নিজস্ব প্রতিবেদক :
সরকার আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম বেঁধে দিলেও এখনও উত্তাপ কমেনি নিত্যপণ্যেও বাজার। গত দুই সপ্তাহ রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। একই সঙ্গে কিছু পণ্য আমদানির অনুমতিও মিলেছে। এসব কারণে সাময়িকভাবে কিছু ভোগ্যপণ্যের দাম সামান্য কমলেও এখন আবার বাড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সরবরাহ কমায় সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন করে বেড়েছে কাঁচা মরিচ, বিভিন্ন সবজি ও মাছের দাম। সব মিলিয়ে বাজারে ভোক্তাদের জন্য কোনো সুখবর নেই বললেই চলে।
শুক্রবার (৬ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এদি প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে ছিল ৪২ থেকে ৪৫ টাকা। খোলা বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে আবারও ৯০ টাকায় উঠেছে। যা গত সপ্তাহে ৮০ টাকায় নেমেছিল। পাশাপাশি আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খুচরায় প্রতি কেজি আলু ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা আর দেশি পেঁয়াজ ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। সে হিসাবে বাজারে এক কেজি আলুতে অন্তত ১২ টাকা আর প্রতি কেজি পেঁয়াজে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। ফার্মের ডিমের হালি ৪৮ টাকা বেঁধে দিলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।
সপ্তাহের ব্যবধানে কাঁচা বাজারগুলোতে সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। বড় আকারের গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়, যা আগে ছিল ৬০ থেকে ৮০ টাকা। করলা, বরবটির দাম ছুঁয়েছে ১০০ টাকা। দরদাম করে নিলেও ৮০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না। নতুন শিম বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে। ছোট ফুলকপি ৬০ টাকার কমে মিলছে না। এছাড়া ঝিঙে, চিচিঙ্গা ও ধুন্দুলের কেজিও ৬০ থেকে ৮০ টাকা। পটল, ঢেঁড়সের কেজিও ৬০ টাকা। তবে সস্তার সবজি হিসেবে পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে।
অন্যদিকে গত কয়েকদিন ধরেই কাঁচা মরিচের দাম বড় ব্যবধানে ওঠানামা করছে। শুক্রবার বিভিন্ন বাজারে কোথাও ২৪০ টাকা আবার কোথাও ২৮০ টাকা কেজি দরে এ পণ্যটি বিক্রি হতে দেখা গেছে।
মাছের বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতারা রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। নদী ও হাওরের মাছ সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে আগে থেকেই। চাষের মাছের দামও এখন বেশ চড়া। এক্ষেত্রেও সরবরাহ সংকট এবং বাজারে ইলিশ কম থাকার কথা বলছেন বিক্রেতারা।
আগে এক কেজি ছোট ও মাঝারি আকারের পাঙাশের দাম ছিল ১৮০ থেকে ২২০ টাকা, একই মাছ এখন বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকায়। দাম বেড়ে তেলাপিয়ার কেজি ২৫০ টাকা ছাড়িয়েছে। কোথাও কোথাও ৩০০ টাকায়ও বিক্রি হতে দেখা গেছে। চাষের কই, পাবদা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪৫০ টাকার বেশি দরে। ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের চাষের রুই-কাতলার দাম হাঁকানো হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি। এক কেজির বেশি ওজনের হলে ৪০০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। আর বড় মাছের কেজি ছুঁয়েছে ৫০০ টাকা পর্যন্ত।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, কেজিতে তিনটি হবে- এমন আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি দরে। যা গত বছর একই সময়ে ৪০০ টাকা ছিল। আকারে একটু বড় ইলিশ দামেও বেশি। একেকটি ৮০০ গ্রাম ওজনের এক কেজি ইলিশের দাম চাওয়া হচ্ছে ১২০০ টাকার বেশি। এক কেজি সাইজের ইলিশের কেজি দেড় হাজার টাকা ছাড়িয়েছে। আর কেজির বেশি ওজনের হলে দুই হাজার টাকা বেশি দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা। দর কষাকষি করে হয়তো কিছুটা কমে কেনা যাচ্ছে। তবে তা সাধারণ ভোক্তাদের একেবারেই নাগালের বাইরে।
খাসির মাংস আগের মতোই ১১০০ টাকা ও গরুর মাংস ৭৫০-৭৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, লেয়ার মুরগি ৩১৫ টাকা, পাকিস্তানি ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এবং দেশি মুরগি আগের মতোই ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মুরগির দাম বাড়ার প্রসঙ্গে মুরগি ব্যবসায়ী পাভেল হোসেন বলেন, মুরগির দাম প্রতিদিনই কমে-বাড়ে। পাইকারি বাজার থেকে একেক দিন একেক দর নির্ধারণ হয়। এর বেশি কিছু আমি জানি না। পাইকারি বাজার থেকে মুরগি কিনে এনে দোকানে বিক্রি করি।
বর্তমান ঊর্ধ্বগতির বাজারে নিম্ন থেকে মধ্যবিত্তরা মুরগির মাংসটি বেশি কিনে থাকেন। যে মাংস একটা সময় ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি ধরে পাওয়া যেত, সেটি এখন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত হয়েছে। এতে করে বেকায়দায় পড়েছেন ওইসব মানুষেরা।
এদিকে দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা বেড়েছে। ফলে দেশি পেঁয়াজের দাম দাঁড়িয়েছে প্রতি কেজি ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। দুই দিন আগেও আমদানি করা পেঁয়াজ ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে সরকার গত ১৪ সেপ্টেম্বর যে তিনটি পণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছিল, তার একটি দেশি পেঁয়াজ। তবে দাম বেঁধে দেওয়ার পরও সরকার নির্ধারিত ৬৪ থেকে ৬৫ টাকায় দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে না।
সরকারি সংস্থার বাজারদরের হিসাবেও দেখা গেছে, বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়তির দিকে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গত এক সপ্তাহে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ৩ শতাংশ বেড়ে ৮০ থেকে ৯০ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ৪ শতাংশের মতো বেড়ে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দেশি পেঁয়াজের পাশাপাশি ডিম ও আলুর দাম বেঁধে দিয়েছিল সরকার। ডিমের ডজন ১৪৪ টাকায় নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। আলুর খুচরা দাম প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায় বেঁধে দেওয়া হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। অন্যদিকে কোনো (মোটা, মাঝারি ও চিকন) চালের দাম কমেনি।
বাজারে খোলা চিনি প্রতি কেজি ১৩৫-১৪০ টাকা। বাজারে খোলা আটার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। প্যাকেট আটার কেজি ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২ কেজির প্যাকেট আটা বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। এসব বাজারে দেশি মসুরের ডালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা। ইন্ডিয়ান মসুরের ডালের কেজি ৯৫-১০০ টাকা।
সয়াবিন তেলের লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৭৮ টাকা। এসব বাজারে লবণের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকা।
কামরুল ইসলাম নামে এক বিক্রেতা বলেন, গত কয়েকদিন বৃষ্টির কারণে ঢাকার বাজারগুলোতে পণ্যের সরবরাহ কম। তাতে সবজি ও মাছের দাম বেড়েছে। এছাড়া কাঁচা মরিচের বাজারেও অস্থিরতা কাটেনি। অন্যসব সবজির মত আলুর দামও বাড়তি। পেঁয়াজের সংকট দিন দিন তীব্র হচ্ছে। এ পণ্যটির দামও সামান্য বেড়েছে। পাশাপাশি সপ্তাহের ব্যবধানে মাছের দামও ঊর্ধ্বমুখী।
বৃষ্টির কারণে সরবরাহ সংকটের কথা জানিয়ে রামপুরা বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী ইউনুস হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) প্রায় সারারাত থেমে থেমে বৃষ্টি, ভোরেও ছিল। এতে রাজধানীর সর্ববৃহৎ পাইকারি পণ্যের বাজার কারওয়ান বাজারের সবজির আড়তগুলোতে সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে। অনেক আড়তে ভোর পর্যন্ত সবজির চালান আসেনি। এ কারণে সবজির দাম বাড়তি।