Dhaka মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খালেদা জিয়া সুস্থ হলে তার ডাকে কোটি মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে: মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

খালেদা জিয়াকে কোনো সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ফখরুল বলেন, মিথ্যা প্রতারণা করে জনগণকে ভুল বুঝিয়ে, আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে তাকে বিনা চিকিৎসায় সরকার হত্যা করতে চায়। তারা যে কথাগুলো বলছেন, সেটার উদ্দেশ্য একটাই তারা আসলে কাপুরুষ-ভীতু। তারা জানে খালেদা জিয়া যদি সুস্থ হয়ে যান, আবার জনগণের মধ্যে ফিরে আসেন, তার ডাকে কোটি মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে। তখন তাদের ধ্বংস হয়ে যাবে।

সোমবার (২ অক্টোবর) নয়াপল্টনে সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির লক্ষ্যে এক দফা দাবি আদায়ে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের উদ্যােগে কৃষক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে সরকার হত্যা করতে চায়। গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়াকে এই অনির্বাচিত ও অবৈধ সরকার হত্যা করতে চায়।

খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধের সময় ৯ মাস কারাগারে বন্দি ছিলেন উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমি সবসময় বলি বাংলাদেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছেন খালেদা জিয়া। এই কথা বললে তাদের (আওয়ামী লীগ নেতাদের) গায়ের মধ্যে আগুন জ্বলে। কারণ তারা তো মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িত ছিল না। তারা তো সেদিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভাতা খেয়েছিল। বাস্তব কথা বলছি। অনেকের কষ্ট হতে পারে, কিন্তু কথাটা সত্য।

নেতাকর্মীদের আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের সবাইকে দুর্বার আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কানের সমস্যায় আমেরিকায় গিয়েছিলেন, আর খালেদা জিয়ার বেলায় আইনের মারপ্যাঁচ দেখানো হচ্ছে। আওয়ামী লীগ চায় দেশে আর কোন বিরোধীদল না থাকুক।

তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া বিনা চিকিৎসায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। বিদেশে চিকিৎসার জন্য আইনের বিভিন্ন ফাঁক ফোকর দেখাচ্ছেন। শুধুমাত্র ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা দিতে দিচ্ছে না।

ফখরুল বলেন, সাধারণ মানুষের বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পে কোনো লাভ নেই। তারা চায় শান্তি মতো দুবেলা পেট ভরে খেতে।

তিনি আরও বলেন, ১৯৭৪ সালে আপনারা দেশে দুর্ভিক্ষ এনেছিলেন। আর জিয়াউর রহমান সেই দুর্ভিক্ষ থেকে দেশকে উদ্ধার করেছিলেন।

দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই নাজুক উল্লেখ করে তিনি বলেন সেপ্টেম্বর মাসে দেশের সবচেয়ে কম রেমিটেন্স এসেছে। কারণ প্রবাসী ও বিদেশি দাদারা দেশের সরকারের প্রতি আস্থা হারিয়েছে। তাই সকলকে এই সরকারের বিরুদ্ধে সজাগ হয়ে মাঠে নামার আহ্বান জানান তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, শহীদ জিয়া দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়ার পর দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে দুটি শিশু সন্তানসহ পাকবাহিনী আটক রাখে। আমি বলব তিনি ছিলেন দেশের প্রথম মহিলা মুক্তিযোদ্ধা। অবশ্য একথা বললে আওয়ামী লীগের গা জ্বলবে। তারাতো মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না, পাকিস্তানের ভাতা খেয়েছেন।

তিনি বলেন, সরকার ২৫ হাজার কোটি টাকা লুট করতে সহযোগিতা করে। আর ২৫ হাজার টাকা ঋণ পরিশোধ করতে না পারা একজন কৃষকের কোমরে দড়ি বেঁধে নিয়ে যায় এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, এরা লুটেরাদের সরকার। এরা টাকা পাচার করে কানাডায় বেগমপাড়া বানিয়েছে। এখন কৃষকদের পক্ষ থেকে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা বলেছি, কৃষকদের ভর্তুকি দিতে হবে। কিন্তু তারা সব জায়গায় ভাগবাটোয়ারা করে নেয়। শ্রমিকরা তার ন্যায্যমূল্য পায় না। তারা কাউকে চাকরি দেয় না। চাকরি নিতে ২০ লাখ দিতে হয়। সমাবেশে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমার তো মনে হয়, কারো ২০ লাখ টাকার নিচে চাকরি হয়নি।’

বিএনপির এ নেতা বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে নানা অজুহাত দেখাচ্ছে সরকার। যখন তিনি ( প্রধানমন্ত্রী) কানের চিকিৎসা নিয়েছেন, তখন কোনো অজুহাত ছিল? এরা বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থ হোক চায় না। তারা সব নিজেদের মতো করে লুটে নিচ্ছে।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেত্রী। তিনি ক্ষমতায় এসেই কৃষকদের ২৫ বিঘা পর্যন্ত খাজনা মওকুফ করেছেন। ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ মওকুফ করেছেন। আর এখন ঋণের কারণে কৃষকের কোমড়ে দরি ঝুলিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এরা লুটেরা সরকার। এরা দেশের টাকা লুট করে বিদেশে কোটি কোটি টাকা খরচ করে বাড়ি করছেন। অথচ, আজকে কৃষক নায্য মূল্যে পাচ্ছে না। সারের দাম তিনগুণ বেড়েছে।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, সব জায়গায় সিন্ডিকেট। আওয়ামী লীগ সিন্ডিকেট করে টাকা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। এমন একটি ব্যবস্থা কায়েম করছে যে, সব টাকা আজ ওদের পকেটে। আজ কৃষক ভাইদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকার কৃষকদের যে ধান কিনে সেখানেও কমিশন। বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতার ওপরও ওরা বসায়। সত্যিকারের ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারছে না। আওয়ামী ব্যবসায়ীরা আজ ব্যবসা করছে। সাধারণ মানুষ চাকরি পায় না। বিশ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে চাকরি পেতে হয়।

তিনি বলেন, আজকে শিক্ষা ব্যবস্থাসহ সকল কিছু ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সবজায়গায় দলীয়করণ। মেগা দুর্নীতি করার জন্য মেগা উন্নয়নের নামে উরাল সেতু, টার্মিনাল বানাচ্ছেন। জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আমরা ছাত্রাবস্থায় গান গেতাম ২০ টাকায় তেল খেয়ে স্বর্গে যাবোগো..। আজকেও কৃষকরা গান গাচ্ছেন ফ্লাইওভার, টার্মিনাল দিয়ে স্বর্গে যাবোগো??

বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, এ সরকার এখনও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। দেশকে এরা জাহান্নামের দিকে নিয়ে গেছেন। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে মানুষ শান্তিতে থাকে, দুমুঠো ভাত খেতে পারে। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশে দুর্ভিক্ষ হয়। আবার বলছেন নির্বাচন হবেই। খুবই মজা পেয়েছে! ভেবেছেন এবারও বিএনপিকে দূরে রেখে আবারও একতরফা নির্বাচন করবে। আজকে এর প্রতিরোধ গড়তে শুধু বিএনপি নয় দেশের সকল রাজনৈতিক দল এবং জনতা এক হয়েছে। এদেশে আর কোনো একতরফা নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না।

আজকে পিটার হাসের বিরুদ্ধে সরকার লেগেছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন জায়গায় তার বিরুদ্ধে বিষাদগার করা হচ্ছে। অথচ, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির বাজার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশকে আজ কোথায় নিয়ে যাচ্ছে এ সরকার? এ মাসে সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে। কারণ, এদেশের প্রতি মানুষের কোনো আস্থা নেই। এখনো সময় আছে যদি সংকট দূর করতে চান, দেশের ভালো চান তাহলে মানে মানে কেটে পড়ুন। তা না হলে দেশের মানুষ জানে কিভাবে বিদায় করতে হয়। আজকে সবাই এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে। আসুন আগামীতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলি।

শিক্ষামন্ত্রী সমালোচনা করে তিনি বলেন, শুনেছি শিক্ষামন্ত্রীর এলাকায় তার লোকেরা ৬ হাজার কোটি টাকার বালু খেয়ে ফেলেছে। কি আশ্চর্য। শিক্ষার অবস্থা!

রংপুর অঞ্চলের এক কৃষকের কথা স্মরণ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, কোথায় আছেন বাহে সবাই? জেগে ওঠেন। জেগে ওঠার মধ্যদিয়ে এ সরকারকে পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি এবং আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।

এসময় কৃষক দলের সভাপতি হাসান জারিফ তুহিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, ঢাকা মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম প্রমুখ।

আবহাওয়া

সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে বাংলাদেশি তরুণীর পা বিচ্ছিন্ন

খালেদা জিয়া সুস্থ হলে তার ডাকে কোটি মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে: মির্জা ফখরুল

প্রকাশের সময় : ০৭:০৮:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ অক্টোবর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

খালেদা জিয়াকে কোনো সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ফখরুল বলেন, মিথ্যা প্রতারণা করে জনগণকে ভুল বুঝিয়ে, আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে তাকে বিনা চিকিৎসায় সরকার হত্যা করতে চায়। তারা যে কথাগুলো বলছেন, সেটার উদ্দেশ্য একটাই তারা আসলে কাপুরুষ-ভীতু। তারা জানে খালেদা জিয়া যদি সুস্থ হয়ে যান, আবার জনগণের মধ্যে ফিরে আসেন, তার ডাকে কোটি মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে। তখন তাদের ধ্বংস হয়ে যাবে।

সোমবার (২ অক্টোবর) নয়াপল্টনে সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির লক্ষ্যে এক দফা দাবি আদায়ে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের উদ্যােগে কৃষক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে সরকার হত্যা করতে চায়। গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়াকে এই অনির্বাচিত ও অবৈধ সরকার হত্যা করতে চায়।

খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধের সময় ৯ মাস কারাগারে বন্দি ছিলেন উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমি সবসময় বলি বাংলাদেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছেন খালেদা জিয়া। এই কথা বললে তাদের (আওয়ামী লীগ নেতাদের) গায়ের মধ্যে আগুন জ্বলে। কারণ তারা তো মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িত ছিল না। তারা তো সেদিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভাতা খেয়েছিল। বাস্তব কথা বলছি। অনেকের কষ্ট হতে পারে, কিন্তু কথাটা সত্য।

নেতাকর্মীদের আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের সবাইকে দুর্বার আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করে আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কানের সমস্যায় আমেরিকায় গিয়েছিলেন, আর খালেদা জিয়ার বেলায় আইনের মারপ্যাঁচ দেখানো হচ্ছে। আওয়ামী লীগ চায় দেশে আর কোন বিরোধীদল না থাকুক।

তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া বিনা চিকিৎসায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। বিদেশে চিকিৎসার জন্য আইনের বিভিন্ন ফাঁক ফোকর দেখাচ্ছেন। শুধুমাত্র ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা দিতে দিচ্ছে না।

ফখরুল বলেন, সাধারণ মানুষের বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পে কোনো লাভ নেই। তারা চায় শান্তি মতো দুবেলা পেট ভরে খেতে।

তিনি আরও বলেন, ১৯৭৪ সালে আপনারা দেশে দুর্ভিক্ষ এনেছিলেন। আর জিয়াউর রহমান সেই দুর্ভিক্ষ থেকে দেশকে উদ্ধার করেছিলেন।

দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই নাজুক উল্লেখ করে তিনি বলেন সেপ্টেম্বর মাসে দেশের সবচেয়ে কম রেমিটেন্স এসেছে। কারণ প্রবাসী ও বিদেশি দাদারা দেশের সরকারের প্রতি আস্থা হারিয়েছে। তাই সকলকে এই সরকারের বিরুদ্ধে সজাগ হয়ে মাঠে নামার আহ্বান জানান তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, শহীদ জিয়া দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়ার পর দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে দুটি শিশু সন্তানসহ পাকবাহিনী আটক রাখে। আমি বলব তিনি ছিলেন দেশের প্রথম মহিলা মুক্তিযোদ্ধা। অবশ্য একথা বললে আওয়ামী লীগের গা জ্বলবে। তারাতো মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না, পাকিস্তানের ভাতা খেয়েছেন।

তিনি বলেন, সরকার ২৫ হাজার কোটি টাকা লুট করতে সহযোগিতা করে। আর ২৫ হাজার টাকা ঋণ পরিশোধ করতে না পারা একজন কৃষকের কোমরে দড়ি বেঁধে নিয়ে যায় এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, এরা লুটেরাদের সরকার। এরা টাকা পাচার করে কানাডায় বেগমপাড়া বানিয়েছে। এখন কৃষকদের পক্ষ থেকে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা বলেছি, কৃষকদের ভর্তুকি দিতে হবে। কিন্তু তারা সব জায়গায় ভাগবাটোয়ারা করে নেয়। শ্রমিকরা তার ন্যায্যমূল্য পায় না। তারা কাউকে চাকরি দেয় না। চাকরি নিতে ২০ লাখ দিতে হয়। সমাবেশে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমার তো মনে হয়, কারো ২০ লাখ টাকার নিচে চাকরি হয়নি।’

বিএনপির এ নেতা বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে নানা অজুহাত দেখাচ্ছে সরকার। যখন তিনি ( প্রধানমন্ত্রী) কানের চিকিৎসা নিয়েছেন, তখন কোনো অজুহাত ছিল? এরা বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থ হোক চায় না। তারা সব নিজেদের মতো করে লুটে নিচ্ছে।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেত্রী। তিনি ক্ষমতায় এসেই কৃষকদের ২৫ বিঘা পর্যন্ত খাজনা মওকুফ করেছেন। ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ মওকুফ করেছেন। আর এখন ঋণের কারণে কৃষকের কোমড়ে দরি ঝুলিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এরা লুটেরা সরকার। এরা দেশের টাকা লুট করে বিদেশে কোটি কোটি টাকা খরচ করে বাড়ি করছেন। অথচ, আজকে কৃষক নায্য মূল্যে পাচ্ছে না। সারের দাম তিনগুণ বেড়েছে।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, সব জায়গায় সিন্ডিকেট। আওয়ামী লীগ সিন্ডিকেট করে টাকা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। এমন একটি ব্যবস্থা কায়েম করছে যে, সব টাকা আজ ওদের পকেটে। আজ কৃষক ভাইদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকার কৃষকদের যে ধান কিনে সেখানেও কমিশন। বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতার ওপরও ওরা বসায়। সত্যিকারের ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারছে না। আওয়ামী ব্যবসায়ীরা আজ ব্যবসা করছে। সাধারণ মানুষ চাকরি পায় না। বিশ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে চাকরি পেতে হয়।

তিনি বলেন, আজকে শিক্ষা ব্যবস্থাসহ সকল কিছু ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সবজায়গায় দলীয়করণ। মেগা দুর্নীতি করার জন্য মেগা উন্নয়নের নামে উরাল সেতু, টার্মিনাল বানাচ্ছেন। জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আমরা ছাত্রাবস্থায় গান গেতাম ২০ টাকায় তেল খেয়ে স্বর্গে যাবোগো..। আজকেও কৃষকরা গান গাচ্ছেন ফ্লাইওভার, টার্মিনাল দিয়ে স্বর্গে যাবোগো??

বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, এ সরকার এখনও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। দেশকে এরা জাহান্নামের দিকে নিয়ে গেছেন। বিএনপি ক্ষমতায় আসলে মানুষ শান্তিতে থাকে, দুমুঠো ভাত খেতে পারে। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশে দুর্ভিক্ষ হয়। আবার বলছেন নির্বাচন হবেই। খুবই মজা পেয়েছে! ভেবেছেন এবারও বিএনপিকে দূরে রেখে আবারও একতরফা নির্বাচন করবে। আজকে এর প্রতিরোধ গড়তে শুধু বিএনপি নয় দেশের সকল রাজনৈতিক দল এবং জনতা এক হয়েছে। এদেশে আর কোনো একতরফা নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না।

আজকে পিটার হাসের বিরুদ্ধে সরকার লেগেছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন জায়গায় তার বিরুদ্ধে বিষাদগার করা হচ্ছে। অথচ, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির বাজার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশকে আজ কোথায় নিয়ে যাচ্ছে এ সরকার? এ মাসে সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে। কারণ, এদেশের প্রতি মানুষের কোনো আস্থা নেই। এখনো সময় আছে যদি সংকট দূর করতে চান, দেশের ভালো চান তাহলে মানে মানে কেটে পড়ুন। তা না হলে দেশের মানুষ জানে কিভাবে বিদায় করতে হয়। আজকে সবাই এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে। আসুন আগামীতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলি।

শিক্ষামন্ত্রী সমালোচনা করে তিনি বলেন, শুনেছি শিক্ষামন্ত্রীর এলাকায় তার লোকেরা ৬ হাজার কোটি টাকার বালু খেয়ে ফেলেছে। কি আশ্চর্য। শিক্ষার অবস্থা!

রংপুর অঞ্চলের এক কৃষকের কথা স্মরণ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, কোথায় আছেন বাহে সবাই? জেগে ওঠেন। জেগে ওঠার মধ্যদিয়ে এ সরকারকে পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি এবং আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।

এসময় কৃষক দলের সভাপতি হাসান জারিফ তুহিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, ঢাকা মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম প্রমুখ।