নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যকে সরকার আরও অবনতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর উত্তরায় সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির লক্ষ্যে ১ দফা দাবিতে আয়োজিত বিএনপির সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে আবার সিসিইউতে নেওয়া হয়েছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ। চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার। চিকিৎসকরা বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বহুমুখী সুযোগ-সুবিধাসংবলিত উন্নত হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিহিসংসা কারণে তাকে আটক রাখা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ড দিয়েছে এবং শর্ত দিয়েছে, বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন না। চিকিৎসা একটি মৌলিক অধিকার। তার চিকিৎসকরা বলছেন, যদি তার সঠিক চিকিৎসা না হয়, তবে তার জীবন বিপন্ন হবে। বিএনপির নেত্রীর কিছু হলে এর দায় সরকারকে নিতে হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা রাস্তায় নেমেছি, আমরা পদযাত্রা করেছি, রোডমার্চ করছি। জনগণকে সাথে নিয়ে মাঠে আছি। কথা পরিষ্কার শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কানের সমস্যা কারনে আমেরিকায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিল। আমরা কিন্তু ভুলে যাইনি। আর আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এটা জীবন মরণ বিষয়। কিন্তু সরকার তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে না।
তিনি বলেন, এই মুর্হুতে দেশে যদি কেউ নির্যাতিত, বঞ্চিত থাকেন তিনি বেগম খালেদা জিয়া। তাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে আটকে রেখেছে সরকার, তা কিন্তু আমরা জানি। তিনি একজন হ্যামিলিনের বাঁশিওয়ালা। তার ডাকে কোটি কোটি মানুষ বেরিয়ে আসত, অথচ এই ফ্যাসিস্ট সরকার তাকে গৃহবন্দি করে রেখেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ সরকার কাউকে ভোট দিতে দেয় না। সব কিছু জোর করে কেড়ে নেয়। বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক দেশ যখন সুষ্ঠু নির্বাচন চাচ্ছে নির্দলীয় সরকারের অধীনে, তখন সরকার সংবিধানের দোহাই দিয়ে যাচ্ছে। কিসের সংবিধান, যেটা তোমরা কাটাছেঁড়া করে শেষ করে দিয়েছ।
তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি টিম এসেছিল, যে দেশে নির্বাচনের ব্যাবস্থা কেমন, তারা বসেছিল দেশের রাজনীতিবিদ, কূটনৈতিক, পত্রিকার সম্পাদক ও জাতীয় পার্টি এবং আওয়ামী লীগের সাথে। তারা বলেছিল, দেশে গিয়ে বলব, এ দেশে নির্বাচনে পর্যবেক্ষক টিম পাঠাবো কি না, তারা কি বলেছে? তারা বলেছে বাংলাদেশে নির্বাচনের পরিবেশ নেই। তাই তারা পর্যবেক্ষক টিম পাঠাবে না। একথা বিশ্বের সবাই জানে, এমনকি জাতীয় পার্টি বলেছে, যদি সরকার পদত্যাগ না করে তবে এ দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হলে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে।
তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিদেশিরাও বলছে এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। তারা আবারও আগের মতো নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু জনগণ তা হতে দেবে না। জেলে নিয়েও মানুষকে দমাতে পারবে না। গত ১৫ বছর ধরে ক্ষমতাসীনরা লুট করে দেশকে ফোকলা করে দিয়েছে। দ্রব্যমূল্য বাড়ায় তা মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষক পাঠানো নিয়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে যে কথা বলা হয়েছে তার সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ইসি বলেছে বাজেট ঘাটতির জন্য ইইউ পর্যবেক্ষক পাঠাবে না, এটা সঠিক নয়। তারা (ইইউ) পরিষ্কার করে বলেছে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, পরিবেশ নেই।
আওয়ামী লীগ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, সারা দেশের মানুষ শেখ হাসিনার পদত্যাগ চায়। এই সরকারকে আর দেখতে চায় না। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাদের পরাজিত করতে হবে। তার পর নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করে জনগণের সরকার গঠন করতে হবে। পরিষ্কার করে শেষ কথা বলতে চাই, দয়া করে পদত্যাগ করুন। অনেক নিপীড়ন হয়েছে। নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। যদি কথা শোনে ভালো, না হলে ফয়সালা হবে রাজপথে।
তিনি আরও বলেন, আন্দোলন আন্দোলন, আন্দোলনের মধ্যদিয়ে এ সরকারকে পরাজিত করতে হবে। একটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যাবস্থা করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের মা বোনেরা জেগেছে, তারা এ সরকার যে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। দয়া করে সংসদ বিলুপ্ত করে নির্বাচন দিন।
আমরা রাস্তায় নেমেছি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা পদযাত্রা করেছি, রোডমার্চ করছি। জনগণকে সাথে নিয়ে মাঠে আছি। কথা পরিষ্কার শেখ হাসিনার অধীনে কোন নির্বাচন হবে না। আমরা তো বেশি কিছু চাইনি। শুধু চেয়েছি সরকারকে পদত্যাগ করে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন দিন।
তিনি বলেন, এটাকে সরকার বলে না। এটাকে জবরদখলকারী বলে। বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে- এই বাংলাদেশকে অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। আজকে সেই বাংলাদেশকে এগিয়ে আসতে হবে। আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে পরাজিত করতে হবে ও একটি নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। এ দেশে অবশ্যই হাসিনা সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। হাসিনা যদি ক্ষমতায় থাকে, তাহলে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে খালেদা জিয়াকে বন্দী করে রাখা হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তারা জানে, দেশনেত্রীর হুঁশিয়ারিতে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত মানুষ একত্রিত হয়ে যাবে। তাই তারা তাকে (খালেদা জিয়াকে) শর্ত দিয়েছে যে বিদেশে চিকিৎসা করা যাবে না।
তরুণদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে আমরা যতকিছু আমরা পেয়েছি, সবকিছু এই তরুণদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। বিগত দিনগুলোতে তরুণদের কারণেই স্বাধীনতা পেয়েছি। স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছি আমরা। আর আপনাদেরকে নিরপেক্ষ ভোটের জন্য লড়াই করতে হবে।
সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এখনও সময় আছে। বাংলাদেশের মানুষকে রেহাই দেন। অনেক নির্যাতন করেছেন। অনেক সহ্য করেছি। বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য পদত্যাগ করুন।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ভাইস চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ঢালী, গাজীপুর জেলা সভাপতি ফজলুল হক মিলন, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব কামরুজ্জামান রতন, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, কৃষক দলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন, যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি মামুন হাসান, তাবিথ আউয়াল প্রমুখ।