নিজস্ব প্রতিবেদক :
জনপ্রিয়দের মনোনয়ন দেওয়া হবে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আওয়ামী লীগ যেহেতু নির্বাচনে বিশ্বাসী, আমরা বহু আগে থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। যারা সম্ভাব্য প্রার্থী তারাও প্রস্তুতি নিয়েছে এবং নিচ্ছে। আমাদের দলের একটা নিজস্ব মনোনয়ন বোর্ড আছে এবং নিজস্ব জরিপ টিম রয়েছে। নানান সূত্র থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা কোন পর্যায়ে তা যাচাই-বাছাই করেন। যেখানে যে প্রার্থী জনপ্রিয় তাকে সেখানেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। তিনি দলের কতবড় নেতা, তিনি সরকারের কতবড় মন্ত্রী তা বিবেচনা করা হবে না। শুধু বিবেচনা করা হবে তার কত জনপ্রিয়তা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে আয়োজিত ‘টেকসই অর্থের জন্য পুঁজি বাজার’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির হিসেবে বক্তব্যে দেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, করোনার মধ্যে পৃথিবী যখন থমকে গেছে, মানুষ ঘরে আবদ্ধ- তখন আমাদের মাথাপিছু আয় ভারতকে ছাড়িয়ে গেলো। এটা নিয়ে তখন ভারতে হৈচৈ শুরু হয়ে গেলো। সামাজিক অঙ্গন, টেলিভিশন , টকশোতে হৈচৈ এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা শুরু হলো। পাকিস্তানের পার্লামেন্টে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে গেলো। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী কয়েক দফা স্বীকার করলেন- বাংলাদেশ আমাদের থেকে অনেক এগিয়ে। অথচ আমাদের দেশে প্রশংসার ঢেউ দেখতে পাই না। যেভাবে প্রশংসা হওয়া দরকার সেভাবে হয় না। আর যারা সেমিনার, টেলিভিশনের আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন, তাদের কাছ থেকেও আমরা প্রশংসা দেখতে পাই না।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আজ দেশের যে উন্নয়ন হয়েছে, সব মানুষের যে ভাগ্যের উন্নয়ন হয়েছে তা আমরা যারা এই উন্নয়নের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি তারা অনুভব করতে পারি না। আজ থেকে ১৫ বছর আগে যে মানুষ বিদেশে গেছেন তিনি এখন দেশে এসে আর এই দেশকে চিনতে পারেন না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে মানি মার্কেট ও ক্যাপিটাল মার্কেটের বিরাট অবদান রয়েছে। অর্থনীতি সচল রাখতে হলে এর ভূমিকা অগ্রগণ্য এবং এই দুইটি যদি একসঙ্গে কাজ করে তাহলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অত্যন্ত সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। আমাদের দেশে মানি মার্কেটের অনেক গ্রোথ হয়েছে। এটা কখনোই হতো না যদি না বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ভালো না হতো। ক্যাপিটাল মার্কেটের দিকে যদি আমরা তাকাই, সেখানেও অনেক ভালো গ্রোথ হয়েছে।
সরকারের অতীত ও বর্তমানের বিভিন্ন অর্থনৈতিক উন্নয়নচিত্র তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, আমাদের অর্থনীতির আকার গত ১৫ বছরে প্রায় ৫ গুণ বেড়েছে। অপরদিকে বাজেটের আকার বেড়েছে প্রায় ১২ গুণ। আমরা যখন ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি তখন বাজেটের আকার ছিল ৮৮ হাজার কোটি টাকা, বাস্তবায়িত হয় ৮১ হাজার কোটি টাকার বাজেট। এখন তা ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৬৭৫ কোটি সামথিং। বাংলাদেশে যেখানে বাজেটের আকার বেড়েছে সেখানে বোঝা যায় সমৃদ্ধি এসেছে। ২০০৬ সালে আমাদের মাথাপিছু আয় ছিল ৫০৭ ডলার, ২০০৭ সালে ছিল ৬০০ ডলার। এখন তা ২ হাজার ৮৫৯ ডলার। যদি ডলারের ডিভ্যালুয়েশন না হতো তাহলে এটা তিন হাজার ছাড়িয়ে যেতো।
আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আজ দেশের যে উন্নয়ন হয়েছে, সব মানুষের যে ভাগ্যের উন্নয়ন হয়েছে- তা আমরা যারা এই উন্নয়নের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি তারা অনুভব করতে পারি না। আজ থেকে ১৫ বছর আগে যে মানুষটি বিদেশে গেছেন তিনি এখন দেশে এসে আর এই দেশকে চিনতে পারেন না। যখন গ্রামে যান তখন তার গ্রামকে চিনতে পারেন না। গ্রামে আগের কুঁড়েঘরগুলো আর নাই, হারিয়ে গেছে। সবগুলোই টিনের চালা, আধা পাকা ও পাকা বাড়িতে রূপান্তরিত হয়েছে। গ্রামের যে মেঠোপথ সেখানে পিচ ঢালা পথ তৈরি হয়েছে। তখন তিনি বুঝতে পারেন দেশটা কোথায় গেছে।
তিনি বলেন, আমি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে যখন প্রথম যাচ্ছিলাম তখন আমার ড্রাইভার বলছিলেন- স্যার দুবাই দুবাই মনে হচ্ছে। আর একজন বলছিলেন- স্যার আমরা সিনেমায় ইউরোপ, আমেরিকার যে শহরগুলো দেখি সেরকম মনে হচ্ছে। এটিই বদলে যাওয়া বাংলাদেশ এবং এটি সম্ভব হয়েছে নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকার কারণে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যদি না থাকতো তাহলে কি পদ্মা সেতু নিজেদের টাকায় করা সম্ভব হতো? রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যদি না থাকতো তাহলে আজকে মাথাপিছু আয় ৬০০ ডলার থেকে ৩ হাজার ডলারে নিয়ে যাওয়া কি সম্ভব হতো? আজকে পাকিস্তানের দিকে তাকিয়ে দেখুন সেখানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকার কারণে কিছুদিন আগে পর্যন্ত তারা দেউলিয়া হওয়ার পর্যায়ে ছিল, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
‘কোথায় স্যাংশন, কোথায় ভিসানীতি? তলে তলে সব আপস হয়ে গেছে, আর কোনো চিন্তা নেই, যথাসময়ে নির্বাচন হবে।’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমাদের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। আমরা এই সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের সাথে যেমন দিল্লির সুসম্পর্ক, তেমন ওয়াশিংটনের সুসম্পর্ক এবং ব্রাসেলসের ও সুসম্পর্ক। কিন্তু বিরোধীদল বিশেষ করে বিএনপি বিদেশিদের দিয়ে আমাদের দেশের ওপর নাক গলানোর জন্য যে অপচেষ্টা চালিয়েছে তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সাধারণ সম্পাদক এই কথাগুলো বলেছেন।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের দেশের সাথে যেন কোনো কোনো দেশের সুসম্পর্ক নষ্ট হয়, তার জন্য অনেক অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। কিন্তু এতে কোনো লাভ হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে যখন ওয়াশিংটন গিয়েছিলেন তখন তার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা উপদেষ্টার বৈঠক হয়েছে। এটাই প্রমাণ করে আমাদের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কোন পর্যায়ে।
তিনি আরও বলেন, গত কয়েকবছর ধরে বিএনপি এবং তার কিছু মিত্ররা আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশিদের কাছে বলে আসছে। এর ফলে আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশিরা নাক গলানোর সুযোগ পেয়েছে। বিদেশিদের কাছে বারেবারে গিয়ে আমাদের দেশকে ছোট করেছে। সেই প্রেক্ষাপটে আমাদের সাধারণ সম্পাদক (ওবায়দুল কাদের) কিছু কথা বলেছেন। প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশের পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে, সবার সাথে সুসম্পর্ক; কারো সাথে বৈরিতা নয়।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের সভাপতি ও বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইদুর রহমান।
‘টেকসই অর্থের জন্য পুঁজিবাজার’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি মো. রিয়াদ মতিন। মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক ইসতার মহল, শান্তা ইক্যুইটি লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান আরিফ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তারেক। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু।