নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, দেশের মানুষও সরকারকে স্যাংশন দিয়েছে।
রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে ঢাকা মহানগর বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে পূর্ব ঘোষিত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
যারা বিচারের নামে অপবিচার করছে তাদেরকে চিহ্নিত করে রাখুন- এমন কথা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এরা সরকারের দালাল, এদেরকে চিহ্নিত করে রাখুন, নিম্ন আদালতের রায় দিয়েছিল ৫ বছর অথচ উচ্চ আদালত তা বাড়িয়ে ১০ বছর করেছে।
তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ৪টি নির্বাচন হয়েছিল, তাতে কোনো প্রকার প্রশ্ন উঠেনি। দেশের মানুষের যেন ভোটের প্রতিফলন ঘটে। সেই জন্যই তিনি (খালেদা জিয়া) এই ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করেছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে সেই ব্যবস্থা বাতিল করেছে। এরপর থেকে ১৪ ও ১৮ সালে কোনো ভোট হয়নি। কী হয়েছে দেশের মানুষ তা জানে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা নির্বাচন চাই, তবে সেটা হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। এজন্যই তিনি দেশের মানুষের নেত্রী হয়েছিলেন। তিনি কোনো দল ভাঙতে চাননি। কিন্তু এই আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপি ভাঙতে পাঁয়তারা করে যাচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজ আগুন লেগেছে সরকারের, ১৬৫ জন নিয়ে আমেরিকা গেয়েছে, সেখানেই বসে থাকতেই ভিসা নীতির গুরুত্বরোপ করেছে। ভিসা নীতি নিশ্চয় কোনো দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক নয়। শুধু মার্কিন নয়, এ দেশের মানুষও স্যাংশন দিয়েছে এ সরকারকে।
৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অসুস্থ খালেদা জিয়ার মুক্তির পাশাপাশি তাকে দ্রুত বিদেশে পাঠনোর আল্টিমেটাম দিয়ে তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। এত অসুস্থ যে, এখন তার চিকিৎসকরা বলেছেন যে, অবিলম্বে যদি তার চিকিৎসা না করা হয় বিদেশে বাংলাদেশে তার সেই চিকিৎসা সম্ভব নয়। তা না হলে তাকে বাঁচানো দুষ্কর হয়ে যাবে। আমি যখন ডাক্তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেছি, তখন তারা বলেছেন, আপনাদের যদি কিছু করার থাকে, তাহলে করেন উনার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়।
ফখরুল বলেন, আজকে পরিষ্কার করে বলতে চাই, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দিতে হবে এবং তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে হবে।’ অন্যথায় ম্যাডামের কিছু হলে তার সব দায়-দায়িত্ব আপনাদের (সরকারকে) নিতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই কথাটা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী সরকারকে বলতে চাই— বেগম খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে উন্নত হাসপাতালে প্রেরণ করুন। এই ক্ষেত্রে যদি কোনও ক্ষতি হয়, তাতে নেত্রীর ক্ষতি হবে না, তার পরিবারের ক্ষতি হবে না, এই বাংলাদেশের বড় ক্ষতি হবে। শুধু বাংলাদেশ নয়, এই এশিয়া উপমহাদেশে যে কজন নেতা-নেত্রী গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছেন, তাদের কয়েকজনের মধ্যে আমাদের নেত্রী আছেন। কয়েকদিন আগে আমাদের অফিসে জার্মান চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স এসেছিলেন। তিনি বললেন, ‘ম্যাডামে কেমন আছেন। আমরা তার স্বাস্থ্য নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন। আমরা তাকে অন্যভাবে দেখি।’ এই হচ্ছে পাশ্চাতের ধারণা।
বিদেশে যেতে হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের এ রকম বক্তব্যের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এসব ছলচাতুরি করে কোনও লাভ নেই। পরিবার থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। সেই চিঠিতে তার মুক্তির কথা বলা হয়েছিল। একইসঙ্গে তাকে চিকিৎসার জন্য বাইরে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল।
ফখরুল বলেন, আপনারা এখন বেমালুম চেপে গিয়ে মিথ্যা কথা বলছেন। আমি বলবো, আপনাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। গণতন্ত্রের মাতাকে মুক্তি দিয়ে এখন প্রমাণ করে যে, আপনারা গণতন্ত্রে কিছুটা হলেও বিশ্বাস করেন।
মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব লিটন মাহমুদের সঞ্চালনায় সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, ফরহাদ হালিম ডোনার, রুহুল কবির রিজভী, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এস এম জিলানি, হাসান জাফির তুহিন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, উলামা দলের শাহ নেছারুল হক, তাঁতীদলের আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবীদলের আব্দুর রহিম, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, ছাত্রদলের রাশেদ ইকবাল খান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক লুতফুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।