গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :
গাজীপুরের সদর উপজেলার ভবানীপুর বাজারে নেতাদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলায় এক প্রতিবন্ধীকে বেধড়ক পিটিয়েছেন যুবলীগ নেতা সোহেল রানা।
বুধবার (১১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ভবানীপুর বাজারে প্রকাশ্যে এ ঘটনা ঘটে।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে মারধর করেছেন সদর উপজেলার ভাওয়ালগড় ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড নয়াপাড়া এলাকার যুবলীগের প্রচার সম্পাদক সোহেল রানা (৩০)। তবে জেলা যুবলীগ বলছে, ওই ওয়ার্ডের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
মারধরের শিকার মানসিক ভারসাম্যহীন লিটনের (৪০) বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি। তিনি ভবানীপুর বাজার এলাকার আশপাশে ঘোরাফেরা করেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লিটন শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। তিনি ভবানীপুর বাজার এলাকার আশপাশে ঘুরাফেরা করেন। বাজারের লোকজনের দেওয়া খাবার খেয়ে তার দিন চলে।
স্থানীয়রা জানান, কাঠের তৈরি ক্রাচ ভর করে চলাফেরা করেন মানসিক ভারসাম্যহীন লিটন। বুধবার সন্ধ্যায় তাঁকে সামনে পেয়ে যুবলীগের নেতা সোহেল রানা ক্র্যাচ কেড়ে নিলে তিনি মাটিতে পড়ে যায়। এ সময় সোহেল রানা লিটনকে ক্র্যাচ দিয়ে বেধড়ক পেটান। পেটানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, ক্রাচের ওপর ভর দিয়ে সড়কে চলাচল করছিলেন লিটন। এ সময় ওই নেতা দৌড়ে এসে লিটনকে বকাঝকা শুরু করেন। পরে লিটনের হাতে থাকা কাঠের তৈরি ক্রাচটি কেড়ে নিলে তিনি সড়কের ওপর পড়ে যান। এ অবস্থায় ক্রাচ দিয়ে লিটনকে বেধড়ক পেটাতে শুরু করে তিনি। এ সময় স্থানীয় এক ব্যক্তি বাধা দিতে চেষ্টা করেন। তখন লিটন মাটিতে বসা অবস্থায় দুই হাত দিয়ে ক্রাচের আঘাত ফেরানোর চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আরও বেশি পেটাতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে স্থানীয় ওই ব্যক্তি চলে যান। এরপর ক্রাচ দিয়ে আরও কয়েকটি আঘাত করে ঘটনাস্থল থেকে সোহেল রানা চলে যান।
অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা সোহেল রানা বলেন, ওই ব্যক্তি মাদকাসক্ত। সে চুরিসহ এলাকার বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। এর আগে সে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের কয়েকজন নেতার ছবি সম্বলিত সাটানো পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে। এ বিষয়ে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলে সে জানায়, এক ব্যক্তির কথায় সে পোস্টার ছিঁড়েছে। পরে ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলে সে অস্বীকার করে। তখন আমি লিটনকে চড়-থাপ্পড় দিয়ে ছেড়ে দেই।
তিনি আরও বলেন, বুধবার সন্ধ্যায় ভবানীপুর বাজারে আমি লিটনের সামনে পড়লে সে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি শুরু করে। তুই আমাকে মেরেছিস বলে আমাকে হুমকি দেয়। পরে আমি তাকে কয়েকটা মেরে ছেড়ে দিয়েছি।
এই যুবলীগ নেতা অভিযোগ করে বলেন, লিটন অনেক খারাপ প্রকৃতির লোক। বেশ কিছুদিন আগে সে গাজীপুর মহানগরীর জয়দেবপুর চৌরাস্তা এলাকায় চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লে স্থানীয়রা তাকে মারধর করে তার পায়ের ওপর গাড়ি তুলে দেয়। এতে তার একটি কেটে ফেলতে হয়। এখন সে লাঠি ভর দিয়ে চলে।
ঘটনার বিষয়ে গাজীপুর জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক এসএম আলতাফ হোসেন বলেন, গাজীপুরের সদর উপজেলার ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি ভেঙে দিয়েছি। তাই বর্তমানে প্রচার সম্পাদক পদে থাকার কোনো সুযোগ নেই। সোহেল হয়তো ভেঙে দেওয়া কমিটির পরিচয় দিয়ে চলেছেন। আমরা বিষয়টির খোঁজ নিয়ে দেখব।
এ বিষয়ে গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. সানোয়ার হোসেন বলেন, একটি ভিডিও আমরা পেয়েছি। এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে বা অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।