নিজস্ব প্রতিবেদক :
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও নির্বাচনী ইশতেহার কমিটির আহ্বায়ক ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মূল স্লোগান হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। গত নির্বাচনে আমাদের স্লোগান ছিল ‘গ্রাম হবে শহর’।
শনিবার (১৪ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দলের ইশতেহার কমিটির বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সব নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতি প্রণয়ন করে থাকে। অতীতে আমরা কি করেছি, কি আমাদের অর্জন, সেগুলো আমরা পর্যালোচনা করি। সে আলোকে আমরা সব নির্বাচনের আগে নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন করি। এবারও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্বাচনের জন্য ইশতেহার কমিটি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘অতীতেও তারা নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করেছে। আগুন সন্ত্রাস করেছে, গাড়ি পুড়িয়েছে, রেল লাইন তুলে ফেলেছে, বিদ্যুতের লাইন কেটে দিয়েছে, মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, শত শত মানুষকে তারা অগ্নিদগ্ধ করেছে। এটির আর পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় তার জন্য আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা খুবই সচেতন। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আগের চেয়ে অনেক বেশি সুশৃঙ্খল এবং সক্ষম-দক্ষ। তারা এটি মোকাবিলা করবে।’
রাজ্জাক বলেন, ‘দল হিসেবে আমরা মনে করি, নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। ইনশাল্লাহ আগামী নির্বাচন হবে। যত হুমকি আসুক, যতই ষড়যন্ত্র হোক, আওয়ামী লীগ এ দেশের জনগণকে নিয়ে একটি সুন্দর নির্বাচন জাতিকে উপহার দেবে।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘এসডিজি গোলকে সামনে রেখে আমরা উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশকে ২০৩০ সালের মধ্যে রূপান্তর করতে চাই। সেই লক্ষ্যে আমরা নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন করব। আমরা নির্বাচনী ইশতেহারে আমাদের মোট জিডিপি, জিডিপি গ্রোথ কত হবে, দারিদ্র্য কতটুকু কমিয়ে নিয়ে আসব, মুদ্রাস্ফীতি কততে নিয়ে আসব—এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সার্বিক একটা চাঙ্গা অর্থনীতি; অত্যন্ত গতিশীল এবং সম্প্রসারণমূলক একটি অর্থনীতি নিয়ে আমাদের আগামী নির্বাচনী ইশতেহার রচিত হবে।’
তিনি বলেন, ‘জাতিকে আমরা একটা অত্যন্ত যুগোপযোগী-বাস্তবায়নযোগ্য নির্বাচনী ইশতেহার দেব। সেই ইশতেহার বাস্তবায়নে আমরা জাতির কগ্য নির্বাচন উপহার দেবেন।’
তিনি আরও বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের মাধ্যমে আমরা মানুষের কাছে আধুনিক প্রযুক্তি পৌঁছে দেব। আমরা বলতে চাচ্ছি আমাদের যে উন্নয়নগুলো দৃশ্যমান এর মাধ্যমে আমরা আগামী দিনে আমরা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করব। আগামী দিনের যুবসমাজের জন্য কর্মসংস্থানটাই হবে এবারের স্লোগানের মূল প্রতিপাদ্য।
কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়ে আবদুর রাজ্জাক বলেন, অবকাঠামো আমরা করেছি। রাস্তা ঘাট, বিদ্যুৎ মানে শিল্পায়নের পথে যে বাধা ছিল, সবাই বলতো অবকাঠামো নেই, রাস্তাঘাট নেই এদেশে শিল্প হবে না। বিদেশিরা আসবে না। তারা বিনিয়োগ করবে না। বিনিয়োগের জন্য আমরা পরিবেশ সৃষ্টি করেছি। এখন আমাদের লক্ষ্য হবে যে শিল্পকারখানা স্থাপন করে দেশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিয়ে শিল্পায়নকে ত্বরান্বিত করা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, মানুষের আয় বৃদ্ধি করা। আমাদের শিক্ষিত যে যুবসমাজ, পুরুষ এবং নারী- দুইয়ের জন্যই আমারা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করব।
তিনি বলেন, এবার আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে কর্মসংস্থানের বিষয়টি, শিক্ষিত যুবসমাজের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে। স্মার্ট বাংলাদেশের মাধ্যমে আমরা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবো।
তিনি আরো বলেন, ২০২০ সালে করোনা মহামারি এবং পরে ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে আমাদের অর্থনীতির ওপর বিরাট আঘাত আসে। সেই আঘাতের কারণে আমাদের প্রবৃদ্ধির যেই লক্ষ্যমাত্রা ছিল, সেটি অর্জন করা সম্ভব হয়নি।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, চাল, তেলের দাম সারা বিশ্বে বেড়েছে, এসব মাথায় রেখে আগামী নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করা হবে। খাদ্য, মুদ্রাস্ফীতি, ডিমের দাম ও পেঁয়াজের দাম। এটা খুব সাময়িক, আলুর দাম ও ঠিক হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতও টানাপোড়েনের মধ্যে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারেও কিছু পণ্যের অস্বাভাবিকভাবে দাম বেড়েছে। সেগুলো মোকাবেলা করেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এবারও ৬ ভাগের মতো প্রবৃদ্ধি আমরা অর্জন করেছি। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা আট ভাগ, সেটি সম্ভব হয়নি। অর্থনৈতিক টানাপোড়েন কাটিয়ে উঠতে আমাদের আরও কিছু সময় লাগবে।
এ সময় ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব এবং আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, কমিটির সদস্য এবং দলের উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কমিটির সদস্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম, সংসদ সদস্য সাজ্জাদুল হাসান, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।