নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার আরেকটি পদক্ষেপ। আমরা মনে করি যে, আজকে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা নিউক্লিয়ার যুগে প্রবেশ করছি।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে গণভবনে আয়োজিত বাংলাদেশের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি ‘ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ বা ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার জন্য আমরা পৃথক আইন প্রণয়নের মাধ্যমে নিউক্লিয়ার পাওয়ারপ্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি আমরা গঠন করেছি।
তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা নিউক্লিয়ার যুগে প্রবেশ করছি। আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশ, পরীক্ষিত, রাশান ফেডারেশন এবং প্রেসিডেন্ট এখানে উপস্থিত থেকে বাংলাদেশকে সম্মানিত করেছেন। আমাদের সবাইকে সম্মানিত করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আজ বাংলাদেশের জনগণের জন্য অত্যন্ত গর্বের দিন এবং আনন্দের দিন। আওয়ামী লীগ সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় পারমাণবিক জ্বালানি গ্রহণের মধ্য দিয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আজ সফল পরিণতি লাভ করছে।
তিনি বলেন, আজ থেকে বাংলাদেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশের কাতারে সামিল হলো এবং বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী নিউক্লিয়ার ক্লাবের কার্যকর সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হলো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেকোনো প্রকার দুর্যোগে যাতে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেই দিকটি মাথায় রেখে এর উন্নয়ন ও নির্মাণ কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। তাছাড়া, ব্যবহৃত জ্বালানি ব্যবস্থাপনার জন্য আমরা রাশিয়ান ফেডারেশনের সঙ্গে চুক্তি সই করেছি।
তিনি বলেন, (রাশিয়ার) প্রেসিডেন্ট পুতিনের কাছে শুনেছি, ২০২৬ সালের মধ্যেই আমাদের দ্বিতীয় ইউনিট চালু হবে। ২০২৪ সালের মধ্যেই প্রথম ইউনিট (চালু হবে)। আমরা সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছি।
এই বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ‘পরিবেশবান্ধব’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, অচিরেই প্রথম ইউনিট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। আর এই বিদ্যুৎটা হচ্ছে অত্যন্ত পরিবেশবান্ধব।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালে প্রকল্পটি (রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র) আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছি। এখন পর্যন্ত আপনার (পুতিন) সহযোগিতায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে যারা উপস্থিত হয়েছেন তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আজ বাংলাদেশের জনগণের জন্য অত্যন্ত গর্বের দিন। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রচেষ্টায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সফলতার মুখ দেখছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু। বন্ধুপ্রতিম দেশ রাশিয়ার সহযোগিতায় আমরা সেই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করেছি।
তিনি আরও বলেন, ১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি তখন সবার জন্য বিদ্যুৎ দেব— এ প্রতিশ্রুতি নিয়ে আমি কাজ শুরু করি। জ্বালানিতে পারমাণবিক বিদ্যুৎ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করি। যদিও সেসময় কাজগুলো শেষ করতে পারিনি। ২০০৮ সালে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করেই এই প্রকল্পটা আমরা হাতে নিই।
পারমাণবিক শক্তি শান্তিরক্ষায় ব্যবহার করব উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার সম্পূর্ণ নির্মূল এবং পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ পদক্ষেপ বাস্তবায়নের প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করছি। আমরা বাংলাদেশে পারমাণবিক শক্তি নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করেছি। একটি স্বাধীন পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করেছি। এই কর্তৃপক্ষ আইএইএ’র (আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি কমিশন) সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রেখে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতিটি স্তরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।
এ সময় রাশিয়ার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের গুরুত্বপূর্ণ ধাপে উত্তরণ উপলক্ষ্যে আমি সবাইকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। এ প্রকল্পে আমাদের দুই দেশের স্বার্থ জড়িত এবং এটি পরস্পরের সহযোগিতার ক্ষেত্রকে আরও গভীর করেছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশ আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু। আমাদের সম্পর্ক সমতা, পরস্পরের জন্য শ্রদ্ধা ও পরষ্পরের স্বার্থ মেনে নেওয়ার ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে সহায়তার মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এরপর থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাশিয়া কাজ করছে। বড় শিল্প ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়া সহায়তা করেছে। গত বছর কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করেছে দুই দেশ।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালে রোসাটম বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে কাজ শুরু করে। গবেষণার কাজ শেষ হওযার পর ২০১৭ সালে চুল্লির প্রথম ঢালাইয়ের কাজ শুরু হয়। দুই ইউনিট বিশিষ্ট ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এই কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের উৎপাদন ২৪ সালে এবং দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদন ২০২৬ সালে শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। পূর্ণমাত্রায় উৎপাদনে যাওয়ার পর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদার ১০ শতাংশ পূরণে সক্ষম হবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কার্বন নির্গমন করবে না, যা সামগ্রিক অর্থে একটি ভালো দিক।
পুতিন বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে ২০ হাজারের বেশি মানুষ কাজ করছে, যাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশি। তাছাড়া ভারতীয় বন্ধুরাও আমাদের সাহায্য করছে। দুই দেশের কর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই কাজ শেষ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রকল্পের পরিচিতি তুলে ধরেন পরমাণু বিজ্ঞানী ও প্রকল্প পরিচালক ড. মো. শৌকত আকবর। এরপর পারমাণবিক জ্বালানি উৎপাদন ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রথম ব্যাচের হস্তান্তর সম্পর্কিত ভিডিও প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আলী হোসেন। এরপর ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি এজেন্সির মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রসি। এরপর রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ বক্তব্য রাখেন।