Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পানির তোড়ে ভেঙে পড়েছে ব্রিজ, দুর্ভোগে হাজারও মানুষ

কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি : 

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নের গিদারী নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি তীব্র স্রোতে ভেঙে গেছে। চলাচলের একমাত্র সেতুটি ভেঙে পড়ায় আশপাশের প্রায় ছয় গ্রামের মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। পৌর শহরে আসতে তাদের ঘুরতে হচ্ছে চার কিলোমিটার সড়কপথ। বেহাল দশায় থাকা সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা।

বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) সকালে ব্রিজটি খালে ধসে পড়ে।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাগজিপাড়া গ্রামের গিদারি নদী নামক খালের ওপর নির্মিত ব্রিজটি অর্ধশত বছর পুরনো। ইউনিয়নের ছয় গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষের যাতায়াতে এটি ব্যবহৃত হচ্ছিল। ব্রিজটি ধসে পড়ায় বৃহৎ জনগোষ্ঠীর যাতায়াত সুবিধা ভেঙে পড়েছে বলে জানায় এলাকাবাসী।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ১৯৬৯-এ কাগজীপাড়া গ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত গিদারী নদীর ওপর সেতুটি নির্মিত হয়। সেতুটিতে চলাচল করেন উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নের কাগজিপাড়া, আমভদ্রপাড়া, চাকলিরপাড়, জটিয়াপাড়া, সাতঘরিয়া পাড়া, কবিরাজপাড়া, বড়বাড়ি, চন্ডিজান, ঢেকিয়ারামসহ আশপাশের এলাকার প্রায় ১৫ হাজারেরও বেশি বাসিন্দা। বর্তমানে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নদীটির খনন কাজ শুরু করলে সেতুটির নিচের মাটি সরে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।

তবে পাউবোর দাবি, খাল খননের কারণে নয়। পানির স্রোতে সেতুর অ্যাবাটমেন্ট ও পায়ারের নিচের মাটি সরে গিয়ে সেতুটি ভেঙে পড়েছে। জিও ব্যাগ ফেলা হলেও শেষ পর্যন্ত ব্রিজটিকে রক্ষা করা যায়নি।

চাকলির পাড় গ্রামের বাসিন্দা মোকছেদ আলী বলেন, ব্রিজটি ভেঙে পড়ায় আমাদের এলাকার অনেক বড় সমস্যা সৃষ্টি হলো। যাতায়াত ও মালামাল পরিবহনে এলাকাবাসীকে বিড়ম্বনা পোহাতে হবে। কবে নতুন ব্রিজ হবে, এই বিড়ম্বনার শেষ হবে তা বলা মুশকিল। মানুষের চলাচলের স্বার্থে দ্রুত একটি নতুন ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানান তিনি।

আরেক বাসিন্দা রহিম মিয়া বলেন, অনেক চেষ্টা করেও ব্রিজটা আটকানো গেলো না। সরকার যেন দ্রুত একটা ব্রিজ করি দেয়। না হইলে আমাদের ভোগান্তির শ্যাষ থাকবার নয়।

আমভদ্রপাড়া গ্রামের অটোরিকশাচালক আব্দুল গণি। তিনি বলেন, সেতুটি এ অঞ্চলের মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। পৌর শহরসহ দুর্গাপুর হাট, মিনাবাজার ও পান্ডুল ইউনিয়নে যাতায়াত করার এটি ছিল একমাত্র পথ। এ সেতুর ওপর দিয়ে কাগজিপাড়া পানের বরজ থেকে পান গাড়িতে করে জেলা শহরে নিয়ে যেতাম। সেতুটি ভেঙে পড়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যসহ যোগাযোগের খুব অসুবিধা হয়ে গেলো।

পাউবোর নদীখনন প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি আবদুল আজিজ জানান, প্রায় অর্ধশত বছর আগে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। সেসময় সেতুটি অনেক উঁচুতে নির্মাণ করা হয়েছিল। খাল খননের পর সেতুর মুখ উঁচুতে উঠে যায়। সেতুর উজানে অতিরিক্ত পানি জমায় চাপ সহ্য করতে না পেরে ভাঙন দেখা দেয়। পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে এক হাজার ২০০ জিও ব্যাগ ব্যবহার করে পানির স্রোত কমানোর চেষ্টা করা হয়েছে তবে কোনো ফল হয়নি।অবশেষে সেতুটি ভেঙে যায়।

পাউবো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, খাল খননের জন্য নয় বরং এর নিচের একটি অংশ দিয়ে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছিল। ফলে পানির উচ্চতা বেড়ে গিয়ে তীব্র স্রোতের কারণে পিলারের নিচের মাটি সরে গিয়ে ব্রিজটি ঝুঁকিতে পড়েছিল। তারপরও আমরা জিও ব্যাগ ফেলে এটি রক্ষার চেষ্টা করেছিলাম।

উলিপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাহমুদুর রহমান বলেন, ব্রিজটি অনেক পুরনো। ঝুঁকিতে পড়ার পর আমরা যাতায়াত নিয়ন্ত্রণসহ কিছু সাবধানতা অবলম্বন করেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্রিজটি ধসে পড়েছে। উপজেলা প্রকৌশলী ওই স্থানে নতুন ব্রিজ নির্মাণে প্রাক্কলন তৈরি করে কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবেন। অনুমোদন হয়ে আসলে নতুন ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।

ভারপ্রাপ্ত ইউএনও বলেন, এলাকাবাসীর যাতায়াতের সুবিধার্থে আপাতত একটি কাঠের সাঁকো নির্মাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে সাঁকো নির্মাণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

পানির তোড়ে ভেঙে পড়েছে ব্রিজ, দুর্ভোগে হাজারও মানুষ

প্রকাশের সময় : ০২:৪৫:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ অক্টোবর ২০২৩

কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি : 

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নের গিদারী নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি তীব্র স্রোতে ভেঙে গেছে। চলাচলের একমাত্র সেতুটি ভেঙে পড়ায় আশপাশের প্রায় ছয় গ্রামের মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। পৌর শহরে আসতে তাদের ঘুরতে হচ্ছে চার কিলোমিটার সড়কপথ। বেহাল দশায় থাকা সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা।

বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) সকালে ব্রিজটি খালে ধসে পড়ে।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাগজিপাড়া গ্রামের গিদারি নদী নামক খালের ওপর নির্মিত ব্রিজটি অর্ধশত বছর পুরনো। ইউনিয়নের ছয় গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষের যাতায়াতে এটি ব্যবহৃত হচ্ছিল। ব্রিজটি ধসে পড়ায় বৃহৎ জনগোষ্ঠীর যাতায়াত সুবিধা ভেঙে পড়েছে বলে জানায় এলাকাবাসী।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ১৯৬৯-এ কাগজীপাড়া গ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত গিদারী নদীর ওপর সেতুটি নির্মিত হয়। সেতুটিতে চলাচল করেন উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নের কাগজিপাড়া, আমভদ্রপাড়া, চাকলিরপাড়, জটিয়াপাড়া, সাতঘরিয়া পাড়া, কবিরাজপাড়া, বড়বাড়ি, চন্ডিজান, ঢেকিয়ারামসহ আশপাশের এলাকার প্রায় ১৫ হাজারেরও বেশি বাসিন্দা। বর্তমানে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নদীটির খনন কাজ শুরু করলে সেতুটির নিচের মাটি সরে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।

তবে পাউবোর দাবি, খাল খননের কারণে নয়। পানির স্রোতে সেতুর অ্যাবাটমেন্ট ও পায়ারের নিচের মাটি সরে গিয়ে সেতুটি ভেঙে পড়েছে। জিও ব্যাগ ফেলা হলেও শেষ পর্যন্ত ব্রিজটিকে রক্ষা করা যায়নি।

চাকলির পাড় গ্রামের বাসিন্দা মোকছেদ আলী বলেন, ব্রিজটি ভেঙে পড়ায় আমাদের এলাকার অনেক বড় সমস্যা সৃষ্টি হলো। যাতায়াত ও মালামাল পরিবহনে এলাকাবাসীকে বিড়ম্বনা পোহাতে হবে। কবে নতুন ব্রিজ হবে, এই বিড়ম্বনার শেষ হবে তা বলা মুশকিল। মানুষের চলাচলের স্বার্থে দ্রুত একটি নতুন ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানান তিনি।

আরেক বাসিন্দা রহিম মিয়া বলেন, অনেক চেষ্টা করেও ব্রিজটা আটকানো গেলো না। সরকার যেন দ্রুত একটা ব্রিজ করি দেয়। না হইলে আমাদের ভোগান্তির শ্যাষ থাকবার নয়।

আমভদ্রপাড়া গ্রামের অটোরিকশাচালক আব্দুল গণি। তিনি বলেন, সেতুটি এ অঞ্চলের মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। পৌর শহরসহ দুর্গাপুর হাট, মিনাবাজার ও পান্ডুল ইউনিয়নে যাতায়াত করার এটি ছিল একমাত্র পথ। এ সেতুর ওপর দিয়ে কাগজিপাড়া পানের বরজ থেকে পান গাড়িতে করে জেলা শহরে নিয়ে যেতাম। সেতুটি ভেঙে পড়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যসহ যোগাযোগের খুব অসুবিধা হয়ে গেলো।

পাউবোর নদীখনন প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি আবদুল আজিজ জানান, প্রায় অর্ধশত বছর আগে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। সেসময় সেতুটি অনেক উঁচুতে নির্মাণ করা হয়েছিল। খাল খননের পর সেতুর মুখ উঁচুতে উঠে যায়। সেতুর উজানে অতিরিক্ত পানি জমায় চাপ সহ্য করতে না পেরে ভাঙন দেখা দেয়। পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে এক হাজার ২০০ জিও ব্যাগ ব্যবহার করে পানির স্রোত কমানোর চেষ্টা করা হয়েছে তবে কোনো ফল হয়নি।অবশেষে সেতুটি ভেঙে যায়।

পাউবো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, খাল খননের জন্য নয় বরং এর নিচের একটি অংশ দিয়ে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছিল। ফলে পানির উচ্চতা বেড়ে গিয়ে তীব্র স্রোতের কারণে পিলারের নিচের মাটি সরে গিয়ে ব্রিজটি ঝুঁকিতে পড়েছিল। তারপরও আমরা জিও ব্যাগ ফেলে এটি রক্ষার চেষ্টা করেছিলাম।

উলিপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাহমুদুর রহমান বলেন, ব্রিজটি অনেক পুরনো। ঝুঁকিতে পড়ার পর আমরা যাতায়াত নিয়ন্ত্রণসহ কিছু সাবধানতা অবলম্বন করেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্রিজটি ধসে পড়েছে। উপজেলা প্রকৌশলী ওই স্থানে নতুন ব্রিজ নির্মাণে প্রাক্কলন তৈরি করে কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবেন। অনুমোদন হয়ে আসলে নতুন ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।

ভারপ্রাপ্ত ইউএনও বলেন, এলাকাবাসীর যাতায়াতের সুবিধার্থে আপাতত একটি কাঠের সাঁকো নির্মাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে সাঁকো নির্মাণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।