নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীতে টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন সড়কে পড়ে থাকা তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে চারজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজন একই পরিবারের বলে জানিয়েছে পুলিশ। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে মিরপুরের শিয়ালবাড়ির পাশে হাজী রোড এলাকার কর্মাস কলেজ সংলগ্ন সুপার হোস্টেলের সামনে ঘটনা ঘটে।
মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, কমার্স কলেজের সামনে থেকে পাঁচজনকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে চারজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। গুরুতর অবস্থায় এক শিশুকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
তবে মৃতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।
মৃতরা হলেন- সিএনজি অটোরিকশাচালক মো. মিজান, তার স্ত্রী মুক্তা, তাদের মেয়ে লিমা, এবং এই ৩ জনকে বাঁচাতে যাওয়া যুবক অনিক। এ ঘটনায় মিজানের ৬ মাস বয়সী শিশুকে উদ্ধার করে শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
পুলিশ জানায়, ওই এলাকায় জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে বিদ্যুৎ তার ছিঁড়ে পড়ে। সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় প্রথমে একই পরিবারের ৪ জন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। পরে তাদের বাঁচাতে গিয়ে আরেক যুবকও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান।
রাজধানীতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে টানা কয়েক ঘণ্টা মুষলধারে বৃষ্টি ঝরেছে। আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ঢাকায় সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন এলাকার রাস্তা তলিয়ে যায়। কোথাও কোথাও বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। গন্তব্যে পৌঁছতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন ঘরমুখী মানুষ। এর মধ্যেই একই পরিবারের তিনজনসহ চারজনের মৃত্যুর খবর আসে। এ ঘটনার ভিডিও ছড়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
দুই মিনিট ২৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, জলমগ্ন সড়কে (হাজী রোড) ধীরগতিতে চলছে যানবাহন। রাস্তার আইল্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছে উৎসুক মানুষ। উৎকণ্ঠা আর হাজারো প্রশ্ন নিয়ে তারা তাকিয়ে আছে রাস্তার ওপারে মুক্তা ফার্মেসির দিকে। সেখানে ফার্মেসিটির ঠিক সামনে তলিয়ে থাকা রাস্তার মধ্যে উপুড় হয়ে পড়ে আছেন কয়েকজন। তারা বেঁচে আছেন কি না তা যাচাইয়ের চেষ্টা করছিলেন দুই যুবক। তবে কাছে যাওয়ার সাহস পাচ্ছিল না তারা। বিদ্যুতায়িত হওয়ার শঙ্কায় দূর থেকে বাঁশ দিয়ে ঠেলে তাদের জাগানোর চেষ্টা চলছিল। এর মধ্যেই পড়ে থাকা ওই মানুষগুলো থেকে একটু দূরে পানিতে তলিয়ে থাকা অবস্থায় এক শিশুর পা ধরে টেনে তোলেন একজন। তিনি দ্রুত বাচ্চাটিকে এক নারীর কাছে তুলে দেন। পরে শিশুটিকে কোলে নিয়ে ছুটতে দেখা যায় এক ব্যক্তিকে। কিন্তু ততক্ষণে শিশুটি বেঁচে আছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।