নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপি নির্বাচন চায় তবে এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব নয়, সেটা প্রমাণিত হয়েছে। তাই সরকারের পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) জাতীয়তাবাদী মহিলা দল প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে এক র্যালিপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আপনাদেরকে শপথ নিতে হবে যে, আমরা যেকোনো মূল্যে এই সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার করতে চাই। নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চাই। আমাদের কথা খুব পরিষ্কার। আমরা কোনো সংঘাত চাই না, আমরা কোনো গোলযোগ চাই না।
তিনি বলেন, আমরা দেশে সুষ্ঠু অবাধ গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে চাই। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আজকে আপনারা সামনে এগিয়ে আসুন, মানুষ এগিয়ে আসছে, জনগণ বেরিয়ে আসছে। এই সরকারের পতন অনিবার্য এবং জনগণের সরকার অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত হবে। দেশনেত্রী মুক্তি পাবেন, আমাদের নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনব, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য করব।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজ নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে, নির্বাচন আমরা চাই সবাই যেন ভোট দিতে পারে। কিন্তু এই সরকারের অধীনে দু’টি নির্বাচন হয়েছে তা সুষ্ঠু হয়নি। তাই আমরা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। একটা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে চাই। যেকোনো মূল্যে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এই সরকার জনগণের সেবা করা জন্য ক্ষমতায় আসেনি, তারা এসেছে লুটপাট আর দুর্নীতি করতে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচিত সরকার নয়, তারা দেশের গণতন্ত্র বিলীন করে দিয়েছে। তারা কাণ্ডজ্ঞানহীন কথাবার্তা বলে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে আজ দেশকে ভয়াবহ অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসার পর তিনি যে বক্তব্য দিচ্ছেন তাতে পরিষ্কার হয়, বাংলাদেশ আজ বৃহৎ শক্তিগুলোর মর্যাদার লড়াইয়ের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এটা অত্যন্ত ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে। এজন্য দায়ী আওয়ামী লীগ সরকার।
তিনি মনে করেন, এর জন্য বর্তমান সরকার সম্পূর্ণ দায়ী। তারা (সরকার) অবিবেচকের মতো দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে কথা-বার্তা বলে কূটনীতিকে পরিচালিত করে দেশকে এইরকম একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে জন্য অসুস্থ অবস্থায়ও লড়াই করে যাচ্ছেন। আজ তাকে গৃহবন্দী অবস্থায় রাখা হয়েছে।
নেতা-কর্মীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, জনগণ এগিয়ে আসছে। এ সরকারের পতন ঘটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, আজ জনগণের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আজকে জিনিস-পত্রের দাম, তেল-লবণ-পেঁয়াজ-ওষুধের দাম এমন একটা পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে, নারীরা হিমশিম খাচ্ছে সংসার চালাতে গিয়ে। বিদ্যুতের দাম বেড়েছে, জ্বালানির দাম বেড়েছে, ওষুধের দাম বেড়েছে।
সরকারের ব্যর্থতায় ডেঙ্গু মহামারিতে পরিণত হয়েছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ডেঙ্গু একটা মহামারি হিসেবে দেখা দিয়েছে। এই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার। কারণ, তারা তো জনগণের সেবা করতে আসেনি, লুটপাট করতে এসেছে। এমনকি সিটি করপোরেশনের মেয়ররা যে ওষুধ আনল, সেখানেও তো তারা চুরি করল।
মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের সঞ্চালনায় সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, রাশেদা বেগম হীরা, নেওয়াজ হালিমা আরলী, ইয়াসমীন আরা হক, শাম্মী আখতার, সাবিনা ইয়াসমিন, নায়েবা ইউসুফ, রুমা আখতার বক্তব্য দেন।