নিজস্ব প্রতিবেদক :
যাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়ার পর আজ প্রথম বাণিজ্যিক ট্রিপে রাজধানীর মতিঝিলে গিয়েছে বিদ্যুৎচালিত দ্রুতগতির মেট্রোরেল। উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেল চলাচলের প্রথম দিনেই বিপুলসংখ্যক যাত্রীর উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। কম সময়ে যাতায়াত করতে পেরে তাঁরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। উত্তরা উত্তর থেকে সাড়ে সাতটায় মতিঝিলের উদ্দেশ্যে ছাড়ে প্রথম মেট্রোরেল। সাতটা সাইত্রিশ মিনিটে সেটি ছাড়ে পল্লবী থেকে। আর আটটা ২ মিনিটে মতিঝিলে গিয়ে পৌঁছায় রেলটি। মাত্র ৩২ মিনিটে মতিঝিল আসতে পেরে আনন্দিত, উচ্ছ্বসিত যাত্রীরা।
রোববার (৫ নভেম্বর) সকালে দেখা গেছে এ চিত্র। শনিবার (৪ নভেম্বর) উদ্বোধন হয়েছে মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের। এর আগে গত ২৮ ডিসেম্বর উদ্বোধন হয় উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও অংশের।
যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দ্রুতগতির মেট্রোট্রেন তাদের জীবন থেকে যাতায়াতের সময় অনেক কমিয়ে দিয়েছে। মতিঝিল থেকে ফার্মগেট যাতায়াতে সময় কমিয়েছে এক থেকে দেড় ঘণ্টা এবং মিরপুর-১০ গোলচত্বর যাতায়াতের সময় কমিয়েছে দেড় থেকে ২ ঘণ্টা।
সকালে উত্তরা থেকে আসা প্রথম মেট্রোটি ছিল যাত্রীতে পরিপূর্ণ। মতিঝিলে নামার পরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আজিজুল ইসলাম আকাশ বলেন, মিরপুর ১০ নম্বর থেকে মতিঝিল আসতে দেড় থেকে ২ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। সে জায়গায় আমি মাত্র ২০ মিনিটে এসেছি। এটা খুবই ভালো ব্যাপার। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বলেন, সার্ভিসটা অত্যন্ত সুন্দর। মাত্র ৩০ মিনিটে মতিঝিল এসেছি। যাত্রী হিসেবে এটা আমার দীর্ঘদিনের চাওয়া ছিল। আমার আগে ২ ঘণ্টা মিনিমাম লাগতো। বিকেলের যাত্রাটা চালু হলে সবার জন্য আরও ভালো হবে।
মেট্রোরেলের যাত্রী মিঠু রহমান বলেন, মিরপুর-১০ স্টেশন থেকে সকাল ১০টা ১ মিনিটে ট্রেন ছেড়ে ১০টা ১৯ মিনিটে সচিবালয় স্টেশনে থেমেছে। এতে মোট সময় লেগেছে মাত্র ১৮ মিনিট। আর ২০ মিনিটে পৌঁছানো যাবে মতিঝিল স্টেশনে।
তিনি আরও বলেন, এর আগে মেট্রোরেলে উঠলেও প্রথমবারের মতো মেট্রোরেলে করে কর্মক্ষেত্রে আসা। আগে মিরপুর থেকে এখানে সাড়ে ১০টার মধ্যে আসার জন্য সাড়ে ৭টার দিকে ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে ৮টার মধ্যে বাস ধরতে হতো। তারপর তো ২ ঘণ্টার বেদনাদায়ক বাস যাত্রা থাকতো। আর আজ আসলাম নিরবিচ্ছিন্নভাবে, মাত্র ১৮ মিনিটে।
সাধারণ গণপরিবহনে উত্তরা থেকে মতিঝিল যেতে অফিস আওয়ারে প্রায় দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় ব্যয় হয়। তবে মেট্রোরেলে করে প্রায় ৩৮ মিনিটের মধ্যে নির্বিঘ্নে চলে যেতে পারছে ঢাকার এক প্রান্তর থেকে আরেক প্রান্ত। এতে সময় অপচয় রোধের পাশাপাশি পেশাগত ও ব্যক্তিজীবনে যুক্ত হচ্ছে অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা। যা জীবনকে আরও ‘প্রোডাক্টিভ’ করে তুলবে বলে মনে করেন যাত্রীরা।
রফিক নামে মিরপুরের এক যাত্রী বলেন, ‘মেট্রোরেলের কারণে যে সময়টা সেভ হবে। তাতে আগে যদি আমি একটি কাজ করতে পারতাম এখন আমি দুটি কাজ করতে পারবো। আর সড়কে ভোগান্তির কারণে কাজের ক্ষেত্রে মেন্টালি অ্যাডজাস্ট করতে সমস্যা হতো, সেটা আর হবে না। এখন কাজেও মনযোগ বাড়বে।’
নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে আগারগাঁও স্টেশনে থেকে ওঠা চাকরিজীবী কামরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন ৩ ঘণ্টার জ্যাম ঠেলে মতিঝিল আমাকে অফিস যেতে হয়। বাসে ওঠার জন্যও যুদ্ধ করতে হয়। এতে দিনের কাজ শুরু আগেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে হতো। অফিসের কাজে মন দিতে সময় লাগে। সেই কাজ শেষ করতেও সময় লাগে অথবা কাজের চাপ মাথায় নিয়েই ঘুরতে হয়। এইভাবেই কাটছে দিন। এখন মেট্রোরেল চালু হয়েছে। আশা করছি সব ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবো।
ডিএমটিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, মেট্রোরেল শুরুতে তিনটি স্টেশন দিয়ে আগারগাঁও-মতিঝিল সেকশন চালু করা হয়েছে। ধীরে ধীরে স্টেশনের সংখ্যা ও মেট্রোরেল চলাচলের সময় বাড়ানো হবে।
গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেছিলেন শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে উন্নত দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যানজটের নগরীতে যাত্রীদের নতুন অভিজ্ঞতা আর স্বস্তির যাত্রার স্বপ্ন দেখিয়ে মেট্রোরেলের যুগে প্রবেশ করেছিল বাংলাদেশ।