Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সৌদিগামী বিমান থেকে ১৬ ভিক্ষুককে নামিয়ে নিলো পাকিস্তান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মুলতান বিমানবন্দর থেকে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের উদ্দেশে যাওয়ার সময় ১৬ জন ভিক্ষুককে ফ্লাইট থেকে নামিয়ে নিয়েছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ফেডেরাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এফআইএ) কর্মকর্তারা।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই ১৬ জনের মধ্যে ১১ জন নারী, চারজন পুরুষ ও একটি শিশু ছিল। মূলত ওমরা পালন ও অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ হিসেবে ভিক্ষা করতে সৌদি আরব যাচ্ছিলেন তারা। এতোদিন ভিক্ষা হিসেবে পাওয়া সারা জীবনের সঞ্চয় তারা একটি ভ্রমণ সংস্থার এজেন্টকে দিয়েছিলেন বলেও জানা গেছে। সেই এজেন্টই তাদের সৌদি আরবের ভিসার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।

জানা গেছে, ভিক্ষুকের দলটি একটি ভ্রমণ সংস্থার এজেন্টকে এক লাখ ৮৫ হাজার পাকিস্তানি রুপি দিয়েছিল। জাভেদ নামের ওই এজেন্টই তাদের সৌদি আরবের ভিসার ব্যবস্থা করেছিলেন।

ওই ভিক্ষুকরা জানিয়েছেন, তাদের ভিক্ষা থেকে যে অর্থ আয় হবে তার অর্ধেক ওই এজেন্টদের দিতে হবে, যারা এই ভ্রমণের ব্যবস্থা করেছেন। ওমরাহ ভিসার মেয়াদ থাকা পর্যন্ত তাদের সৌদি আরব থাকার পরিকল্পনা ছিল।

এফআইএ মুলতান সার্কেল তাদেরকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের ও আইনি ব্যবস্থার জন্য তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা বলেছে, বিমান থেকে নামিয়ে দেওয়া সবার পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে। আইনি ব্যবস্থার জন্য তাদের মানবপাচার ও চোরাচালানবিরোধী শাখায় পাঠানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইন, ২০১৮-এর অধীনে মামলা হবে।

সম্প্রতি পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব জুলফিকার হায়দার জানান, বিদেশে গ্রেফতার হওয়া ভিক্ষুকদের ৯০ শতাংশই পাকিস্তানি। তিনি জানান, জুলফিকার হায়দার জানান, দেশ ছেড়ে যাওয়া পাকিস্তানিদের মধ্যে ভিক্ষুকরাই সবচেয়ে বেশি বিদেশে যাচ্ছে।

কিছুদিন আগেই আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত পাকিস্তান সরকারকে হজযাত্রী বাছাইয়ের বিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছিল সৌদি সরকার। হজযাত্রায় কোটায় আবেদনকারীদের মনোনয়নের বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক থাকার কথা বলা হয় ওই বার্তায়। কোনোভাবেই যাতে ভিক্ষুক কিংবা পকেটমারের মতো অপরাধীরা হজের সুযোগ না পান, সে কথা স্পষ্ট জানিয়ে দেয় রিয়াদ।

আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে পাকিস্তানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে সৌদি সরকার বলে, আমাদের কারাগারগুলো আপনাদের দেশের কয়েদিতে ভরে গেছে। আর জায়গা নেই।

এর আগে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কমিটি জানায়, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভিক্ষুক অবৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সচিব জুলফিকার হায়দার বলেছিলেন, সৌদি আরব, ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য কয়েকটি দেশে আটক হওয়া ভিক্ষুকদের মধ্যে ৯০ শতাংশই পাকিস্তানের।

হজযাত্রীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে প্রতিটি দেশের জন্য কোটা বেঁধে করে দেয় সৌদি আরব। কোন দেশ থেকে কতজন মক্কায় আসবেন, তা সৌদিকে আগে থেকে জানাতে হয়। কোটার মাধ্যমে আর্থিক সাহায্যও মেলে। সেই কোটার সুযোগে যাতে ভিক্ষুক কিংবা অপরাধীরা ঢুকে পড়তে না পারে সে বিষয়ে আগে থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে সৌদি আরব।

প্রসঙ্গত, কিছু দিন আগেই পাকিস্তান সরকারকে হজ/ওমরাযাত্রী বাছাইয়ের বিষয়ে কিছু ‘পরামর্শ’ দিয়েছিল সৌদি সরকার। হজযাত্রায় কোটায় আবেদনকারীদের মনোনয়নের বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক থাকার কথা বলা হয় ওই বার্তায়। কোনোভাবেই যাতে ভিখারি কিংবা পকেটমারের মতো ছিঁচকে অপরাধীরা হজের সুযোগ না পান, সে কথা জানিয়ে দেওয়া হয় স্পষ্ট ভাষায়। তার পরই সৌদি যাওয়ার পথে ১৬ জন ভিখারিকে নামিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।

হজপ্রত্যাশীদের নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে প্রতিটি দেশের জন্য কোটা নির্দিষ্ট করে দেয় সৌদি আরব। কোন দেশ থেকে কত জন মক্কায় আসবেন, তা সৌদিকে আগে থেকে জানাতে হয়। কোটার মাধ্যমে আর্থিক সাহায্যও মেলে। সেই কোটার সুযোগে যাতে ভিখারি কিংবা অপরাধীরা ঢুকে পড়তে না পারে সে বিষয়ে আগে থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে সৌদি আরব। আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আমাদের জেলগুলোতে আপনাদের দেশের কয়েদিদের ভিড় জমে গেছে। আর জায়গা নেই।’

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

নৌকা তৈরিতেই ফিরছে আগৈলঝাড়ার অর্ধ শতাধিক পরিবারের সচ্ছলতা

সৌদিগামী বিমান থেকে ১৬ ভিক্ষুককে নামিয়ে নিলো পাকিস্তান

প্রকাশের সময় : ০৩:৪১:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ অক্টোবর ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মুলতান বিমানবন্দর থেকে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের উদ্দেশে যাওয়ার সময় ১৬ জন ভিক্ষুককে ফ্লাইট থেকে নামিয়ে নিয়েছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ফেডেরাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এফআইএ) কর্মকর্তারা।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই ১৬ জনের মধ্যে ১১ জন নারী, চারজন পুরুষ ও একটি শিশু ছিল। মূলত ওমরা পালন ও অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ হিসেবে ভিক্ষা করতে সৌদি আরব যাচ্ছিলেন তারা। এতোদিন ভিক্ষা হিসেবে পাওয়া সারা জীবনের সঞ্চয় তারা একটি ভ্রমণ সংস্থার এজেন্টকে দিয়েছিলেন বলেও জানা গেছে। সেই এজেন্টই তাদের সৌদি আরবের ভিসার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।

জানা গেছে, ভিক্ষুকের দলটি একটি ভ্রমণ সংস্থার এজেন্টকে এক লাখ ৮৫ হাজার পাকিস্তানি রুপি দিয়েছিল। জাভেদ নামের ওই এজেন্টই তাদের সৌদি আরবের ভিসার ব্যবস্থা করেছিলেন।

ওই ভিক্ষুকরা জানিয়েছেন, তাদের ভিক্ষা থেকে যে অর্থ আয় হবে তার অর্ধেক ওই এজেন্টদের দিতে হবে, যারা এই ভ্রমণের ব্যবস্থা করেছেন। ওমরাহ ভিসার মেয়াদ থাকা পর্যন্ত তাদের সৌদি আরব থাকার পরিকল্পনা ছিল।

এফআইএ মুলতান সার্কেল তাদেরকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের ও আইনি ব্যবস্থার জন্য তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা বলেছে, বিমান থেকে নামিয়ে দেওয়া সবার পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে। আইনি ব্যবস্থার জন্য তাদের মানবপাচার ও চোরাচালানবিরোধী শাখায় পাঠানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইন, ২০১৮-এর অধীনে মামলা হবে।

সম্প্রতি পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব জুলফিকার হায়দার জানান, বিদেশে গ্রেফতার হওয়া ভিক্ষুকদের ৯০ শতাংশই পাকিস্তানি। তিনি জানান, জুলফিকার হায়দার জানান, দেশ ছেড়ে যাওয়া পাকিস্তানিদের মধ্যে ভিক্ষুকরাই সবচেয়ে বেশি বিদেশে যাচ্ছে।

কিছুদিন আগেই আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত পাকিস্তান সরকারকে হজযাত্রী বাছাইয়ের বিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছিল সৌদি সরকার। হজযাত্রায় কোটায় আবেদনকারীদের মনোনয়নের বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক থাকার কথা বলা হয় ওই বার্তায়। কোনোভাবেই যাতে ভিক্ষুক কিংবা পকেটমারের মতো অপরাধীরা হজের সুযোগ না পান, সে কথা স্পষ্ট জানিয়ে দেয় রিয়াদ।

আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে পাকিস্তানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে সৌদি সরকার বলে, আমাদের কারাগারগুলো আপনাদের দেশের কয়েদিতে ভরে গেছে। আর জায়গা নেই।

এর আগে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কমিটি জানায়, উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভিক্ষুক অবৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সচিব জুলফিকার হায়দার বলেছিলেন, সৌদি আরব, ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য কয়েকটি দেশে আটক হওয়া ভিক্ষুকদের মধ্যে ৯০ শতাংশই পাকিস্তানের।

হজযাত্রীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে প্রতিটি দেশের জন্য কোটা বেঁধে করে দেয় সৌদি আরব। কোন দেশ থেকে কতজন মক্কায় আসবেন, তা সৌদিকে আগে থেকে জানাতে হয়। কোটার মাধ্যমে আর্থিক সাহায্যও মেলে। সেই কোটার সুযোগে যাতে ভিক্ষুক কিংবা অপরাধীরা ঢুকে পড়তে না পারে সে বিষয়ে আগে থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে সৌদি আরব।

প্রসঙ্গত, কিছু দিন আগেই পাকিস্তান সরকারকে হজ/ওমরাযাত্রী বাছাইয়ের বিষয়ে কিছু ‘পরামর্শ’ দিয়েছিল সৌদি সরকার। হজযাত্রায় কোটায় আবেদনকারীদের মনোনয়নের বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক থাকার কথা বলা হয় ওই বার্তায়। কোনোভাবেই যাতে ভিখারি কিংবা পকেটমারের মতো ছিঁচকে অপরাধীরা হজের সুযোগ না পান, সে কথা জানিয়ে দেওয়া হয় স্পষ্ট ভাষায়। তার পরই সৌদি যাওয়ার পথে ১৬ জন ভিখারিকে নামিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।

হজপ্রত্যাশীদের নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে প্রতিটি দেশের জন্য কোটা নির্দিষ্ট করে দেয় সৌদি আরব। কোন দেশ থেকে কত জন মক্কায় আসবেন, তা সৌদিকে আগে থেকে জানাতে হয়। কোটার মাধ্যমে আর্থিক সাহায্যও মেলে। সেই কোটার সুযোগে যাতে ভিখারি কিংবা অপরাধীরা ঢুকে পড়তে না পারে সে বিষয়ে আগে থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে সৌদি আরব। আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আমাদের জেলগুলোতে আপনাদের দেশের কয়েদিদের ভিড় জমে গেছে। আর জায়গা নেই।’