Dhaka মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঢাকায় সংঘটিত সহিংসতার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত দাবি যুক্তরাষ্ট্রের

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ঢাকায় গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ চলাকালে সংঘটিত সংঘর্ষের ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতারও দাবি জানিয়েছে তারা। বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে সমর্থন করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে যুক্তরাষ্ট্র।

সোমবার (৩০ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশি সাংবাদিক জ্যাকব মিল্টনের এক প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার এ কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই ব্রিফিংয়ের বিস্তারিত বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।

স্টেট ডিপার্টমেন্ট করেসপনডেন্ট মুশফিকুল ফজল আনসারীর এক প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশে হামলা এবং সহিংসতার ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বানও জানান।

সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক ম্যাথিউ মিলারের কাছে গত ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতার বিষয়ে জানতে চান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিরোধীদের মহাসমাবেশে হামলা এবং সহিংসতা সম্পর্কে আমরা গত সপ্তাহান্তে আপনার বক্তব্য দেখেছি। এই সহিংসতা মূলত পুলিশ দিয়ে এবং ইন্টারনেট বন্ধ করে সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই সংঘটিত হয়। আর এরপর থেকে পুলিশ প্রধান বিরোধীদল বিএনপির মহাসচিবসহ শতাধিক বিরোধী রাজনীতিক, বিরোধী দলের নেতাদের পরিবারের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা দায়ের করেছে। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে এর প্রতিক্রিয়া জানাবে?

জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় যে রাজনৈতিক সহিংসতা হয়েছে আমরা তার নিন্দা জানাই। একজন পুলিশ সদস্য, একজন রাজনৈতিক কর্মীকে হত্যার ঘটনা এবং হাসপাতাল ও বাসে আগুন দেওয়া অগ্রহণযোগ্য। সাংবাদিকসহ বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতাও অগ্রহণযোগ্য। ২৮ অক্টোবরের সমাবেশে যেসব ঘটনা ঘটেছে তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত এবং সহিংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি করতে আমরা কর্তৃপক্ষকে উৎসাহিত করছি। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব সবার। ভোটার, রাজনৈতিক দল, সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যম; সবারই এই দায়িত্ব রয়েছে।

পরে ওই সাংবাদিক ঢাকায় মার্কিন কূটনীতিকদের ওপর সরকারের গুপ্তচরবৃত্তি নিয়ে প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে, সরকারপন্থি গণমাধ্যম ও তাদের সমর্থকরা বিরোধী রাজনৈতিক নেতা এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সমালোচনা করেছে। এই প্রতিবেদনগুলোতে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, সরকার মার্কিন কূটনীতিকদের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি করছে। আপনারা কি বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন কূটনীতিকদের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি করার অনুমতি দিচ্ছেন?

জবাবে মিলার বলেন, আমাদের কূটনীতিকদের বিস্তৃত পরিসরে যোগাযোগ করতে হয়। যেমন—সুশীল সমাজ, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষাবিদ, বিভিন্ন সংগঠন এবং ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করতে হয়। এটা তাঁদের নিয়মিত কাজের অংশ এবং কূটনীতিকেরা তাঁদের এই কাজ অব্যাহত রাখবেন।

মিলার আরো বলেন, আমি শুধু বলব, কূটনীতিকরা বিভিন্ন ধরনের ও বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলে থাকেন। এর মধ্যে সুশীল সমাজ ও সংস্থা, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ী নেতা, সাংস্কৃতিক কর্মী, শিক্ষাবিদসহ অন্যান্য অনেক ধরনের সংস্থা এবং ব্যক্তিও রয়েছেন। কূটনীতিকরা তাদের দৈনন্দিন কাজের অংশ হিসেবেই এটি করেন এবং আমরা সেটি চালিয়ে যাবো।

পরে জ্যাকব মিল্টন নামে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, গত ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশের সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে পুলিশের ইউনিফর্ম পরিহিত সশস্ত্র ক্যাডাররা পেট্রোল বোমা ও গানপাউডার ব্যবহার করে নিরীহ বেসামরিক মানুষকে হত্যা করে। এসময় সরকারি সম্পত্তির পাশাপাশি জনগণের সম্পত্তিও ধ্বংস করে। সেই ক্ষমতাসীন দল বলছে, বিরোধী দলের কর্মীরা ওই হামলা করেছে। তারা গত ১৪ বছর ধরেই এটি করছে। আমি মনে করি আন্তর্জাতিকভাবে সবাই স্বীকার করেছে, এ সমস্ত হামলা— সেটাকে সন্ত্রাসী হামলা বলুন বা যেটাই বলুন, ক্ষমতাসীন দলের সশস্ত্র ক্যাডার ছাত্রলীগ ও যুবলীগসহ কিছু মানুষ করছে। আর তাই আমেরিকার কি তাদের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করার কোনও পরিকল্পনা আছে?

জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমি মনে করি বাংলাদেশ সম্পর্কিত পূর্ববর্তী প্রশ্নের উত্তরে আমি যা বলেছি তা এখানেও প্রযোজ্য। আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে সমর্থন করার জন্য প্রয়োজন হলে আমরা পদক্ষেপ নেব এবং আমি কখনোই সেগুলো নিয়ে আগে থেকে এখানে কথা বলব না।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ঢাকায় সংঘটিত সহিংসতার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত দাবি যুক্তরাষ্ট্রের

প্রকাশের সময় : ১২:০৬:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ঢাকায় গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ চলাকালে সংঘটিত সংঘর্ষের ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতারও দাবি জানিয়েছে তারা। বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে সমর্থন করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে যুক্তরাষ্ট্র।

সোমবার (৩০ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশি সাংবাদিক জ্যাকব মিল্টনের এক প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার এ কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই ব্রিফিংয়ের বিস্তারিত বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।

স্টেট ডিপার্টমেন্ট করেসপনডেন্ট মুশফিকুল ফজল আনসারীর এক প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশে হামলা এবং সহিংসতার ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বানও জানান।

সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক ম্যাথিউ মিলারের কাছে গত ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতার বিষয়ে জানতে চান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিরোধীদের মহাসমাবেশে হামলা এবং সহিংসতা সম্পর্কে আমরা গত সপ্তাহান্তে আপনার বক্তব্য দেখেছি। এই সহিংসতা মূলত পুলিশ দিয়ে এবং ইন্টারনেট বন্ধ করে সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই সংঘটিত হয়। আর এরপর থেকে পুলিশ প্রধান বিরোধীদল বিএনপির মহাসচিবসহ শতাধিক বিরোধী রাজনীতিক, বিরোধী দলের নেতাদের পরিবারের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা দায়ের করেছে। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে এর প্রতিক্রিয়া জানাবে?

জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় যে রাজনৈতিক সহিংসতা হয়েছে আমরা তার নিন্দা জানাই। একজন পুলিশ সদস্য, একজন রাজনৈতিক কর্মীকে হত্যার ঘটনা এবং হাসপাতাল ও বাসে আগুন দেওয়া অগ্রহণযোগ্য। সাংবাদিকসহ বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতাও অগ্রহণযোগ্য। ২৮ অক্টোবরের সমাবেশে যেসব ঘটনা ঘটেছে তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত এবং সহিংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি করতে আমরা কর্তৃপক্ষকে উৎসাহিত করছি। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব সবার। ভোটার, রাজনৈতিক দল, সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যম; সবারই এই দায়িত্ব রয়েছে।

পরে ওই সাংবাদিক ঢাকায় মার্কিন কূটনীতিকদের ওপর সরকারের গুপ্তচরবৃত্তি নিয়ে প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে, সরকারপন্থি গণমাধ্যম ও তাদের সমর্থকরা বিরোধী রাজনৈতিক নেতা এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সমালোচনা করেছে। এই প্রতিবেদনগুলোতে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, সরকার মার্কিন কূটনীতিকদের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি করছে। আপনারা কি বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন কূটনীতিকদের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি করার অনুমতি দিচ্ছেন?

জবাবে মিলার বলেন, আমাদের কূটনীতিকদের বিস্তৃত পরিসরে যোগাযোগ করতে হয়। যেমন—সুশীল সমাজ, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষাবিদ, বিভিন্ন সংগঠন এবং ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করতে হয়। এটা তাঁদের নিয়মিত কাজের অংশ এবং কূটনীতিকেরা তাঁদের এই কাজ অব্যাহত রাখবেন।

মিলার আরো বলেন, আমি শুধু বলব, কূটনীতিকরা বিভিন্ন ধরনের ও বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলে থাকেন। এর মধ্যে সুশীল সমাজ ও সংস্থা, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ী নেতা, সাংস্কৃতিক কর্মী, শিক্ষাবিদসহ অন্যান্য অনেক ধরনের সংস্থা এবং ব্যক্তিও রয়েছেন। কূটনীতিকরা তাদের দৈনন্দিন কাজের অংশ হিসেবেই এটি করেন এবং আমরা সেটি চালিয়ে যাবো।

পরে জ্যাকব মিল্টন নামে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, গত ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশের সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে পুলিশের ইউনিফর্ম পরিহিত সশস্ত্র ক্যাডাররা পেট্রোল বোমা ও গানপাউডার ব্যবহার করে নিরীহ বেসামরিক মানুষকে হত্যা করে। এসময় সরকারি সম্পত্তির পাশাপাশি জনগণের সম্পত্তিও ধ্বংস করে। সেই ক্ষমতাসীন দল বলছে, বিরোধী দলের কর্মীরা ওই হামলা করেছে। তারা গত ১৪ বছর ধরেই এটি করছে। আমি মনে করি আন্তর্জাতিকভাবে সবাই স্বীকার করেছে, এ সমস্ত হামলা— সেটাকে সন্ত্রাসী হামলা বলুন বা যেটাই বলুন, ক্ষমতাসীন দলের সশস্ত্র ক্যাডার ছাত্রলীগ ও যুবলীগসহ কিছু মানুষ করছে। আর তাই আমেরিকার কি তাদের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করার কোনও পরিকল্পনা আছে?

জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমি মনে করি বাংলাদেশ সম্পর্কিত পূর্ববর্তী প্রশ্নের উত্তরে আমি যা বলেছি তা এখানেও প্রযোজ্য। আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে সমর্থন করার জন্য প্রয়োজন হলে আমরা পদক্ষেপ নেব এবং আমি কখনোই সেগুলো নিয়ে আগে থেকে এখানে কথা বলব না।