নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীর কলাবাগানে শিশু গৃহকর্মী হেনা মাঝে মাঝে গৃহকর্ত্রী সাথী পারভীন ডলির বাচ্চার খাবার খেয়ে ফেলতো। এজন্য তাকে নির্যাতন করে হেনাকে হত্যা করেন সাথী পারভীন ডলি। তাকে হত্যার পর মোবাইল রেখে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফেরা করেন তিনি। এরপর চলে যান যশোরে।
রোববার (০৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে ডিএমপির রমনা বিভাগের ডিসি আশরাফ হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
আশরাফ হোসেন বলেন, ডলি পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে সে গৃহকর্মীকে লাঠি আবার কখনো খুন্তী দিয়ে পিটিয়েছে। সেদিন মেয়েটি তার বাচ্চার জন্য খাবার খেয়ে ফেলায় সে মারধর করে। মেয়েটিকে নির্যাতনের ফলে মারা যায়।
তিনি বলেন, এত নৃশংসভাবে তাকে মারধর করা হয়েছে যার চিহ্ন পাওয়া যায় তার বেডের মধ্যে। সেখানে মেয়েটির পায়খানা পাওয়া গেছে। তার নির্যাতন সইতে না পেরে মেয়েটি বেডে পায়খানা করে ফেলে।
ডিএমপির এই কর্মকর্তা জানান, ডলি একজন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার। তিনি একজন সার্ভেয়ার হিসেবে এলজিইডিতে কর্মরত ছিলেন। তার এক স্বামী ডাক্তার ছিল। আরেক স্বামী ছিল এলজিইডির গাড়ি চালক। ডলি প্রথমে এলজিইডিতে কম্পিউটার টাইপিং পোস্টে ঢোকেন। এরপর পড়াশোনা করে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগদান করেন। গৃহকর্মী হেনাকে ডলি গত তিন বছর আগে বিসিকের একজন কর্মচারীর মাধ্যমে মুক্তাগাছা থেকে তার বাসায় এনেছিলেন।
তিনি জানান, ডলি গ্রেফতার এড়াতে তার মোবাইল ফোন বাসায় রেখে পালিয়ে যান। তাকে যেনো কোনোভাবে প্রযুক্তির আওতায় ধরা না যায় তার জন্য তিনি পালানোর সময়টুকুতে বিভিন্ন ব্যক্তির নম্বর থেকে স্বজনদের সাথে ফোনে কথা বলতেন।
এসময় ডিসিকে প্রশ্ন করা হয় ডলি নিজেকে সরকার দলীয় নেত্রী বলে ভবনটিতে থাকা লোকজনদের পরিচয় দিতেন। এব জবাবে তিনি বলেন, আমরা তাকে অপরাধী হিসেবে দেখছি, কোনো রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে নয়।
এর আগে রাজধানীর কলাবাগানে গৃহকর্মী হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত সাথী আক্তার পারভীন (ডলি)-কে গ্রেফতার করে পুলিশ। শুক্রবার (০১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ডলিকে যশোর কোতোয়ালী থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। এসময় পুলিশকে কল করে তাদের হাতে তুলে দেন তার সাবেক স্বামী। গতকাল শনিবার রাতে তাকে ঢাকায় আনা হয়।
গত ২৬ আগস্ট কলাবাগান সেন্ট্রাল রোডে শিশু গৃহকর্মী হেনাকে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করলে ডলি পলাতক ছিলেন। ঘটনার সাত দিন পর তাকে গ্রেফতার করল পুলিশ।
জানা গেছে, ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিলেন ডলি। শুক্রবার ডলি তার সাবেক স্বামীর সঙ্গে যশোর শহরের চেম্বারে উপস্থিত হন। এসময় তাকে কৌশলে আটকানো হয়। এরপর উপস্থিত লোকের সহায়তায় যশোর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
গত ২৬ আগস্ট কলাবাগানের সেন্ট্রাল রোডের ৭৭ নম্বর ভবনের দ্বিতীয় তলায় ফ্ল্যাট থেকে গৃহকর্মী হেনার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বাসায় সাথী আক্তার পারভীন, তার শিশু সন্তান আর ওই গৃহকর্মীসহ বসবাস করে আসছিলেন। হেনা ওই বাসায় কাজ করতেন। পুলিশের ধারণা, গত ২৫ আগস্ট হেনাকে নির্যাতন করে হত্যার পর পালিয়ে যান ডলি।
হেনা মারা যাওয়ার পর রান্নার সবকিছু আর মোবাইল ফেলে লাপাত্তা হয়ে যান গৃহকত্রী ডলি। পরদিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাড়ি মালিক সোসাইটির লোকজন নিয়ে ভবনটির দ্বিতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতর থেকে গৃহকর্মী হেনার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। হেনার শরীরে অনেক নতুন ও পুরনো আঘাতের চিহ্ন ও মুখে ফেনা, শরীর ফোলা পায় পুলিশ। যা সুরতহালে উল্লেখ করা হয়।