Dhaka বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সিরিয়ায় সামরিক একাডেমিতে ড্রোন হামলায় নিহত বেড়ে শতাধিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

সিরিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় শহরে সামরিক একাডেমিতে ড্রোন হামলার ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে। ব্রিটেনভিত্তিক সিরিয়া যুদ্ধের পর্যবেক্ষক সংস্থা দ্য সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, সেখানে শতাধিক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, নিহতদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি সামরিক একাডেমির স্নাতক ডিগ্রিধারী। এছাড়া ১৪ জন বেসামরিক নাগরিকও নিহত হয়েছেন সেখানে।

বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) সিরিয়ার সরকারি সংবাদ সংস্থা সানার খবরে সেনাবাহিনীর বিবৃতির বরাতে জানানো হয়েছে, সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সামরিক একাডেমির স্নাতক ডিগ্রি প্রদানের অনুষ্ঠানকে লক্ষ্য করে ওই হামলা চালায়। এই আয়োজনে ক্যাডেট ও তাদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তাই নিহতদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশু রয়েছে।

সিরিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল কমান্ডের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিকেলে অনুষ্ঠান শেষ হওয়া মাত্র একাধিক ড্রোন থেকে একযোগে হামলা চালানো হয়। এই হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে কড়া জবাব দেওয়া হবে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

যুদ্ধ পর্যবেক্ষক এবং সিরিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী উদ্বৃতি দিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদ সংস্থা আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই ড্রোন হামলায় কমপক্ষে ১০০ জন নিহত এবং ২৪০ জন আহত হয়েছেন।

বিবিসির খবর বলছে, হামলার পেছনে ‘আন্তর্জাতিক শক্তির মদদ রয়েছে এমন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ জড়িত বলে অভিযোগ করেছে সিরিয়ার সেনাবাহিনী। তবে এখন পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেনি।

সিরিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসান আল-গাবাশ অবশ্য হামলায় নিহতের সংখ্যা আরও কম বলেছেন। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে তিনি বলেছেন, হামলায় ছয় শিশুসহ ৮০ জন নিহত হয়েছেন। তবে আহত হয়েছেন প্রায় ২৪০ জন। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সিরিয়ার মানবাধিকার পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ওই একাডেমির মিলনায়তনে সেনাসদস্যদের সনদ প্রদান অনুষ্ঠান ছিল। দেশটির সেনাবাহিনী ও কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন নেতৃস্থানীয় কর্মকর্তা সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। অনুষ্ঠানটি শেষ হওয়ার আনুমানিক ২০ মিনিটের মধ্যে ড্রোন হামলা হয় সেই একাডেমিতে।

সিরিয়ার সেনাবাহিনী এর আগে বলেছিল, বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠানটি শেষ হওয়ার পরপরই বিস্ফোরক বোঝাই ড্রোনটি সেখানে হামলা চালায়। এক বিবৃতিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এই হামলার জন্য ‘পরিচিত আন্তর্জাতিক বাহিনীর সমর্থনপুষ্ট’ যোদ্ধাদের অভিযুক্ত করেছে।

এদিকে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস হোমসে ড্রোন হামলার পাশাপাশি উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় ‘প্রতিশোধমূলক গোলাবর্ষণের খবরে’ ‘গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন’ বলে তার মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন।

অসমর্থিত সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, সিরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আলী মাহমুদ আব্বাস বৃহস্পতিবারের এই হামলায় আহত হয়েছেন। তবে সিরিয়ার একটি নিরাপত্তা সূত্র এবং বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে দামেস্ক সরকারকে সমর্থনকারী আঞ্চলিক জোটের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সিরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন কিন্তু হামলার কয়েক মিনিট আগে চলে যান।

উল্লেখ্য, বাশার আল আসাদের পদত্যাগের দাবিতে সিরিয়ায় ২০১১ সালে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। কিন্তু জনগণের সেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমনে ব্যাপক সহিংসতা চলায় দেশটির সরকারি বাহিনী। সেই সহিংসতার জেরেই জন্ম নেয় একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং একসময় গৃহযুদ্ধ শুরু হয় সরকারি বাহিনী ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে, যা ইতোমধ্যে কেড়ে নিয়েছে লক্ষাধিক মানুষের প্রাণ।

তবে ১২ বছরের গৃহযুদ্ধে সিরিয়ার ভূখণ্ডের কিছু অংশ বিদ্রোহীদের হাতে চলে গেলেও বাশার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করা যায়নি। রাশিয়া ও ইরানের সমর্থন নিয়ে তিনি এখনও বহাল তবিয়তেই দেশটির প্রেসিডেন্টের পদে রয়েছেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ডাকসু নির্বাচনে জয়ী প্রথম দম্পতি রায়হান-সালমা

সিরিয়ায় সামরিক একাডেমিতে ড্রোন হামলায় নিহত বেড়ে শতাধিক

প্রকাশের সময় : ০২:৩৬:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ অক্টোবর ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

সিরিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় শহরে সামরিক একাডেমিতে ড্রোন হামলার ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে। ব্রিটেনভিত্তিক সিরিয়া যুদ্ধের পর্যবেক্ষক সংস্থা দ্য সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, সেখানে শতাধিক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, নিহতদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি সামরিক একাডেমির স্নাতক ডিগ্রিধারী। এছাড়া ১৪ জন বেসামরিক নাগরিকও নিহত হয়েছেন সেখানে।

বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) সিরিয়ার সরকারি সংবাদ সংস্থা সানার খবরে সেনাবাহিনীর বিবৃতির বরাতে জানানো হয়েছে, সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সামরিক একাডেমির স্নাতক ডিগ্রি প্রদানের অনুষ্ঠানকে লক্ষ্য করে ওই হামলা চালায়। এই আয়োজনে ক্যাডেট ও তাদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তাই নিহতদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশু রয়েছে।

সিরিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল কমান্ডের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিকেলে অনুষ্ঠান শেষ হওয়া মাত্র একাধিক ড্রোন থেকে একযোগে হামলা চালানো হয়। এই হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে কড়া জবাব দেওয়া হবে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

যুদ্ধ পর্যবেক্ষক এবং সিরিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী উদ্বৃতি দিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদ সংস্থা আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই ড্রোন হামলায় কমপক্ষে ১০০ জন নিহত এবং ২৪০ জন আহত হয়েছেন।

বিবিসির খবর বলছে, হামলার পেছনে ‘আন্তর্জাতিক শক্তির মদদ রয়েছে এমন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ জড়িত বলে অভিযোগ করেছে সিরিয়ার সেনাবাহিনী। তবে এখন পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেনি।

সিরিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসান আল-গাবাশ অবশ্য হামলায় নিহতের সংখ্যা আরও কম বলেছেন। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে তিনি বলেছেন, হামলায় ছয় শিশুসহ ৮০ জন নিহত হয়েছেন। তবে আহত হয়েছেন প্রায় ২৪০ জন। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সিরিয়ার মানবাধিকার পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ওই একাডেমির মিলনায়তনে সেনাসদস্যদের সনদ প্রদান অনুষ্ঠান ছিল। দেশটির সেনাবাহিনী ও কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন নেতৃস্থানীয় কর্মকর্তা সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। অনুষ্ঠানটি শেষ হওয়ার আনুমানিক ২০ মিনিটের মধ্যে ড্রোন হামলা হয় সেই একাডেমিতে।

সিরিয়ার সেনাবাহিনী এর আগে বলেছিল, বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠানটি শেষ হওয়ার পরপরই বিস্ফোরক বোঝাই ড্রোনটি সেখানে হামলা চালায়। এক বিবৃতিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এই হামলার জন্য ‘পরিচিত আন্তর্জাতিক বাহিনীর সমর্থনপুষ্ট’ যোদ্ধাদের অভিযুক্ত করেছে।

এদিকে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস হোমসে ড্রোন হামলার পাশাপাশি উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ায় ‘প্রতিশোধমূলক গোলাবর্ষণের খবরে’ ‘গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন’ বলে তার মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন।

অসমর্থিত সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, সিরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আলী মাহমুদ আব্বাস বৃহস্পতিবারের এই হামলায় আহত হয়েছেন। তবে সিরিয়ার একটি নিরাপত্তা সূত্র এবং বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে দামেস্ক সরকারকে সমর্থনকারী আঞ্চলিক জোটের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সিরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন কিন্তু হামলার কয়েক মিনিট আগে চলে যান।

উল্লেখ্য, বাশার আল আসাদের পদত্যাগের দাবিতে সিরিয়ায় ২০১১ সালে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। কিন্তু জনগণের সেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমনে ব্যাপক সহিংসতা চলায় দেশটির সরকারি বাহিনী। সেই সহিংসতার জেরেই জন্ম নেয় একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং একসময় গৃহযুদ্ধ শুরু হয় সরকারি বাহিনী ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে, যা ইতোমধ্যে কেড়ে নিয়েছে লক্ষাধিক মানুষের প্রাণ।

তবে ১২ বছরের গৃহযুদ্ধে সিরিয়ার ভূখণ্ডের কিছু অংশ বিদ্রোহীদের হাতে চলে গেলেও বাশার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করা যায়নি। রাশিয়া ও ইরানের সমর্থন নিয়ে তিনি এখনও বহাল তবিয়তেই দেশটির প্রেসিডেন্টের পদে রয়েছেন।