আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
এবার ডেঙ্গু টিকার অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। জাপানের ওষুধ ও টিকা প্রস্তুতকারী কোম্পানি তাকেদা ফার্মাসিউটিক্যালসের ডেঙ্গু টিকা ‘কিউডেঙ্গা’কে জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য ছাড়পত্র দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সোমবার (২ অক্টোবর) এই ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে বলে এক ব্রিফিংয়ে নিশ্চিত করেছেন সংস্থার মহাপরিচালক ও নির্বাহীপ্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস।
মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় ডব্লিউএইচও’র সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়ে গেব্রিয়েসুস বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি এমন অঞ্চলগুলোতে ৬ থেকে ১৬ বছরবয়সীদের ক্ষেত্রে এই টিকা ব্যবহার করা যাবে।
অবশ্য ডব্লিউএইচও’র আগেই জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য কিউডেঙ্গাকে ছাড়পত্র দিয়েছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইন্দোনেশিয়া ও ব্রাজিল।
প্রাণঘাতী ডেঙ্গু ভাইরাসের একমাত্র বাহক এডিস মশা। জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের তাপমাত্রা বাড়ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বৃষ্টিপাত।
একদিন আগেই ম্যালেরিয়ার টিকার অনুমোদন দিয়েছিল ডব্লিউএইচও। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এই টিকা তৈরি করেছেন। বিশ্বে ম্যালেরিয়া নিয়ে এটি দ্বিতীয় টিকা। তবে এটি স্বল্পখরচে বানানো সম্ভব। জানা গেছে, ইতোমধ্যে বছরে ১০ কোটি টিকা উৎপাদনের ব্যাপারে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
এবার জানা গেল ডেঙ্গু টিকার অনুমোদনের কথা। জাপানের তাকেদা ফার্মাসিউটিকালস এই টিকাটি তৈরি করেছে। নাম দেওয়া হয়েছে কিউডেঙ্গা। গেব্রিয়েসুস বলেন, ‘ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি— এমন অঞ্চলগুলোতে ৬ থেকে ১৬ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে এই টিকা ব্যবহার করা যাবে।’ ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া দুটিই মশাবাহিত রোগ। চলতি মৌসুমে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৯০০ এরও বেশি মানুষ। ডেঙ্গুতে এত মৃত্যুর ঘটনা আগে ঘটেনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মশার আবাসস্থল বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে দেশে দেশে মশাবাহিত রোগ বেড়েই চলেছে।
আবাহওয়ার এই পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে এডিস মশার বংশবিস্তার। ফলে মৌসুমি জলবায়ুর দেশগুলোর পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে ইউরোপের অনেক দেশেও এই রোগের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে।
তবে বাংলাদেশের মতো মৌসুমি জলবায়ুর দেশগুলোতে এই রোগের মাত্রা বহুগুণ বেশি। চলতি ২০২৩ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ২ লাখেরও বেশি মানুষ এবং এই রোগে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজারেরও বেশি মানুষের। ইতিহাসে এর আগে ডেঙ্গুতে এত আক্রান্ত-মৃত্যু দেখেনি বাংলাদেশ।
মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালকের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন সংস্থার স্ট্র্যাটেজিক অ্যাডভাইসরি গ্রুপ অব এক্সপার্টস অন ইমিউনাইজেশন বিভাগের পরিচালক হান্না নোয়িনেক।
তিনি জানিয়েছেন, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে চার ধরনের ডেঙ্গু ভাইরাসের সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। পরীক্ষামূলক ট্রায়াল চলার সময় বিভিন্ন ধরনের ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ওপর এই টিকা পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে এবং সেই পরীক্ষার ফলাফল সন্তোষজনক।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশেও সম্প্রতি প্রথমবারের মতো ডেঙ্গুর চারটি ধরনের বিরুদ্ধে উপযোগী টিকা নিয়ে সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভার্মন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউভিএম) লার্নার কলেজ অব মেডিসিন। টিভি-০০৫ নামের টিকাটি এক ডোজের বলে জানিয়েছে আইসিডিডিআরবি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেলে ডেঙ্গুর এই টিকা ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গবেষণায় ব্যবহৃত এক ডোজের ডেঙ্গু টিকা টিভি-০০৫ মূল্যায়ন করে দেখা যায়, এটি শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রয়োগের জন্য নিরাপদ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সক্ষম।