Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গণতন্ত্রের কথা বলা বিএনপির পক্ষে শোভা পায় না : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গণতন্ত্রের কথা বলা বিএনপির পক্ষে শোভা পায় না। কারণ, তারা জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে ধোকাবাজি খেলেছে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি একটি প্রহসনমূলক নির্বাচন করে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার দেড় মাসের মধ্যেই দেশের জনগণ তাদের ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে। দেশের জনগণ কখনোই ভোট কারচুপিকারীদের ক্ষমতায় বসতে দেয় না।

স্থানীয় সময় সোমবার (২ অক্টোবর) লন্ডনের মেথোডিস্ট সেন্ট্রাল হল ওয়েস্টমিনস্টারে প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে আয়োজিত এক কমিউনিটি সংবর্ধনায় তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে আন্দোলনের নামে কোনো ধরনের অগ্নিসংযোগ, জ্বালাও-পোড়াও, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বা সহিংসতা করলে রেহাই দেওয়া হবে না

তিনি বলেন, আন্দোলনে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। সন্ত্রাসবাদে অগ্নিসংযোগ করে মানুষ হত্যা এবং দেশের সম্পত্তি নষ্ট করা তাদের আন্দোলন। এর আগে ২৯ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে। দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের জীবন নিয়ে এমন কোনো চেষ্টা করা হলে কোনো ক্ষমা করা হবে না।

শেখ হাসিনা বলেন, আন্দোলনের নামে নির্বাচনের আগে সন্ত্রাসবাদ বা একইভাবে সাধারণ মানুষের ওপর হামলা বা হামলার ঘটনা ঘটলে রেহাই দেওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। ২০১৩-১৪ সালের ঘটনা ঘটলে আর কোনো সহনশীলতা দেখানো হবে না।

প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, বিএনপি-জামায়াত জোট ২০১৩-১৪ সালে যাত্রীবাহী বাস, ট্রেন ও লঞ্চসহ বহু ধরনের যানবাহনে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে জনগণকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করে, সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করে সারাদেশে তাণ্ডব চালিয়েছিল। তথাকথিত আন্দোলনের নামে।

প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার নিয়ে ভোটার তালিকা তৈরি করে এবং সেই তালিকা দিয়ে নির্বাচন করার চেষ্টা করেছিল। উল্টো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জনগণের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করেছেন। তাদের অনেকেই জীবন উৎসর্গ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, তার সরকার নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের জন্য আইন প্রণয়নের পাশাপাশি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য সব সংস্কার করেছে।

তিনি বলেন, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তারা স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স চালু করেছে এবং ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরি করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি এখন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর আন্দোলন করছে। সরকারপ্রধান হিসেবে আমার ওপর ন্যস্ত নির্বাহী ক্ষমতা দিয়ে এতিমদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতির মামলায় কারাদণ্ড স্থগিত করার পর খালেদা জিয়াকে বাড়িতে থাকতে দিয়েছি।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে আমার কিছুই করার নেই। আমি আইনের মধ্যে যতটুকু করা যায় করেছি। অনেকেই এখন যুক্তি দিচ্ছেন, আইন নিজের গতিতে চললেও খালেদা জিয়ার প্রতি আমি বেশি সহানুভূতি দেখাতে পারি।

খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে তার কিছুই করার নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি আইন অনুযায়ী যা করতে পারেন তাই করেছেন।

তিনি বলেন, রোজই শুনি এই মরে মরে, এই যায় যায়। আর বয়স তো আশির ওপরে। এমনি তো সময় হয়ে গেছে। তার মধ্যে অসুস্থ। এখানে এত কান্নাকাটি করে তো লাভ নাই। আমি বলেছি, এখানে আমার কোনো এক্সিকিউটিভ অথরিটি নাই, কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে তাকে আমরা পাঠাতে পারি না। কিন্তু এটাকে ইস্যু করে আন্দোলন সংগ্রাম। মায়ের প্রতি যদি এত দরদই থাকত, ছেলে তো একবার দেখতে যেত। তা তো যায় না। তাহলে বিষয়টা কী?

সরকারপ্রধান বলেন, এতিমখানার জন্য টাকা এসেছিল। সেই এতিমদের টাকা মেরে দিয়েছেন সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া। যা-ই হোক বয়স্ক মানুষ। তার বড় বোন ভাই সব এসে কান্নাকাটি। সে সাজাপ্রাপ্ত আসামি, কারাগারে বন্দি। তার বোনের কান্নাকাটিতে সত্যি কথা বলতে কি আমি তার সাজাটা স্থগিত করে বাসায় থাকার মতো ব্যবস্থা করে দিয়েছি, এক্সিকিউটিভ অথরিটি আমার আছে। এখন তাদের আন্দোলন তাকে বিদেশে পাঠাতে হবে। পৃথিবীর কোন দেশে সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে চিকিৎসার জন্য পাঠায় বলতে পারেন, কোন দেশ পাঠায়? আবার কেউ কেউ আমাদের আঁতেলরা আছে, তারা আবার বলে, একটু কি সহানুভূতি দেখাতে পারেন না! সহানুভূতি আমাকে দেখাতে বলে। আমি আপনাদের কয়েকটা ঘটনা বলি।

এরপর প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন। তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট তো খালেদা জিয়ার জন্মদিন না। তার বিয়ের দলিলে নাই। সে যে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিল সেখানেও ১৫ আগস্ট লেখা নাই। (খালেদা জিয়া) প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তার বাবা ইন্টারভিউ দিয়েছিল পত্রিকায়, সেখানেও লেখা নাই। ১৫ আগস্ট কোন দিন। যেদিন আমার বাবা-মা, আমার ছোট ভাই সবাইকে হত্যা করেছে। যে দিনটায় আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। ওই দিনটাকে উৎসবের দিন বানিয়েছে। বড় বড় কেক কেটে উৎসব করে সেদিন। কত বড় জঘন্য মনোবৃত্তি হলে পরে… সেই ভুয়া জ্ন্মদিন বানিয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘শুধু তাই নয়, ১৫ আগস্টের খুনি জিয়াউর রহমান যেমন তাদের ইনডেমনিটি দিয়েছে, খালেদা জিয়া তেমন ভোট চুরি করে তাদের পার্লামেন্টে বসিয়েছে। তা ছাড়া ২১ আগস্ট ২০০৪। যখন গ্রেনেড হামলা করা হলো আইভি রহমানসহ আমাদের ২২ জন নেতাকর্মী… প্রায় ২৫ জনের মতো আমাদের নেতাকর্মী আহত। ওবায়দুল কাদের থেকে শুরু করে সবাই সেখানে গ্রেনেড হামলায়, সবার শরীরে কিন্তু স্প্লিন্টার। সেই কেসের কোনো আলামত রাখতে দেয়নি। পার্লামেন্টে কথা বলতে দেয়নি। নিন্দা প্রস্তাব আনতে বলেছি, সেটা আনতে দেয়নি। বরং খালেদা জিয়া বলেছে, শেখ হাসিনাকে আবার কে মারবে। উনি তো ভ্যানিটি ব্যাগে নিয়ে গিয়ে গ্রেনেড নিজে মারছে। আমি তারপরও আজকে তাকে কারাগার থেকে বাসায় থাকতে দিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী প্রবাসী বাংলাদেশিদের ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর আহ্বান জানান এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তাদের অবদানের কথা স্মরণ করেন।

চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির পটভূমিতে অনুমোদন এবং পাল্টা নিষেধাজ্ঞায় তিনি খাদ্যের জন্য অন্যের ওপর নির্ভরতা কমাতে সবাইকে আবাদ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, প্রতি ইঞ্চি জমি ব্যবহার করে আপনি যা পারেন তা উৎপাদন করেন।

বাংলাদেশকে আর্থ-সামাজিকভাবে উন্নত করতে তার সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল ও ডিজিটাল দেশে রূপান্তরিত করেছি এবং ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছি।

বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা (স্যাংশন) দেওয়া নিয়েও কথা বলেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, আজকে আরেকটা খেলা শুরু হয়েছে, স্যাংশন। কথায় কথায় স্যাংশন। কে কাকে স্যাংশন দেয় সেটা আমার প্রশ্ন। আমি স্পষ্ট কথা বলছি, যাদের দিয়ে সন্ত্রাস দমন করলাম, যাদের দিয়ে জঙ্গিবাদ দমন করলাম, তাদের ওপরে স্যাংশন। এটা কোন ধরনের কথা। তাহলে কি জঙ্গি আর সন্ত্রাসী থাকবে বাংলাদেশে? আমি সবাইকে বলে দিয়েছি যে, ওইসব নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নাই। আপনাদেরও বলব, স্যাংশন-ট্যাংশন নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। দেশ আমাদের। আমাদের দেশটাকেই আমরা গড়ে তুলব। কারও মুখাপেক্ষী হয়ে চলতে হবে না। আর বেশি আমাদের স্যাংশন দিলে আমরাও স্যাংশন দিতে পারি।

বিএনপির চলমান আন্দোলনের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে প্রচুর অর্থসম্পদ বানিয়েছে। জনগণ কিছু না পেলেও তারা প্রচুর টাকা বিদেশে পাচার করেছে। তাদের কারণেই দেশে ইমার্জেন্সি হলো। আমাকেই প্রথম জেল খাটতে হলো। তারা আন্দোলন করুক, আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ তাদের সঙ্গে নেই। আন্দোলনের নামে তারা যদি দেশের মানুষকে আবার অত্যাচার করতে চায় তাহলে তাদের কোনো ছাড় নেই। যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র অব্যাহত রাখা হবে।

এর আগে সরকারের নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের যাত্রা শুরু হবে। তখন যেমন অনেক সুযোগ আমরা পাব, আবার অনেক চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ জাতির পিতার আহ্বানে যা কিছু ছিল তাই নিয়ে যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছে। কাজেই ওই সমস্ত চ্যালেঞ্জ আমরা ভয় পাই না, যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেতে পারি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক। অনুষ্ঠানের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। সংবর্ধনা সভায় যোগ দিতে আগে থেকেই জড়ো হতে শুরু করেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। লন্ডনের বাইরের দূরদূরান্তের শহর ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকেও অনেকে সভায় যোগ দেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়ক চার লেন দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন 

গণতন্ত্রের কথা বলা বিএনপির পক্ষে শোভা পায় না : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ১২:৪০:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গণতন্ত্রের কথা বলা বিএনপির পক্ষে শোভা পায় না। কারণ, তারা জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে ধোকাবাজি খেলেছে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি একটি প্রহসনমূলক নির্বাচন করে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার দেড় মাসের মধ্যেই দেশের জনগণ তাদের ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে। দেশের জনগণ কখনোই ভোট কারচুপিকারীদের ক্ষমতায় বসতে দেয় না।

স্থানীয় সময় সোমবার (২ অক্টোবর) লন্ডনের মেথোডিস্ট সেন্ট্রাল হল ওয়েস্টমিনস্টারে প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে আয়োজিত এক কমিউনিটি সংবর্ধনায় তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে আন্দোলনের নামে কোনো ধরনের অগ্নিসংযোগ, জ্বালাও-পোড়াও, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বা সহিংসতা করলে রেহাই দেওয়া হবে না

তিনি বলেন, আন্দোলনে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। সন্ত্রাসবাদে অগ্নিসংযোগ করে মানুষ হত্যা এবং দেশের সম্পত্তি নষ্ট করা তাদের আন্দোলন। এর আগে ২৯ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে। দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের জীবন নিয়ে এমন কোনো চেষ্টা করা হলে কোনো ক্ষমা করা হবে না।

শেখ হাসিনা বলেন, আন্দোলনের নামে নির্বাচনের আগে সন্ত্রাসবাদ বা একইভাবে সাধারণ মানুষের ওপর হামলা বা হামলার ঘটনা ঘটলে রেহাই দেওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। ২০১৩-১৪ সালের ঘটনা ঘটলে আর কোনো সহনশীলতা দেখানো হবে না।

প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, বিএনপি-জামায়াত জোট ২০১৩-১৪ সালে যাত্রীবাহী বাস, ট্রেন ও লঞ্চসহ বহু ধরনের যানবাহনে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে জনগণকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করে, সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করে সারাদেশে তাণ্ডব চালিয়েছিল। তথাকথিত আন্দোলনের নামে।

প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার নিয়ে ভোটার তালিকা তৈরি করে এবং সেই তালিকা দিয়ে নির্বাচন করার চেষ্টা করেছিল। উল্টো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জনগণের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করেছেন। তাদের অনেকেই জীবন উৎসর্গ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, তার সরকার নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের জন্য আইন প্রণয়নের পাশাপাশি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য সব সংস্কার করেছে।

তিনি বলেন, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তারা স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স চালু করেছে এবং ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরি করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি এখন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর আন্দোলন করছে। সরকারপ্রধান হিসেবে আমার ওপর ন্যস্ত নির্বাহী ক্ষমতা দিয়ে এতিমদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতির মামলায় কারাদণ্ড স্থগিত করার পর খালেদা জিয়াকে বাড়িতে থাকতে দিয়েছি।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে আমার কিছুই করার নেই। আমি আইনের মধ্যে যতটুকু করা যায় করেছি। অনেকেই এখন যুক্তি দিচ্ছেন, আইন নিজের গতিতে চললেও খালেদা জিয়ার প্রতি আমি বেশি সহানুভূতি দেখাতে পারি।

খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে তার কিছুই করার নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি আইন অনুযায়ী যা করতে পারেন তাই করেছেন।

তিনি বলেন, রোজই শুনি এই মরে মরে, এই যায় যায়। আর বয়স তো আশির ওপরে। এমনি তো সময় হয়ে গেছে। তার মধ্যে অসুস্থ। এখানে এত কান্নাকাটি করে তো লাভ নাই। আমি বলেছি, এখানে আমার কোনো এক্সিকিউটিভ অথরিটি নাই, কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে তাকে আমরা পাঠাতে পারি না। কিন্তু এটাকে ইস্যু করে আন্দোলন সংগ্রাম। মায়ের প্রতি যদি এত দরদই থাকত, ছেলে তো একবার দেখতে যেত। তা তো যায় না। তাহলে বিষয়টা কী?

সরকারপ্রধান বলেন, এতিমখানার জন্য টাকা এসেছিল। সেই এতিমদের টাকা মেরে দিয়েছেন সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া। যা-ই হোক বয়স্ক মানুষ। তার বড় বোন ভাই সব এসে কান্নাকাটি। সে সাজাপ্রাপ্ত আসামি, কারাগারে বন্দি। তার বোনের কান্নাকাটিতে সত্যি কথা বলতে কি আমি তার সাজাটা স্থগিত করে বাসায় থাকার মতো ব্যবস্থা করে দিয়েছি, এক্সিকিউটিভ অথরিটি আমার আছে। এখন তাদের আন্দোলন তাকে বিদেশে পাঠাতে হবে। পৃথিবীর কোন দেশে সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে চিকিৎসার জন্য পাঠায় বলতে পারেন, কোন দেশ পাঠায়? আবার কেউ কেউ আমাদের আঁতেলরা আছে, তারা আবার বলে, একটু কি সহানুভূতি দেখাতে পারেন না! সহানুভূতি আমাকে দেখাতে বলে। আমি আপনাদের কয়েকটা ঘটনা বলি।

এরপর প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন। তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট তো খালেদা জিয়ার জন্মদিন না। তার বিয়ের দলিলে নাই। সে যে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিল সেখানেও ১৫ আগস্ট লেখা নাই। (খালেদা জিয়া) প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তার বাবা ইন্টারভিউ দিয়েছিল পত্রিকায়, সেখানেও লেখা নাই। ১৫ আগস্ট কোন দিন। যেদিন আমার বাবা-মা, আমার ছোট ভাই সবাইকে হত্যা করেছে। যে দিনটায় আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। ওই দিনটাকে উৎসবের দিন বানিয়েছে। বড় বড় কেক কেটে উৎসব করে সেদিন। কত বড় জঘন্য মনোবৃত্তি হলে পরে… সেই ভুয়া জ্ন্মদিন বানিয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘শুধু তাই নয়, ১৫ আগস্টের খুনি জিয়াউর রহমান যেমন তাদের ইনডেমনিটি দিয়েছে, খালেদা জিয়া তেমন ভোট চুরি করে তাদের পার্লামেন্টে বসিয়েছে। তা ছাড়া ২১ আগস্ট ২০০৪। যখন গ্রেনেড হামলা করা হলো আইভি রহমানসহ আমাদের ২২ জন নেতাকর্মী… প্রায় ২৫ জনের মতো আমাদের নেতাকর্মী আহত। ওবায়দুল কাদের থেকে শুরু করে সবাই সেখানে গ্রেনেড হামলায়, সবার শরীরে কিন্তু স্প্লিন্টার। সেই কেসের কোনো আলামত রাখতে দেয়নি। পার্লামেন্টে কথা বলতে দেয়নি। নিন্দা প্রস্তাব আনতে বলেছি, সেটা আনতে দেয়নি। বরং খালেদা জিয়া বলেছে, শেখ হাসিনাকে আবার কে মারবে। উনি তো ভ্যানিটি ব্যাগে নিয়ে গিয়ে গ্রেনেড নিজে মারছে। আমি তারপরও আজকে তাকে কারাগার থেকে বাসায় থাকতে দিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী প্রবাসী বাংলাদেশিদের ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর আহ্বান জানান এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের অন্তর্ভুক্ত প্রতিটি প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তাদের অবদানের কথা স্মরণ করেন।

চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির পটভূমিতে অনুমোদন এবং পাল্টা নিষেধাজ্ঞায় তিনি খাদ্যের জন্য অন্যের ওপর নির্ভরতা কমাতে সবাইকে আবাদ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, প্রতি ইঞ্চি জমি ব্যবহার করে আপনি যা পারেন তা উৎপাদন করেন।

বাংলাদেশকে আর্থ-সামাজিকভাবে উন্নত করতে তার সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল ও ডিজিটাল দেশে রূপান্তরিত করেছি এবং ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছি।

বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা (স্যাংশন) দেওয়া নিয়েও কথা বলেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, আজকে আরেকটা খেলা শুরু হয়েছে, স্যাংশন। কথায় কথায় স্যাংশন। কে কাকে স্যাংশন দেয় সেটা আমার প্রশ্ন। আমি স্পষ্ট কথা বলছি, যাদের দিয়ে সন্ত্রাস দমন করলাম, যাদের দিয়ে জঙ্গিবাদ দমন করলাম, তাদের ওপরে স্যাংশন। এটা কোন ধরনের কথা। তাহলে কি জঙ্গি আর সন্ত্রাসী থাকবে বাংলাদেশে? আমি সবাইকে বলে দিয়েছি যে, ওইসব নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নাই। আপনাদেরও বলব, স্যাংশন-ট্যাংশন নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। দেশ আমাদের। আমাদের দেশটাকেই আমরা গড়ে তুলব। কারও মুখাপেক্ষী হয়ে চলতে হবে না। আর বেশি আমাদের স্যাংশন দিলে আমরাও স্যাংশন দিতে পারি।

বিএনপির চলমান আন্দোলনের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে প্রচুর অর্থসম্পদ বানিয়েছে। জনগণ কিছু না পেলেও তারা প্রচুর টাকা বিদেশে পাচার করেছে। তাদের কারণেই দেশে ইমার্জেন্সি হলো। আমাকেই প্রথম জেল খাটতে হলো। তারা আন্দোলন করুক, আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ তাদের সঙ্গে নেই। আন্দোলনের নামে তারা যদি দেশের মানুষকে আবার অত্যাচার করতে চায় তাহলে তাদের কোনো ছাড় নেই। যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র অব্যাহত রাখা হবে।

এর আগে সরকারের নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের যাত্রা শুরু হবে। তখন যেমন অনেক সুযোগ আমরা পাব, আবার অনেক চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ জাতির পিতার আহ্বানে যা কিছু ছিল তাই নিয়ে যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছে। কাজেই ওই সমস্ত চ্যালেঞ্জ আমরা ভয় পাই না, যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেতে পারি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক। অনুষ্ঠানের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। সংবর্ধনা সভায় যোগ দিতে আগে থেকেই জড়ো হতে শুরু করেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। লন্ডনের বাইরের দূরদূরান্তের শহর ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকেও অনেকে সভায় যোগ দেন।