বিনোদন ডেস্ক :
২০১৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মারা যান বলিউড সুপারস্টার শ্রীদেবী। তার হঠাৎ মৃত্যুতে নড়ে উঠেছিল বলিউড। অনেকে তার মৃত্যু নিয়ে তুলেছিলেন প্রশ্ন। অস্বাভাবিক মৃত্যু বলে দাবি করেছিলেন তারা। শ্রীদেবীর স্বামী বলিউড প্রযোজক বনি কাপুর জানিয়েছেন, স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি শ্রীদেবীর।
ভারতীয় সংবাদয়ামধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বনি কাপুর বলেন, এটা স্বাভাবিক মৃত্যু ছিল না, এটা দুর্ঘটনায় মৃত্যু। আমি এই ব্যাপারে মুখ না খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কারণ আমি ওই বিষয় নিয়েই একসঙ্গে ২৪ ঘণ্টা বা ৪৮ ঘণ্টা ধরে কথা বলতাম যখন তদন্ত চলছিল আর আমাকে জেরা করা হত। সেভাবেই আমি দুবাই পুলিশের থেকে ক্লিন চিট পাই। এমনকী, আমাকে কর্মকর্তারা বলেই দিয়েছিলেন যে এসব সহ্য করতেই হবে আমাকে কারণ ভারতীয় মিডিয়া থেকে প্রবল চাপ আসছিল। আমাকে বিভিন্ন টেস্ট করানো হয়েছিল, এমনকি লাই ডিক্টেটর (মিথ্যা শনাক্ত করা) টেস্টও করেছিল। সবশেষে রিপোর্ট আসে যে, এটা দুর্ঘটনা ছিল।
বনি কাপুর এরপর স্ত্রীর স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলেন। ক্র্যাশ ডায়েটের কথাও জানান তিনি। এ প্রসঙ্গে বনি কাপুর বলেন, ও প্রায়ই না খেয়ে থাকত, সুন্দর দেখতে থাকতে চাইত। তাকে যেন হালকা গড়ন, তীক্ষ্ণ ও সঠিক শেপে দেখায় সে ব্যাপারে সজাগ ছিল। যাতে পর্দায় তাকে ভালো দেখতে লাগে।
বনি কাপুর আরও বলেন, ইংলিশ ভিংলিশ’ অভিনেত্রী নাকি একসময় ৪৬ থেকে ৪৭ কেজি ওজন ঝরিয়েছিলেন। আমার সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর থেকে একাধিকবার অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন এবং ডাক্তার বারবার বলতেন নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা আছে। এত কঠিন ডায়েট যেখানে লবণ খাওয়া বন্ধ সেটা করতে বারণ করতেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য। পরে শ্রীদেবীর মৃত্যুর পর নাগার্জুনা শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন, এবং তিনি বলেন যে একটা সিনেমার সময় তিনি ক্র্যাশ ডায়েট করছিলেন এবং সেই কারণে বাথরুমে পড়ে গিয়ে দাঁত ভেঙে ফেলেছিলেন।
বনি কাপুর জানান, ডায়েট নিয়ে শ্রীদেবীর যে এ কড়াকড়ি অবস্থান তা বিয়ের পর জানতে পেরেছিলেন তিনি এবং স্ত্রী যেন খাবারে লবণ দিয়ে খান, সেটা বারবার তাকে বলার জন্য ডাক্তারদের অনুরোধ করতেন তিনি।
সৌন্দর্য হারানোর ভয়ে থাকতেন শ্রীদেবী। এমনটা উলেখ করে তিনি বলেন, সুন্দরী থাকার জন্য সে বরাবরই উন্মুখ ছিল। সে সবসময় চাইতো, তাকে যেন পর্দায় ঠিকঠাক দেখা যায়। আমার সঙ্গে বিয়ের পর থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সে কয়েকবার অচেতন হয়ে গিয়েছিল। তখন ডাক্তার বলেছিল, তার লো ব্লাডপ্রেসারের সমস্যা রয়েছে।
বনি কাপুর বলেন, শিরডি মন্দিরে শ্রীদেবীকে আমি বিয়ে করি। এটি আমার দ্বিতীয় বিয়ে। ১৯৯৬ সালের ২ জুন আমরা বিয়ে করি। ওই রাত আমরা মন্দিরেই কাটাই। ১৯৯৭ সালের জানুয়ারিতে শ্রীদেবীর প্রেগন্যান্সি দৃশ্যমান হয়। তখন আমাদের সামাজিকভাবে বিয়ে করা ছাড়া আর উপায় ছিল না। যার কারণে ১৯৯৭ সালের জানুয়ারিতে পুনরায় জনসম্মুক্ষে বিয়ে করি। এজন্য মানুষ ভাবেন বিয়ের আগেই অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছিল শ্রীদেবী। এটা একদমই ভুল।
এছাড়া স্ত্রী শ্রীদেবীর প্রতি আধ্যাত্মিকতার প্রতি যে টান রয়েছে, সে কথাও বলেন বলি তারকা বনি। তিনি বলেন, শ্রীদেবী হোব বা সুনিতা (ভাই অনিল কাপুরের স্ত্রী), আমি বা অনিল কিংবা আমার মেয়ে জাহ্নবী, আমরা সবাই ঈশ্বরে বিশ্বাসী। শ্রীদেবী তার প্রতিটি জন্মদিনে তিরুপথি মন্দিরে হেঁটে পূজা দিতে যেতেন। আমি যখনই কোনো সমস্যায় পড়তাম, সে জুহু থেকে সিদ্ধি বিনায়ক পর্যন্ত খালি পায়ে হেঁটে যেতেন।
তারকা দম্পতির মেয়ে জাহ্নবী কাপুরকেও একিাধিকবার তিরুপতি দর্শনে দেখা গেছে। মা শ্রীদেবীর মৃত্যুর পর থেকেই প্রতিবছর মায়ের জন্মদিনে তিরুপতি গিয়ে পূজা দেন।
‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ সিনেমার সেটে প্রথম আলাপ শ্রীদেবী-বনি কাপুরের। সেখানে শ্রীদেবীর সারল্য ও ব্যক্তিত্বে বুঁদ হয়েছিলেন বনি। প্রেমে পড়লেও তা শ্রীদেবীকে তখন বলতে পারেননি তিনি। কারণ বনি তখন বিবাহিত; দুটি সন্তানও রয়েছে তার। শ্রীদেবীর বাবা মারা যাওয়ার পর বনি কাপুর তার পাশে দাঁড়ান। শ্রীদেবীর মা যখন অসুস্থ, তখনো। ১৯৯৬ সালে সাতপাকে বাঁধা পড়েন শ্রীদেবী-বনি।
শ্রীদেবী বলিউডে পা রেখেছিলেন ১৯৭৮ সালে। সোলভা সাওয়ান’ ছবির মাধ্যমে এ অভিষেক হয়েছিল তার। পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে পর্দায় দ্যুতি ছড়িয়েছেন তিনি। তামিল, তেলুগু, মালায়লাম, কন্নড় ও হিন্দি ভাষায় ৩০০টিরও বেশি ছবিতে কাজ করেছেন এ অভিনেত্রী।