স্পোর্টস ডেস্ক :
চার বছর আগে বিশ্বকাপে দুই দল যখন সর্বশেষ ম্যাচটি খেলেছিল, ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের মাঝে পার্থক্য গড়তে সহায়তা নিতে হয়েছিল ‘বাউন্ডারি কাউন্টব্যাক’ নামের অদ্ভুত এক নিয়মের। ফাইনালে সুপার ওভার টাই হওয়ার পর যে নিয়মের কারণে কিউইদের হৃদয় ভেঙে শিরোপা জিতেছিল ইংলিশরা। চার বছর পর আহমেদাবাদে বিশ্বকাপ শুরুর ম্যাচে দুই দলের হারজিতের ব্যবধান বোঝা গেল মোটা দাগেই। বোলারদের সম্মিলিত পারফরম্যান্সের পর ডেভন কনওয়ে ও রাচিন রবীন্দ্রর জোড়া সেঞ্চুরিতে ইংল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করলেন নিউজিল্যান্ড।
২৮৩ রানের লক্ষ্যে নিউজিল্যান্ডের জয়ের ব্যবধান ৯ উইকেটের। সেটিও ৮২ বল বাকি থাকতেই। উদ্বোধনী ম্যাচে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের দর্শকসংখ্যা প্রত্যাশা মেটাতে পারেনি। নিউজিল্যান্ডও ম্যাচটিকে বানিয়ে ফেলেছে একপেশে, ম্যাড়মেড়ে। ওয়ানডে বিশ্বকাপের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে গত আসরের রানার্সআপ দলের দাপট ছিল এমনই। কনওয়ে ও রবীন্দ্র তো প্রায় ফিরিয়ে দিয়েছেন সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের দুর্দান্ত রান তাড়ার স্মৃতিও। কনওয়ে অপরাজিত ছিলেন ১২১ বলে ১৫২ রানে, রবীন্দ্র ১২৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন ৯৬ বলে।
২৮৩ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দেয় ইংল্যান্ড। ক্রিকেট আধুনিক যুগে এই রান পাড়ি দিতে খুব একটা বেগ পাওয়ার কথা না। তবে নিউজিল্যান্ড তা আরও হেসেখেলেই পাড়ি দিল। ৮২ বল হাতে রেখেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় তারা।
কনওয়ে ও রাচিনের এটাই প্রথম বিশ্বকাপ। যদিও কনওয়ে বেশ পরীক্ষিত ব্যাটার। তবে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করা রাচিন যেন বিশ্বকে আগামীর বার্তা দিলেন। চোটের কারণে না খেলা নিয়মিত অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসনের অভাব একদমই বুঝতে দিলেন না বাঁহাতি এই ব্যাটার।
রান তাড়ায় নেমে দলীয় ১০ রানেই ধাক্কা খায় নিউজিল্যান্ড। গোল্ডেন ডাক মেরে স্যাম কারানের শিকার হন ওপেনার উইল ইয়াং। পরের গল্পটা কেবলই কনওয়ে-রাচিন ও ইংলিশ বোলারদের হতাশার।
দ্বিতীয় উইকেটে রাচিনকে সঙ্গে নিয়ে অবিচ্ছিন্ন ২৭৩ রানের জুটি গড়েন কনওয়ে। বিশ্বকাপ তো বটেই ওয়ানডেতে দ্বিতীয় উইকেটে এটাই নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ রানের জুটি। পঞ্চম সেঞ্চুরি ও ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস খেলে ১২১ বলে ১৯ চার ও ৩ ছক্কায় ১৫২ রানে অপরাজিত থাকেন কনওয়ে। অন্যদিকে ৯৬ বলে ১১ চার ও ৫ ছক্কায় অপরাজিত ১২৩ রানের ইনিংস উপহার দিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন রাচিন।
এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ইংল্যান্ডের হয়ে আজ ব্যাটিং ইনিংসের সূচনা করেন দুই ওপেনার জনি বেয়ারস্টো এবং ডেভিড মালান। এ দুজন মিলে কিউই বোলারদের বিপক্ষে দেখেশুনেই খেলা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচে দুই ওপেনার মিলে গড়েন ৪০ রানের জুটি।
তবে ইংল্যান্ডের এ জুটি ম্যাট হেনরির আঘাতে আর বেশি দূর এগোতে পারেনি। অষ্টম ওভারে হেনরির বলে ক্যাচ তুলে সাজঘরে ফিরেন মালান। আউট হবার আগে ২৪ বল খেলে করেছেন ১৪ রান। ইংলিশ এই ওপেনার সাজঘরে ফেরার পর ক্রিজে বেয়ারস্টোর সঙ্গী হন জো রুট।
মালান সাজঘরে ফেরার পর বেয়ারস্টোর সঙ্গে জুটি গড়ার পথে ছিলেন রুট। তবে এ জুটি স্থায়ী হয়নি। বেয়ারস্টো ফিরে যান স্যান্টনারের বলে ডেরিল মিচেলের ক্যাচ হয়ে। সাজঘরে ফেরার আগে ইংলিশ এই ওপেনার ৪ চার এবং ১ ছয়ে করেছেন ৩৩ রান।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে ক্রিজে নেমে আগ্রাসী ব্যাটিং শুরু করেন হ্যারি ব্রুক। এই টপ অর্ডার ব্যাটার দ্রুত রান তুলতে গিয়ে রাচিন রবীন্দ্রর ঘূর্ণি জালে আটকা পড়েন। ১৬ বলে ২৫ রান করে দলীয় ৯৪ রানের সাজঘরে ফিরেন তিনি। এরপর ক্রিজে রুটের সঙ্গী হন মইন আলী। তবে তিনিও আজ পারেননি দলের হাল ধরতে। রুটের সঙ্গে ২৪ রানের জুটি গড়ে ব্যক্তিগত ১১ রানেই সাজঘরে ফিরেন তিনি।
এদিকে একপ্রান্তে যাওয়া আসার খেলার চললেও অপরপ্রান্ত ঠিকই আগলে রেখেছেন রুট। দেখেশুনে খেলে ঠিকই তুলে নিয়েছেন নিজের ব্যক্তিগত অর্ধশতক। মইন ফেরার পর মাঠে আসা অধিনায়ক জস বাটলারের সঙ্গে গড়েছেন ৭০ রানের জুটি। এ জুটি গড়তে আজ রুটকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন ইংলিশ কাপ্তান। ছিলেন ব্যক্তিগত অর্ধশতকের পথে। তবে ফিফটি থেকে সাত রান দূরে থাকতেই হেনরির বলে লাথামের ক্যাচ হয়ে সাজঘরে ফিরতে হয়েছে তাকে।
এরপর ইংল্যান্ডের হয়ে ব্যাট হাতে হাল ধরতে পারেননি আর কেউই। ওদিকে এবারের আসরে প্রথম ফিফটি তুলে নেয়ার রুটও থেমেছেন ৭৭ রানেই। ৮৬ বলে ৪ চার এবং ১ ছয়ে এ রান করেছেন তিনি।
৪২তম ওভারে ইংল্যান্ড ২২৯ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর লোয়ার অর্ডারের স্যাম কারান, ক্রিস ওকস, আদিল রশিদ আর মার্ক উডের ব্যাটে চড়ে ২৮২ রানের চ্যালেঞ্জিং পুঁজিই গড়েছে ইংল্যান্ড। কারান ১৪, ওকস ১১, রশিদ ১৫ আর উড করেন ১৩ রান। নিউজিল্যান্ডের ম্যাট হেনরি ৪৮ রানে নেন ৩টি উইকেট। দুটি করে উইকেট শিকার মিচেল স্যান্টনার আর গ্লেন ফিলিপসের।