নিজস্ব প্রতিবেদক :
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফবলেন, বিএনপি-জামায়াত এক হয়ে নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য ষড়যন্ত্র করছে ও কর্মসূচি দিচ্ছে। আগামী নির্বাচনে তাদের জয়লাভের কোনো সম্ভাবনা নেই বলেই তারা ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে। কারণ জনগণ তাদেরকে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করেছে। তারা যেন দেশকে অস্থিতিশীল করতে না পারে।
মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের যৌথসভা শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত গণতন্ত্রের কথা বলে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। তাদের শাসনামলে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল এবং জঙ্গিবাদের রাষ্ট্র কায়েম করেছিল। সেসব ব্যর্থতা ঢাকতে তারা এখন মিথ্যাচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। সরকারের উন্নয়নকে আড়াল করার জন্যই তারা এসব কর্মসূচি পালন করছে।
টানা ১৫ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে দাবি করে আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আজকে বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক সেই সময় স্বাধীনতা পরাজিত শক্তি ও ৭৫ পরবর্তী রাজাকার ও তাদের দোসরদের সমন্বয়ে উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে নানা ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি আসবে না বা নির্বাচনে তারা অংশ নেবে কি না এটা তাদের ব্যাপার। আমরা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিতে চাই, এদেশের জনগণ শান্তি চায়, উন্নয়ন-অগ্রগতি চায়। এ দেশের জনগণ সংবিধানের ধারাবাহিকতা দেখতে চায়। এই দেশে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা নষ্ট করার জন্য যেকোনো অশুভ তৎপরতা অতীতে যেমন জনগণ নস্যাৎ করে দিয়েছে ভবিষ্যতেও নস্যাৎ করে দেবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা চাই নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ। আমরা আশা করি বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেবে। যদি কেউ নির্বাচনের অংশ না নেয়, তাহলে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার অধিকার তাদের আছে।
চলতি মাসে ঢাকায় বিএনপির ৮টি সমাবেশ কর্মসূচি রয়েছে। আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে হানিফ বলেন, আমরা আগেও বলেছি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আমাদের ধারাবাহিক কর্মসূচি থাকবে। আমাদের প্রতিটি কর্মসূচি জাতীয় সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক। এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের সঙ্গে জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি করা, জনগণের আস্থা বৃদ্ধি করা আমাদের লক্ষ্য।
দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, এটি কি সরকারের ব্যর্থতা, এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেকবার বলেছেন, ২০২০ সাল থেকে সারাবিশ্বে করোনা মহামারির দুর্যোগ গেছে। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দুই বছর, সবমিলিয়ে টানা চারটা বছর সারা পৃথিবী দুর্যোগের সময়কাল পার করছে। সারাবিশ্বের অর্থনীতিতে মন্দা। বিশ্বের অনেক দেশে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, বাংলাদেশেও কিছুটা দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। দাম বাড়ায় মানুষ হয়তো কষ্ট পাচ্ছে। আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন সাধারণ মানুষের দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসার জন্য এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে আন্তরিকভাবে কাজ করা হচ্ছে।
রাজধানীতে তৃণমূল বিএনপির প্রথম সম্মেলন ঘিরে আওয়ামী লীগের মনোভাব জানতে চাইলে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক দল, জনগণের দল। এই দেশের প্রত্যেকটা জনগণের রাজনীতি করার অধিকার আছে। গণতান্ত্রিক পরিবেশ আছে বলেই জনগণ, যে কোনো রাজনৈতিক দল তার কর্মসূচি পালন করতে পারছে। আওয়ামী লীগের কিছু করার বা বলার নেই।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের সাধারণ সম্পাদক এখন চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। আমরা আশা করছি তিনি আমাদের এসব কর্মসূচিতে যোগ দিতে পারবেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সদস্য আদম তমিজি হকের বহিষ্কার বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি বিশাল দল। এই দলে লক্ষ-কোটি নেতাকর্মী আছে এবং এই দলের ভেতরে কারো বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ উঠলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ইতোমধ্যে তার ব্যাপারে মহানগর আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিনের বিষয়ে প্রশ্ন করলে জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ সংগঠন। অনেক নেতাকর্মী রয়েছে। তবে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ কেউ করলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আমরা কোনো পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিচ্ছি না। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করছি। তাছাড়া এ মাসেই তো আমাদের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনের কর্মসূচি রয়েছে। সেটাও কি পাল্টাপাল্টি?
এর আগে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের যৌথসভা হয়। বৈঠকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুস সবুর, শিক্ষা সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপা, ঢাকার দুই মহানগরের আবু আহমেদ মন্নাফি ও শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, এস এম মান্নান কচি, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশসহ শীর্ষ নেতারা অংশ নেন।