স্পোর্টস ডেস্ক :
বোলিংয়ে দুনিথ ভেল্লালাগায় পথটা দেখিয়েছিলেন শ্রীলংকাকে। পাঁচ ব্যাটারকে ফিরিয়ে ভারতকে আটকে রেখেছিলেন অল্পতে। জবাবে লঙ্কান ব্যাটাররা দায়িত্ব নিতে পারেনি। শেষে নিজেই বনে গেলেন ব্যাটার। সঙ্গ পেলেন না। দাড়িয়ে থেকে নির্বাক চোখে চেয়ে দেখলেন অপর প্রান্ত থেকে ব্যাটারদের অসহায়ত্ব। ভারতকে ২১৩ রানে আটকে রেখেও লঙ্কানরা ম্যাচটা হারলো ৪১ রানে। গুটিয়ে গেল ১৭২ রানে। তাতে এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠার স্বপ্নটা বেশ কঠিনই হয়ে গেল বর্তমান চ্যাম্পিয়নসদের। অন্যদিকে টানা দ্বিতীয় জয়ে ফাইনালে পা দিয়েছে ভারত।
কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার হয়ে রান তাড়া করতে নামেন পাথুম নিশাঙ্কা ও দিমুথ করুণারত্নে। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই সাফল্যের দেখা পায় ভারত। জাসপ্রিত বুমরাহর বলে ৬ রানে আউট হন নিশাঙ্কা। এরপর ক্রিজে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি কুশল মেন্ডিস ও দিমুথ করুণারত্নেও। এই দুই ব্যাটার ১৫ ও ২ রানে সাজঘরে ফিরেছেন। ২৫ রানে তিন উইকেট হারিয়ে বেশ বিপদের মুখে পড়ে লঙ্কানরা।
সেখান থেকে দলের হাল ধরেন চারিথ আসালঙ্কা ও সাদিরা সামারাবিক্রমা। দুজনে ধীরে ধীরে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন। তবে জুটি খুব বড় হতে দেননি কুলদীপ যাদব। ১৭ রান করা সামারা বিক্রমাকে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন তিনি। নিজের পরের ওভারে আরেক সেট ব্যাটার আসালঙ্কাকে ফেরান কুলদীপ। ২২ রান করেন তিনি। লংকানদের বিপদ আরো বাড়ে যখন মাত্র ৯ রান করে রবীন্দ্র জাদেজার বলে ফেরেন অধিনায়ক দাসুন শানাকা।
দলীয় শতকের আগে ৬ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে একরকম ছিটকে যায় শ্রীলঙ্কা। তবে সেখান থেকে পাল্টা প্রতিরোধ গড়েছেন ধনঞ্জয় ডি সিলভা ও ওয়েল্লালাগে। তাদের ব্যাটে জয়ের স্বপ্ন দেখতে থাকে লঙ্কানরা। তবে দলীয় ১৬২ রানে ডি সিলভা আউট হলে ভাঙে ৬৩ রানের জুটি। ৬৬ বলে ৪১ করেন তিনি। শেষ দিকে দুনিথ ওয়েল্লালাগে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ভারতীয় বোলারদের তোপে ১৭২ রানে থামে লঙ্কানদের ইনিংস।
৪৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে জয়ের অন্যতম কারিগর ছিলেন বামহাতি রিস্ট স্পিনার কুলদীপ। এদিন দেড়শ উইকেটের মাইলফলকও ছুঁয়েছেন তিনি। দুটি করে নেন বুমরা, রবীন্দ্র জাদেজা। একটি করে শিকার মোহাম্মদ সিরাজ ও হার্দিক পান্ডিয়ার।
শুরুতে ব্যাট করতে নেমে দারুণ করছিলেন ভারতের দুই ওপেনার। পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়েই ভারত করে ৬৫ রান। আগের ম্যাচের সাড়ে তিনশ ছাড়ানো সংগ্রহ পাওয়ার পর এ ম্যাচেও বড় রানের আশা জেগেছিল ভারতের। কিন্তু স্পিনাররা বোলিংয়ে আসতেই বদলে যায় প্রেক্ষাপট।
নিজের প্রথম বলেই শুভমন গিলকে ফেরান ভেল্লালাগা। ২৫ বলে ৯ রান করে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরত যান শুভমন গিল। নিজের পরের দুই ওভারেও উইকেট তুলে নেন ভেল্লালাগা। এই স্পিনার অনেকটা একাই ধ্বসিয়ে দেন ভারতের টপ-অর্ডার। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি পাওয়া বিরাট কোহলি ১২ বলে ৩ রান করে শর্ট মিডউইকেটে দাসুন শানাকার হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন তার বলেই।
ভেল্লালাগের তৃতীয় শিকার হন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তার নিচু হওয়া বল খেলার কোনো উপায়ই ছিল না তার। ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৪৮ বলে ৫৩ রান করে সাজঘরে ফিরতে হয় রোহিতকে। ৮০ রানে কোনো উইকেট না হারানো ভারত ১১ রানের ভেতরে হারিয়ে ফেলে তিন উইকেট। এ অবস্থা থেকে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন ইষান কিষান ও লোকেশ রাহুল।
কিন্তু এবারও ভারতের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ান সেই ভেল্লালাগা। এবার ৪৪ বলে ৩৯ রান করা রাহুলের ক্যাচ নিজেই নেন তিনি। কিষাণের সঙ্গে তার ৬৩ রানের জুটিও ভেঙে যায়। এরপর আবারও ভারতের ব্যাটিংয়ে ধ্বস নামে।
তবে এবার অনিয়মিত বোলার চারিথ আশালাঙ্কার বলে বিভ্রান্ত হন ভারতীয় ব্যাটাররা। এর আগে ৩৮ ওয়ানডের ক্যারিয়ারে ৬ ইনিংসে বল করেছিলেন তিনি, উইকেট ছিল স্রেফ একটি। কিন্তু সেই আশালাঙ্কাকে যেন খেলতেই পারছিলেন না ভারতের ব্যাটাররা, বলও টার্ন করছিল বেশ।
আশালাঙ্কা শুরুটা করেন কিষানকে দিয়ে। ৬১ বলে ৩৩ রান করে ওয়েল্লালাগের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। এরপর রবীন্দ্র জাদেজা, কুলদ্বীপ যাদব ও জসপ্রিত বুমরাহকে ফেরান আশালাঙ্কা। আরেকদিকে হার্দিক পান্ডিয়াকে ফিরিয়ে নিজের ফাইফার পূর্ণ করেন ওয়েলেলগে।
১৮৬ রানে ৯ উইকেট হারিয়ে দুইশর আগেই অলআউট হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় ছিল ভারত। মাঝে এক দফা বৃষ্টির পর সেটি হতে দেননি অক্ষর প্যাটেল। ৩৬ বলে ২৬ রান করে শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হন তিনি। ১০ ওভারে স্রেফ ৪০ রান খরচায় আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম ফাইফার পান ২০ বছর বয়সী ভেল্লালাগা। ভারতের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো দশ উইকেটের সবগুলোই স্পিনাররা নেওয়ার কীর্তি গড়ে কোনো দল।
দুনিথ ভেল্লালাগের স্পিন বিষে নীল করে প্রতিপক্ষ ভারতের উইকেট শিকার করেছেন পাঁচটি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এই প্রথম ফাইফারের দেখা পেলেন লঙ্কান এ তরুণ তুর্কি। মাঠের এমন দুরন্ত পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতার কারণে ভেল্লালাগেকে শ্রীলঙ্কার ভবিষ্যৎ ক্যাপ্টেন হিসেবে দেখছেন অনেকে। তার সঙ্গে ৪ উইকেট নিয়েছেন চারিথ আসালাঙ্কা। একটি উইকেট নিয়েছেন মহেশ থিকসেনা।