নিজস্ব প্রতিবেদক :
ঢাকায় বিএনপির ‘মহাসমাবেশের’ দিন পুলিশ সদস্য আমিরুল ইসলাম পারভেজ হত্যার ঘটনায় ‘সরাসরি যুক্ত’ দুইজনকে গ্রেফতারের কথা জানিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘উচ্চ নিম্ন’ কাউকে ছাড় না দেওয়ার ঘোষণা এসেছে।
রোববার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে রাজারবাগে নিহত পুলিশ কনস্টেবলের জানাজা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
গ্রেফতাররা হলেন- শামীম রেজা ও মো. সুলতান। শামীম গাইবান্ধার পলাশবাড়ী পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক। তাকে গাইবান্ধা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদিকে সুলতানকে গ্রেফতার করা হয়েছে ঢাকার ডেমরা এলাকা থেকে।
তিনি বলেন, আমরা এরই মধ্যে এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করেছি। তাদের একজনকে গাইবান্ধা এবং অন্যজনকে রাজধানীর ডেমরা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দুজনই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে পারভেজের জানাজায় গিয়ে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে যা কিছু করার দরকার আমরা করব। ইতিমধ্যে পারভেজ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি যুক্ত দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
নিহত পারভেজের পরিবারের উদ্দেশ্যে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রতিটি সদস্য একটি পরিবার। আজ থেকে আমিরুল পারভেজের পরিবারটি আমাদের পরিবার। তার ছোট কন্যার পড়ালেখা এবং তার ভরণপোষণের যাবতীয় ব্যবস্থা করবে ঢাকা মহানগর পুলিশ। পারভেজের বাসায় একটি ঘর নেই। তার ঘরসহ যা যা করার লাগে আমরা করব।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ডিবির তুলে আনার বিষয়ে হাবিবুর রহমান বলেছেন, তাকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে এসেছি। পরে যদি আমরা তেমন কিছু পাই, তদন্তের পর, তখন বলা যাবে। এ মুহূর্তে আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে এসেছি।
হাবিবুর রহমান বলেন, পুলিশ সদস্য হত্যার ঘটনাসহ আরও যে বিভিন্ন বাস পোড়ানো হয়েছে, বিভিন্ন ট্রাফিক বক্স, ১১৩ জন পুলিশ সদস্য আহত রয়েছে। তাদের মধ্যে এখনো অনেকের জীবন সংকটাপন্ন। কিছুক্ষণ আগেই আমরা খবর পেয়েছি, আরেকজনের জীবন সংকটাপন্ন। কী হয় আপনারা জানেন। আপনারা প্রত্যক্ষভাবে দেখেছেন। এখানে একটি আনুষ্ঠানিক সমাবেশের ভেতর থেকে এ কাজগুলো করা হয়েছে। সুতরাং সেখানে অনেকেই জড়িত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, এসব বিবেচনায় আমরা অনেককেই খুঁজছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসছি। তদন্ত কার্যক্রম চলছে। তদন্ত কার্যক্রম শেষ হলে প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা আরও গ্রেফতার করবো।
তিনি আরো বলেন, গতকাল বিএনপি কর্মসূচির নামে বিচারপতির বাসভবনে হামলা, হাসপাতালে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেছে। পুলিশ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। বিএনপির হামলার এ উদাহরণকে আমরা বর্তমানে ফিলিস্তিনে গাজা উপত্যকায় যেভাবে হামলা চলছে তার সঙ্গে মেলাতে পারি।
কমিশনার বলেন, বিএনপির হামলা গাজা উপত্যকায় হামলার ন্যায়, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনীর হাতেও এমন হামলা আমরা দেখিনি। পুলিশ সদস্য হত্যাসহ গতকালের সব ঘটনায় যোগ্য ও সুষ্ঠু বিচারের জন্য সবকিছু করছি।
হাবিবুর রহমান বলেন, এই নৃশংস ঘটনার যাতে ন্যায় ও যোগ্য বিচার হয়, এজন্য যা কিছু করা দরকার ডিএমপির পক্ষ থেকে করা হবে। ইতোমধ্যে আমরা ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের পর ছবি মিলিয়ে দুজনকে শনাক্ত করে গাইবান্ধা থেকে একজন এবং ঢাকা ডেমরা থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করেছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, গতকালের ঘটনাসহ বাস ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ট্রাফিক পুলিশ বক্সে আগুন ও ভাঙচুর করা হয়েছে। ১১৪ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। কারো কারো অবস্থা সংকটাপন্ন। একটু আগে খবর পেয়েছি আরও এক পুলিশ সদস্যের জীবন সংকটাপন্ন। আনুষ্ঠানিক সমাবেশের ভেতর থেকে এসব ঘটনা ঘটানো হয়েছে। অনেকেই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। আমরা অনেককে খুঁজছি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়েকজনকে আনা হয়েছে।
আপনি নিজেই বলেছেন একটা ভীতির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নিরাপত্তা সম্পর্কে বলবেন? কারণ আজও বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। ডিবি পুলিশ পরিচয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে। যাত্রী বেশেও বাসে আগুনের দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, এর জবাব আমাকে দিতে হবে না। গণমাধ্যমের কাছেই আছে। গতকাল যা ঘটেছে তা প্রকাশ্যে ঘটেছে। শুধু গণমাধ্যম নয়, সিসিটিভি, পুলিশের নিজস্ব ক্যামেরায়ও জবাব রয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও একটি অনুষ্ঠানে অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। হাত পা ভাঙা হয়েছে। ক্যামেরা ভাঙা হয়েছে। হামলাকারীদের অনেকে সাংবাদিক বেশে এসেছিল। তারাও এসেছিল ব্যাগ নিয়ে। ব্যাক-প্যাকের ভেতর থেকে বের হয়েছে ককটেল। যারা অপপ্রচার করছে, দেশে-বিদেশে থেকে কল্পনাপ্রসূত তথ্য প্রচার করছে। আমি মনে করি, বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এসব করা হচ্ছে। কেবল পুলিশ, নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী নয়, পুলিশ সাংবাদিকসহ নগরবাসী মিলে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে মূলধারার গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসতে হবে।
বিরোধী দলের অফিস বন্ধ করা হয়েছে, আটক গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আর কয়েক দিনের মধ্যে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করার কথা রয়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে ফেয়ার প্লে গ্রাউন্ড ভণ্ডুল হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, এটির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। দেশের ব্যবসা বাণিজ্য, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক কেন্দ্রবিন্দু ঢাকা। ঢাকাকে শান্ত রাখা ও নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে এসব কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে।