতুন নির্মিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ পরিদর্শনের জন্য এই ট্রেন চালানো হয়। নতুন রেলপথে ট্রেনকে বরণ করে নিতে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দুই পাশে শত শত মানুষ হাজির হয়েছিলেন। নারী, পুরুষ, শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ যেন হাজির হয়েছিলেন ইতিহাসের সাক্ষী হতে। তাঁরা ফুল ছিটিয়ে ট্রেনে থাকা কর্মকর্তা ও রেলকর্মীদের শুভেচ্ছা জানান।

আজকের এই যাত্রায় নতুন নির্মিত এই রেললাইন যাচাই করে দেখেন পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এ সময় তাঁরা বিভিন্ন স্টেশন, সেতু ও নির্মিত রেলপথের নির্মাণকাজ পরিদর্শন করেন।

আজ সকাল নয়টায় চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে এই ট্রেন কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ট্রেনটিতে সরকারি রেল পরিদর্শক রহুল কাদের আজাদ, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজমুল ইসলামসহ সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও প্রকল্পসংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা ছিলেন। ট্রেনটিতে আটটি বগি রয়েছে।

সাধারণত দেশের কোথাও নতুন রেললাইন নির্মিত হলে পরিদর্শন অধিদপ্তর পরীক্ষা করে দেখে। অধিদপ্তর ছাড়পত্র দিলে নতুন রেলপথটি ট্রেন চলাচলের জন্য উপযোগী বলে বিবেচনা করা হয়। এরপর ট্রায়াল রান (পরীক্ষামূলক চলাচল) ও ট্রেন চলাচল শুরু করতে পারবে।

দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০১ কিলোমিটার লাইনের মধ্যে মোট প্রকল্পের কাজ ৯২ শতাংশ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন প্রকল্পটির কাজ ২০১৮ সালে শুরু হয়। আগামী বছরের জুন পর্যন্ত এই প্রকল্পের মেয়াদ থাকলেও তার আগে আগামী ডিসেম্বরের দিকে পুরোপুরি কাজ শেষ হবে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চালানোর জন্য এর আগেই বুঝিয়ে দেওয়া যাবে।