স্পোর্টস ডেস্ক :
ঘরের মাঠে প্রায় অর্ধলক্ষ দর্শক যেন এই মুহূর্তের সাক্ষী হতেই এসেছিলেন। ব্রাজিলের মত ফুটবল ঐতিহ্যের দেশে নতুন এক রেকর্ড হবে। সর্বকালের সেরার তকমা পাওয়া পেলেকে ছাড়িয়ে যাবেন এই প্রজন্মের একজন তারকা। নেইমার জুনিয়রের এমন কীর্তির অপেক্ষায় অবশ্য ছিল পুরো ফুটবল দুনিয়া।
দীর্ঘসময় ছিলেন ইনজুরিতে। এ সময়ের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে যোগ দিয়েছেন সৌদি ক্লাব আল হিলালে। যদিও সৌদি ক্লাবের হয়ে এখনও অভিষেক হয়নি ব্রাজিল তারকার। কিন্তু ইউরোপিয়ান ফুটবল ছেড়ে দিলেও যে তার পায়ের ধার মোটেও কমেনি, তা আরও একবার দেখিয়ে দিলেন তিনি।
বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামলো ব্রাজিল। প্রতিপক্ষ বলিভিয়া। ঘরের মাঠে বলিভিয়ানদের পেয়ে রীতিমত গোল উৎসবে মেতেছিলো ব্রাজিল। জোড়া গোল করলেন নেইমার। এর মধ্যে একটি ছিল চোখ ধাঁধানো। প্রায় মাঝ মাঠ থেকে একক প্রচেষ্টায় বেশ কয়েকজনকে কাটিয়ে গোল করলেন তিনি। বলিভিয়াকে ৫-১ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে বিশ্বকাপ বাছাই শুরু করলো সেলেসাওরা।
দুর্ভাগ্য নেইমারের, হ্যাটট্রিক হলো না তার। প্রথমার্ধেই পেনাল্টি মিস করেছিলেন তিনি। কিন্তু এই পেনাল্টি মিস করাটাই যেন তাতিয়ে দিয়েছিলো তাকে। নেইমারের সঙ্গে জোড়া গোল করলেন রিয়াল মাদ্রিদের ফুটবলার রদ্রিগোও। বাকি গোলটি এসেছে বার্সা তারকা রাফিনহার কাছ থেকে। বলিভিয়ার হয়ে একটি গোল করেন ভিক্টর আবরেগো।
এই জোড়া গোলে কিংবদন্তি পেলেকে ছাড়িয়ে গেলেন নেইমার। ব্রাজিলের হয়ে এখন নেইমারের গোল সংখ্যা ৭৯টি। পেলের গোল ছিল ৭৭টি।
এরপর গোল করার আরও এক মোক্ষম সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছেন নেইমার। ১৭ মিনিটের মাথায় নিজেদের ডি বক্সে হ্যান্ড করে ফেলেন বলিভিয়ার ফুটবলার আদ্রিয়ান জুসিনো। ফলে পেনাল্টি পায় ব্রাজিল। তবে স্পটকিকে জালের দেখা খুঁজে পেতে ব্যর্থ হন পিএসজি ছেড়ে এ মৌসুমেই আল হিলালে যোগ দেয়া নেইমার।
এদিকে পেনাল্টিতে গোল না পেলেও লিড নিতে খুব বেশি সময় লাগেনি ব্রাজিলের। নেইমারের পেনাল্টি মিসের মিনিট দশেক পরই সেলেসাওদের এগিয়ে দেন রদ্রিগো গুজ। এরপর এই রিয়াল মাদ্রিদ তারকা আরও একবার গোল করে এগিয়ে দিয়েছেন দলকে। তবে তার আগেই ব্যবধান দ্বিগুন করেছেন রাফিনহা। কিন্তু এ দুটি গোলই হয়েছে ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধ্বে।
এর মাঝে ৪৭তম মিনিটে গোল করেন রাফিনহা। ম্যানইউ তারকা অ্যান্টোনির পরিবর্তে দলে সুযোগ পেয়েছিলেন এই বার্সা তারকা। সুযোগটা ভালোভাবেই কাজে লাগালেন তিনি। নেইমারের পাস থেকে বল পেয়ে বক্সের এক প্রান্ত থেকে দারুণ এক শটে গোল করেন তিনি।
আর নিজের করা রদ্রিগো পূরণ করেছেন ৫৩ মিনিটে। পুচকে বলিভিয়ার সঙ্গে দারুণ ফুটবল খেলেই বড় জয়ের পথে ছিল পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।
তবে আগ্রহের কেন্দ্রে যেন ছিলেন নেইমার। তবে ৬১ মিনিটে আর সুযোগ হাতছাড়া হলো না। ডিবক্সের ভেতর অনেকটা জটলার মধ্যেই রদ্রিগোর পা ঘুরে বল আসে তার সামনে। ফার্স্ট টাইম শটে গোল করে রেকর্ডবুকে নিজের নাম লেখালেন এই ব্রাজিলিয়ান তারকা। বামপ্রান্ত থেকে আক্রমণের সূত্র ধরে বল আসে বলিভিয়া ডিবক্সে। রাফিনহার ব্যাকপাস থেকে রদ্রিগোই শট নিতে চেয়েছেন, তবে শেষ মুহূর্তে বল ঠেলে দেন নেইমারের কাছে। দারুণ শটে দলের চতুর্থ এবং নিজের রেকর্ডগড়া গোল করেন ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের এই পোস্টারবয়।
এদিকে নেইমারের পর গোলের দেখা পেয়েছে বলিভিয়াও। ৭৮ মিনিটের সময় আজ দেশের হয়ে একমাত্র গোলটি করেন বলিভিয়ার ফুটবলার ভিক্টর আব্রেগো। তবে তার এ গোলে পরাজয়ের গ্লানি আরও বেড়েছে দেশটির। কেননা ম্যাচের একেবারে শেষদিকে আরও এক গোলের দেখা পেয়েছে পাঁচবারের বিশ্বজয়ীরা, আর দলের হয়ে পঞ্চম গোলটি করেছেন নেইমার।
তবে ৯০+৩ মিনিটে তার করা গোলটি ছিল সত্যি চোখে লেগে থাকার মত, চোখ ধাঁধানো। বাম পাশে মাঝ মাঠে বল পেয়ে এককভাবে তিনি টেনে নিয়ে গেলেন। বেশ কয়েকজনকে কাটিয়ে এককভাবেই গোলটি করলেন তিনি। ফলে শেষ পর্যন্ত বলিভিয়াকে বিধ্বস্ত করে ৫-১ গোলের বড় জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে ব্রাজিল। এমন জয়ে বিশ্বকাপ বাছাই দুর্দান্ত ভাবেই শুরু হল ব্রাজিলের।