মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি :
মাদারীপুর-৩ (সদর ও কালকিনি) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) দিনগত রাত ২টা ৫ মিনিটে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার ব্যক্তিগত সহকারী সমির রঞ্জন।
তিনি জানান, আবুল হোসেন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হার্টের ‘সিভিয়ার প্রবলেম’ নিয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
সৈয়দ আবুল হোসেন স্ত্রী খাজা নার্গিস, দুই মেয়ে সৈয়দা রুবাইয়াত হোসেন ও সৈয়দা ইফফাত হোসেনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুর সংবাদে মাদারীপুর জেলাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
কালকিনি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, সৈয়দ আবুল হোসেনের চলে যাওয়া আমরা মেনে নিতে পারছি না। তিনি ছিলেন ডাসার উপজেলার রুপকার। তার মাধ্যমেই ডাসার উপজেলার জন্ম হয়েছে। শুধু তাই নয় তিনি এ জেলায় বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে গেছেন, যা ইতিহাসে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রাখবেন।
সৈয়দ আবুল হোসেন ১৯৫১ সালের ১ অক্টোবর মাদারীপুরের ডাসার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পেশায় একজন রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী। আওয়ামী লীগের হয়ে মাদারীপুর-৩ আসন থেকে ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সৈয়দ আবুল হোসেন। আরও তিন মেয়াদে ওই এলাকার সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি।
এরমধ্যে ২০০৯ থেকে ২০১২ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে ১৯৯৬-৯৭ সালে স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ছিলেন তিনি।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলারের চুক্তি সই করে সরকার। কিন্তু বছরের শেষ দিকেই তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। পরে ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি যোগাযোগমন্ত্রীর পদ থেকে সৈয়দ আবুল হোসেন পদত্যাগ করেন। সেতু বিভাগের তৎকালীন সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াকেও দায়িত্ব থেকে সরে যেতে হয়। এ সময় তাদেরকে গ্রেপ্তারের দাবিও ওঠে।
যদিও ওই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি সেতুর ঠিকাদার নিয়োগে দুর্নীতির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদন দেয় দুদক। কিন্তু ৩০ জুন পদ্মা সেতুর ঋণ চুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। তবে ৯ জুলাই মন্ত্রিসভার বৈঠকে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পরবর্তীতে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগে কানাডার আদালতে একটি মামলা হয়। দীর্ঘ ৫ বছরের দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০১৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি কানাডার আদালত জানায়, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক ঋণ বাতিল করেছিল, তার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।