নিজস্ব প্রতিবেদক :
ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় ওআইসিভুক্ত ১৪ দেশের রাষ্ট্রদূত গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মুসলিম উম্মাহ যদি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে, ফিলিস্তিন সংকটের সমাধান সম্ভব। গাজা পরিস্থিতি এবং সেখানে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় নিয়ে তারা আলোচনা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নীতি অনুসরণ করে অতীতের মত ফিলিস্তিনিদের প্রতি বাংলাদেশ তার সমর্থন অব্যাহত রাখবে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ফিলিস্তিনিদের জন্য আগামী শুক্রবার সারাদেশের মসজিদ সমূহে জুম্মার নামাজের পর বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।
আলোচনাকালে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত গাজা এবং এর আশপাশের এলাকায় ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর ভয়াবহতা তুলে ধরে বলেন, সেখানে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে এবং ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।
তিনি বলেন, কোন পথে ফিলিস্তিনে ওষুধ পাঠানো হবে এখনো সেটা ক্লিয়ার না। তবে আমরা পাঠাবো। এছাড়া আগামী শুক্রবার বাংলাদেশের সব মসজিদে ফিলিস্তিনিদের জন্য দোয়া পড়ানো হবে।
তিনি বলেন, গতকাল ফিলিস্তিনের হাসপাতালে যে অ্যাটাক করেছে সেখানে বহু শিশু এবং নারী মারা গেছে। সে সম্পর্কে তারা (১৪ দেশের রাষ্ট্রদূতরা) তাদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন। ফিলিস্তিনিদের ব্যাপারে বাংলাদেশের যেই সমর্থন আছে, সেই সমর্থন যেন অব্যাহত থাকে সেটাও চান তারা।
এ সময় বাংলাদেশের সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই ধরনের সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার। হাসপাতালের উপর যে হামলা হয়েছে তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে সচিব বলেন, অতি শীঘ্রই একটি শোক দিবস পালনেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। ক্যাবিনেটের মাধ্যমে সেটি জানানো হবে।
প্রধানমন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন, সমস্যার মূল যে কারণগুলো রয়েছে, এগুলো বের করে বিশ্ব সম্প্রদায়কে একটা সমাধানের পথ বের করতে হবে। তার জন্য দরকার মুসলিম উম্মাহর ঐক্য।
সচিব বলেন, মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের উপর প্রধানমন্ত্রী বার বার জোর দিয়েছেন। মুসলিম উম্মাহ ঐক্যবদ্ধ হলে ফিলিস্তিনিদের অধিকার নিশ্চিত হবে। আর ২৩৮ এবং ৩৪২ যে রেজুলেশনগুলো আছে, সেগুলো বাস্তবায়িত হয়নি।
সচিব আরও জানান, আজকে ওআইসি একটা জরুরি সভা ডেকেছে। সেখানে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আছেন। তিনি বক্তব্য দিয়েছেন। তারা একটা রেজ্যুলেশনে এই মুহূর্তে কাজ করছে। আজকে যারা রাষ্ট্রদূত ছিলাম তারা এবং প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এর মাধ্যমে শক্তিশালী বার্তা যাবে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে, যে এটা চলতে পারে না। যুদ্ধ বা সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত। এই সমস্যার সমাধান যেন নতুন করে করা হয়।
সচিব বলেন, আমরা সবসময় তাদের (ফিলিস্তিনি) পাশে ছিলাম, আমরা তাদের পাশে থাকব। এবারও আমরা ওষুধ এবং জরুরি সামগ্রী পাঠাবো। আন্তর্জাতিকভাবে যতগুলো ফোরাম আছে আমরা সেখানে সক্রিয় ভূমিকা রাখব।
রাষ্ট্রদূতদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা সবাই একসঙ্গে হয়েছেন এটাও একটা মেসেজ।
সচিব জানান, ফিলিস্তিনের সমস্যার কথা চিন্তা করে তারা (রাষ্ট্রদূতরা) সবাই একত্র হয়েছেন, এক ভয়েজে কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর যথেষ্ট প্রশংসা করেছেন।
ইয়াসেফ রামাদান বলেন, নিরপরাধ শিশু এবং গর্ভবতী নারীরা খ্রিস্টানদের পরিচালিত হাসপাতাল আক্রান্ত হবেনা এমন বিশ্বাসে সেখানে আশ্রয় নেওয়া সত্ত্বেও ইসরাইলি সামরিক বাহিনী তাদের ওপর বিমান হামলা চালিয়েছে।
এ সময় তিনি উল্লেখ করেন, যে সমস্ত ফিলিস্তিনি বাংলাদেশের মেডিকেলে পড়াশোনা করেছে তারা এখন যুদ্ধক্ষেত্রে কাজ করছে।
রাষ্ট্রদূতদের মধ্যে ছিলেন- সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত এসা ইউসুফ এসা আল দুহাইলান, আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূত রাবাহ লার্বি, মরক্কোর রাষ্ট্রদূত মাজিদ হালিম, কাতারের রাষ্ট্রদূত আলী এম এস আল-কাহতানি, লিবিয়ার রাষ্ট্রদূত আব্দুল মুতালেব এস এম সুলিমান, তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেন, ইরানের রাষ্ট্রদূত মানিস সেন, শাসক উদ্দিন প্রমুখ। ব্রুনাইয়ের হাইকমিশনার হাজি হারিস বিন ওথমান, সংযুক্ত আরব আমিরাতের চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স হামিদ আল তামিমি, ইরাকের চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স মোহানাদ আল দারাজি, ওমানের চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স ফাথিয়া আল বুলুশি, ইন্দোনেশিয়ার চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স রাদেন উসমান এবং মিশরের চার্জ ডি’ অ্যাফেয়ার্স মিনা মাকারি।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।