ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি :
‘রাতের বেলা কোর্ট বসানো হয়’ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, আমি উনাকে ভালো জানতাম। তবে এখন অনেক কথাই মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য তিনি বলেন।
শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া রেলওয়ে স্টেশনে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিএনপি আন্দোলন করতে পারে, এটা রাজনৈতিক দলের অধিকার। কিন্তু কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করে নয়। যদি তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে।
আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন। আন্দোলন করতে পারবে, এটা রাজনৈতিক দলের অধিকার। কিন্তু বিশৃঙ্খলা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে, তারা ব্যবস্থা নেবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আইনসচিব মো. গোলাম সারওয়ার, জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম, পুলিশ সুপার মো. শাখাওয়াত হোসেন, আখাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. তাকজিল খলিফা কাজল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অংগ্যজাই মারমা প্রমুখ।
পরে মন্ত্রী আখাউড়া উপজেলা চত্বরে আখাউড়া উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক সকল শিক্ষার্থীদের মাঝে গাছের চারা বিতরণ করে। এর আগে মন্ত্রী ট্রেনে চড়ে ঢাকা থেকে আখাউড়া আসেন।
বেলা ১১টায় আখাউড়া পৌর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত এখন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণ তা সফল হতে দেবে না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সচেতন থাকবেন, ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন নির্বাচন হবে। ইনশাআল্লাহ সুষ্ঠু, সুন্দর, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। আর সেই নির্বাচন কেউ ব্যাহত করার চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মুখে বুড়ো আঙুল দিয়ে বসে থাকবে না। বাংলাদেশে যারা অশান্তি সৃষ্টি করবে জনগণ তাদেরকে সঠিক জবাব দেবে।
আইনমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াতের লোকজন বলেছিল, আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে মসজিদে উলুধ্বনি হবে। উনারা কিন্তু ১৯৭৫ থেকে শুরু করে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ছিল। আবার ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ছিল। উনারা কিন্তু মসজিদ-মাদরাসা করেনি। উনারা লুটপাট করতে ব্যস্ত ছিল। নিরীহ মানুষ মারতে ব্যস্ত ছিল। আর জননেত্রী শেখ হাসিনা সাত হাজার কোটি টাকা খরচ করে প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ তৈরি করে দিয়েছেন। যারা পাকিস্তানকে ভালোবাসে তারা বাংলাদেশের উন্নয়ন করবে না।
২৮ অক্টোবরের কর্মসূচি নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ২৮ অক্টোবর বিএনপি তেলেসমাতি দেখাবে। আমরা তো পাকিস্তান আর্মির তেলেসমাতি দেখেছি। উনাদের (বিএনপি) তেলেসমাতি আর কি দেখব? উনাদের নেতারা তো আইছে আর গেছে।
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন বিএনপি-জামায়াতের সহ্য হয় না। এখনো বাংলাদেশে এক ডলার ১১০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে থাকে। আর এই এক ডলারের দাম পাকিস্তানে ৩০০ রুপি। যেহেতু উনাদের বাবাদের দেশ পাকিস্তান, সেখানে বাংলাদেশের উন্নতি হচ্ছে সেটি তাদের ভালো লাগে না।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আনিসুল হক বলেন, কারা নির্বাচনে এলো আর কারা নির্বাচনে এলো না সেটি ভাবার বিষয় না। লক্ষ্য রাখতে হবে জনগণ যেন তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে ভোটকেন্দ্রে যায়। উন্নয়নের জন্য শেখ হাসিনার নৌকাকে বিজয়ী করতে হবে। এ সময় নেতা-কর্মীদের আইনমন্ত্রীর পক্ষ হয়ে জনগণের কাছে গিয়ে ভোট চাইতে বলেন তিনি।
এর আগে আইনমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ২৫ হাজার চারা বিতরণ করেন।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় ট্রেনে ঢাকা থেকে আখাউড়ায় পৌঁছান আইনমন্ত্রী। এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল বলেছেন ‘বিএনপি নেতা-কর্মীদের মামলার বিচারকাজের জন্য রাতেও আদালত বসানো হচ্ছে। মির্জা ফখরুলকে ভালো জানতাম। কিন্তু তিনি এখন অনেক কথাই জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য বলেন।
তিনি আরও বলেন, সকল রাজনৈতিক দলের আন্দোলন করার অধিকার আছে। তবে আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেবে।