কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি :
বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপ ও বৈরি আবহাওয়ার কারণে পর্যটকদের সোমবার (২৩ অক্টোবর) বেলা তিনটার মধ্যে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ছাড়ার নির্দেশনা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এছাড়া মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) থেকে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন পথে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যে এই নির্দেশনার কথা জানিয়ে দ্বীপে মাইকিং করা হচ্ছে।
সোমবার (২৩ অক্টোবর) দুপুর ১টা ২০ মিনিটে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধরী।
তিনি বলেন, বর্তমানে দ্বীপে আনুমানিক দেড় হাজার পর্যটক রয়েছে। আবহাওয়া অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারি বৈরী আবহাওয়া বিদ্যমান। যেকোন মুহুর্তে সতর্ক সংকেত বেড়ে যেতে পারে। তাই সাগর উত্তাল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকায় সেন্টমার্টিন দ্বীপে অবস্থানরত পর্যটকদের দ্বীপ ত্যাগ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ইউএনও আদনান আরও বলেন, মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) থেকে সেন্টমার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষণা দেওয়ার পরও যদি পর্যটক সেন্টমার্টিনে থেকে যায় তবে জাহাজ গিয়ে তাদের ফিরিয়ে আনা অসম্ভব হয়ে পড়বে। পরে আবহাওয়া সবকিছু ঠিক থাকলে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেয়া হবে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) টেকনাফের ট্রাফিক সুপারভাইজার মো. জহির উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, সোমবার সকালে ১১৫০জন যাত্রী নিয়ে তিনটি পর্যটকবাহী জাহাজ কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইন, বার আউলিয়ার ও কেয়ারি সিন্দবাদ টেকনাফ দমদমিয়া জেটিঘাট থেকে সেন্টমার্টিন উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। হঠাৎ সাগর উত্তাল হওয়ার কারণে আবহাওয়া অধিদপ্তর ৩ নম্বর সর্তক সংকেত জারি করেন। তবে এ কারণে আগামীকাল ২৪ অক্টোবর থেকে সেন্টমার্টিন ও টেকনাফ নৌপথে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকবে বলে তিনি জানায়।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, সাগর উত্তাল থাকার কারণে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় দ্বীপে অবস্থান রত সকল পর্যটককে মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে এবং তাদেরকে দ্বীপ থেকে টেকনাফে ফিরে যেতে বলা হচ্ছে। যেহেতু আগামীকাল থেকে সেন্ট মার্টিন-টেকনাফ নৌপথে জাহাজ চলাচল করবে না।
আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তি ৬-এ বলা হয়েছে, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি সামান্য উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি সোমবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৫৫ কি. মি. পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭১০ কি. মি. পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৩০ কিমি দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৩০ কি.মি. দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে।
জানা গেছে, রোববার রাত পর্যন্ত সেন্ট মার্টিন দ্বীপে প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক পর্যটক অবস্থান করছিলেন। এদিকে বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে টেকনাফের দমদমিয়া জেটিঘাট থেকে কেয়ারি সিন্দাবাদে ১৮০, কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইনে ২৭২ ও এমভি বার আউলিয়ার ৭২৭ জন পর্যটক সেন্ট মার্টিন দ্বীপে বেড়াতে গেছেন। জাহাজগুলো বেলা ১টার মধ্যে সেন্ট মার্টিন জেটিতে পৌঁছায়।
গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে সমুদ্রবন্দরগুলোতে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।