Dhaka মঙ্গলবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৭ শিশু হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত ব্রিটিশ নার্স

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

সাত নবজাতককে হত্যা করার এবং আরও ছয়জনকে হত্যার চেষ্টা অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন ব্রিটিশের একটি হাসপাতালের নার্স। ১০ মাস বিচার শেষে শুক্রবার ম্যাঞ্চেস্টার ক্রাউন কোর্ট তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে।

শুক্রবার (১৮ আগস্ট) ব্রিটিশ গণমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

তিনি প্রথম ৫টি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিলেন ২০১৫ এর জুন থেকে অক্টোবর এর মধ্যে এবং তখন তার সম্পর্কে সতর্কতা দেওয়ার পরও, ২০১৬ সালের জুনে আরো দুই শিশুকে হত্যা করেন তিনি। এই ঘটনাকে ব্রিটেনের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ শিশু সিরিয়াল কিলারের ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

হাসপাতালের কর্মকর্তারা লেটবির বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ তদন্তে ব্যর্থ হয়েছিলেন। হাসপাতালটির নবজাতক ওয়ার্ডে তিনি কর্মরত ছিলেন।

যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় শিশু সিরিয়াল কিলার লুসি লেটবি, এ ঘটনা সামনে আসার পর এমনটাই বলা হচ্ছে। খুবই মর্মান্তিকভাবে শিশুদের হত্যা করেন তিনি। প্রতিটি শিশুকে তিনি বিভিন্ন পন্থায় হত্যা করেছেন, এর উদ্দেশ্য ছিল ধরা না পড়া। ফলে সহজেই সবাইকে বোকা বানাতে পেরেছেন তিনি।

সবাই ভাবতো প্রাকৃতিক কারণে শিশুদের মৃত্যু ঘটেছে।

উত্তর ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার ক্রাউন কোর্ট শুনানিতে বলেন, লুসি লেটবি (৩৩) তার দায়িত্বে থাকা শিশুদের রক্তে এবং পেটে বাতাস প্রবেশ করাতেন। তাদের অতিরিক্ত দুধ খাওয়ানো এবং শারীরিকভাবে কষ্ট দেওয়াসহ শিশুদের শরীরে ইনসুলিনের মাধ্যমে বিষ প্রয়োগ করতেন। তবে আদালতের আদেশে নিহত শিশুদের পরিচয় গোপন রাখা হয়।

পুলিশ তদন্তের সময় লেটবির বাড়ি থেকে হাতে লেখা একটি নোট উদ্ধার করে, যাতে লেখা ছিল ‘আমি খারাপ, আমি এটা করেছি।’ ডাক্তারদেরও মুখ বন্ধ কারার চেষ্টাও করেছেন সেই নার্স। নার্স লুসি লেটবি শিশুদের হত্যা করতে পারে, এমন সতর্কতা থাকা সত্ত্বেও হাসপাতালটি পুলিশকে জানাতে বিলম্ব করেছিল।

নবজাতক ইউনিটের প্রধান পরামর্শদাতা ডঃ ব্রেয়ারি বলেছেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রথমে এটি বিশ্বাস করেননি। সংবাদ সংস্থা বিবিসির তদন্তে জানা গেছে, হাসপাতালের শীর্ষ ব্যবস্থাপক ডাক্তারদের বলেছিলেন, লেটবির কাছে ক্ষমা চাইতে এবং তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ তুলে নিতে।

শিশুদের হত্যা করছেন নার্স এমন সন্দেহ করা সত্বেও, একজন পরামর্শদাতাকে লেটবির বিষয়ে মধ্যস্থতা করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

এরপর লেটবিকে ঝুঁকি এবং রোগীর সুরক্ষা অফিসে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেখানে নবজাতক ওয়ার্ডের সকল সংবেদনশীল নথিগুলো তার হাতের নাগালে ছিল এবং হাসপাতালের সিনিয়র পরিচালকদের ছায়ায় ছিলেন, যারা লেটবিকে নিয়ে তদন্ত করছিলেন। কীভাবে নবজাতকদের মৃত্যু হয়েছে, তার যথাযথ প্রতিবেদন করা হয়নি তখন। যার অর্থ এত নবজাতক মৃত্যুর পরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তদন্ত করতে ব্যর্থ হয়েছিল। শিশুদের মৃত্যুর পরে দায়িত্ব নেওয়া একজন ম্যানেজার বিবিসিকে এসব তথ্য দিয়েছেন।

কীভাবে লুসি লেটবি এতদিন ধরে এত শিশুকে হত্যা ও ক্ষতি করতে সক্ষম হয়েছেন, তা নিয়ে তদন্ত করছে বিবিসি প্যানোরমা এবং বিবিসি নিউজ। ডক্টর স্টিফেন ব্রেইরি প্রথম ২০১৫ সালের অক্টোবরে লেটবি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেনে এবং হাসপাতালের নথিপত্র পরীক্ষা করেছিলেন। কিন্তু তদন্তটি ব্যর্থ হয়। তখন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ব্রেরি বলেছেন, ‘আমরা যতটা সম্ভব পুঙ্খানুপুঙ্খ হওয়ার চেষ্টা করেছি। সেখানে দেখা গেছে, লুসি লেটবি তিনটি শিশুর মৃত্যুর সময়ই সেখানে দায়িত্বে ছিলেন। তখন আমি বলেছিলাম, ওহ না! এটা লুসি হতে পারে না। লুসি খারাপ নয়।

তিনি আরো বলেন, ওই তিনটি মৃত্যুর মধ্যে কোনো মিল ছিল না। আলাদা কারণে শিশুগুলোর মারা যায়। তাই ব্রেরিসহ কেউই এই ঘটনা সন্দেহের চোখে দেখেনি প্রথমে। কিন্তু অক্টোবর ২০১৫-এর মধ্যেই ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয়। আরো দুটি শিশু মারা গিয়েছিল এবং তখনও সেখানে লেটবি দায়িত্বে ছিলেন। তখন ডঃ ব্রেরি খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন এবং বিশ্বাস করতে শুরু করেন লেটবি বাচ্চাদের ক্ষতি করছে। তিনি তখন ইউনিট ম্যানেজার এরিয়ান পাওয়েলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তার উদ্বেগের বিষয়টি জানান। কারণ মৃত্যুগুলো অপ্রত্যাশিত ছিল।

ডঃ ব্রেরি ২০১৫ সালের একই মাসে অক্টোবরে লেটবি সম্পর্কে তার উদ্বেগগুলো নার্সিং পরিচালক অ্যালিসন কেলিকে জানান। কিন্তু তিনিও বিশ্বাস করেননি। ডঃ ব্রেয়ারির সহকর্মী পরামর্শদাতারাও লেটবিকে নিয়ে চিন্তিত ছিলেন।

ব্রিটেনের ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস (সিপিএস) এক বিবৃতিতে বলেছে, ২০১৫ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে কাউন্টেস অফ চেস্টার হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডে লেটবি গোপনে ১৩টি শিশুকে হত্যা চেষ্টা করেন। শুধুমাত্র জুন মাসেই দুই সপ্তাহের ব্যবধানে তিনটি শিশু মারা যায়। মৃত্যুগুলো অপ্রত্যাশিত ছিল।

ভুক্তভোগীদের পরিবার বলেছে, তারা হয়তো কখনোই সত্যিটা জানতে পারবে না কেন এমন হয়েছে। অবিভাবকদের একটি যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘একটি শিশু হারানো মানে একটি হৃদয়বিদারক অভিজ্ঞতা, যেটির মধ্য দিয়ে কোনো অভিভাবকই যেতে চায় না।’ বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ‘কিন্তু এই বিশেষ পরিস্থিতিতে একটি শিশু হারানো বা একটি শিশুর ক্ষতি করা অকল্পনীয়।’

মামলার রায়ের দিন আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে অস্বীকার করেন লুসি। প্রায় ৭৬ ঘণ্টার দীর্ঘ আলোচনার পর ৮ আগস্ট বিচারক প্যানেল প্রথম অভিযোগের রায় পড়েছিলেন। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন লুসি। ১১ আগস্ট দোষী সাব্যস্ত করে দ্বিতীয় রায় পড়ার সময়ও মাথা নিচু করে কেঁদেছিলেন তিনি। ২০২২ সালের অক্টোবরে লুসি লেটবির বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। সে সময় প্রসিকিউশন তাকে ‘বিপথগামী’ হিসেবে আখ্যা দেয়। হাসপাতালে শিশুদের অকাল মৃত্যু উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে দুই বছরের তদন্তের পর চেস্টারের পুলিশ লুসিকে অভিযুক্ত করে।

১০ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এই বিচারকে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে দীর্ঘতম হত্যা-সংক্রান্ত বিচার বলা হচ্ছে। অবশেষে এতদির পর ৭ খুনের জন্য ওই নার্সকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। আগামী সোমবার ম্যানচেস্টার ক্রাউন কোর্টে লুসি লেটবির দণ্ড ঘোষণা করা হবে। সূত্র : বিবিসি, সিএনএন।

আবহাওয়া

৭ শিশু হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত ব্রিটিশ নার্স

প্রকাশের সময় : ১২:৪৬:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : 

সাত নবজাতককে হত্যা করার এবং আরও ছয়জনকে হত্যার চেষ্টা অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন ব্রিটিশের একটি হাসপাতালের নার্স। ১০ মাস বিচার শেষে শুক্রবার ম্যাঞ্চেস্টার ক্রাউন কোর্ট তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে।

শুক্রবার (১৮ আগস্ট) ব্রিটিশ গণমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

তিনি প্রথম ৫টি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিলেন ২০১৫ এর জুন থেকে অক্টোবর এর মধ্যে এবং তখন তার সম্পর্কে সতর্কতা দেওয়ার পরও, ২০১৬ সালের জুনে আরো দুই শিশুকে হত্যা করেন তিনি। এই ঘটনাকে ব্রিটেনের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ শিশু সিরিয়াল কিলারের ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

হাসপাতালের কর্মকর্তারা লেটবির বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ তদন্তে ব্যর্থ হয়েছিলেন। হাসপাতালটির নবজাতক ওয়ার্ডে তিনি কর্মরত ছিলেন।

যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বড় শিশু সিরিয়াল কিলার লুসি লেটবি, এ ঘটনা সামনে আসার পর এমনটাই বলা হচ্ছে। খুবই মর্মান্তিকভাবে শিশুদের হত্যা করেন তিনি। প্রতিটি শিশুকে তিনি বিভিন্ন পন্থায় হত্যা করেছেন, এর উদ্দেশ্য ছিল ধরা না পড়া। ফলে সহজেই সবাইকে বোকা বানাতে পেরেছেন তিনি।

সবাই ভাবতো প্রাকৃতিক কারণে শিশুদের মৃত্যু ঘটেছে।

উত্তর ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার ক্রাউন কোর্ট শুনানিতে বলেন, লুসি লেটবি (৩৩) তার দায়িত্বে থাকা শিশুদের রক্তে এবং পেটে বাতাস প্রবেশ করাতেন। তাদের অতিরিক্ত দুধ খাওয়ানো এবং শারীরিকভাবে কষ্ট দেওয়াসহ শিশুদের শরীরে ইনসুলিনের মাধ্যমে বিষ প্রয়োগ করতেন। তবে আদালতের আদেশে নিহত শিশুদের পরিচয় গোপন রাখা হয়।

পুলিশ তদন্তের সময় লেটবির বাড়ি থেকে হাতে লেখা একটি নোট উদ্ধার করে, যাতে লেখা ছিল ‘আমি খারাপ, আমি এটা করেছি।’ ডাক্তারদেরও মুখ বন্ধ কারার চেষ্টাও করেছেন সেই নার্স। নার্স লুসি লেটবি শিশুদের হত্যা করতে পারে, এমন সতর্কতা থাকা সত্ত্বেও হাসপাতালটি পুলিশকে জানাতে বিলম্ব করেছিল।

নবজাতক ইউনিটের প্রধান পরামর্শদাতা ডঃ ব্রেয়ারি বলেছেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রথমে এটি বিশ্বাস করেননি। সংবাদ সংস্থা বিবিসির তদন্তে জানা গেছে, হাসপাতালের শীর্ষ ব্যবস্থাপক ডাক্তারদের বলেছিলেন, লেটবির কাছে ক্ষমা চাইতে এবং তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ তুলে নিতে।

শিশুদের হত্যা করছেন নার্স এমন সন্দেহ করা সত্বেও, একজন পরামর্শদাতাকে লেটবির বিষয়ে মধ্যস্থতা করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

এরপর লেটবিকে ঝুঁকি এবং রোগীর সুরক্ষা অফিসে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেখানে নবজাতক ওয়ার্ডের সকল সংবেদনশীল নথিগুলো তার হাতের নাগালে ছিল এবং হাসপাতালের সিনিয়র পরিচালকদের ছায়ায় ছিলেন, যারা লেটবিকে নিয়ে তদন্ত করছিলেন। কীভাবে নবজাতকদের মৃত্যু হয়েছে, তার যথাযথ প্রতিবেদন করা হয়নি তখন। যার অর্থ এত নবজাতক মৃত্যুর পরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তদন্ত করতে ব্যর্থ হয়েছিল। শিশুদের মৃত্যুর পরে দায়িত্ব নেওয়া একজন ম্যানেজার বিবিসিকে এসব তথ্য দিয়েছেন।

কীভাবে লুসি লেটবি এতদিন ধরে এত শিশুকে হত্যা ও ক্ষতি করতে সক্ষম হয়েছেন, তা নিয়ে তদন্ত করছে বিবিসি প্যানোরমা এবং বিবিসি নিউজ। ডক্টর স্টিফেন ব্রেইরি প্রথম ২০১৫ সালের অক্টোবরে লেটবি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেনে এবং হাসপাতালের নথিপত্র পরীক্ষা করেছিলেন। কিন্তু তদন্তটি ব্যর্থ হয়। তখন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ব্রেরি বলেছেন, ‘আমরা যতটা সম্ভব পুঙ্খানুপুঙ্খ হওয়ার চেষ্টা করেছি। সেখানে দেখা গেছে, লুসি লেটবি তিনটি শিশুর মৃত্যুর সময়ই সেখানে দায়িত্বে ছিলেন। তখন আমি বলেছিলাম, ওহ না! এটা লুসি হতে পারে না। লুসি খারাপ নয়।

তিনি আরো বলেন, ওই তিনটি মৃত্যুর মধ্যে কোনো মিল ছিল না। আলাদা কারণে শিশুগুলোর মারা যায়। তাই ব্রেরিসহ কেউই এই ঘটনা সন্দেহের চোখে দেখেনি প্রথমে। কিন্তু অক্টোবর ২০১৫-এর মধ্যেই ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয়। আরো দুটি শিশু মারা গিয়েছিল এবং তখনও সেখানে লেটবি দায়িত্বে ছিলেন। তখন ডঃ ব্রেরি খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন এবং বিশ্বাস করতে শুরু করেন লেটবি বাচ্চাদের ক্ষতি করছে। তিনি তখন ইউনিট ম্যানেজার এরিয়ান পাওয়েলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তার উদ্বেগের বিষয়টি জানান। কারণ মৃত্যুগুলো অপ্রত্যাশিত ছিল।

ডঃ ব্রেরি ২০১৫ সালের একই মাসে অক্টোবরে লেটবি সম্পর্কে তার উদ্বেগগুলো নার্সিং পরিচালক অ্যালিসন কেলিকে জানান। কিন্তু তিনিও বিশ্বাস করেননি। ডঃ ব্রেয়ারির সহকর্মী পরামর্শদাতারাও লেটবিকে নিয়ে চিন্তিত ছিলেন।

ব্রিটেনের ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস (সিপিএস) এক বিবৃতিতে বলেছে, ২০১৫ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে কাউন্টেস অফ চেস্টার হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডে লেটবি গোপনে ১৩টি শিশুকে হত্যা চেষ্টা করেন। শুধুমাত্র জুন মাসেই দুই সপ্তাহের ব্যবধানে তিনটি শিশু মারা যায়। মৃত্যুগুলো অপ্রত্যাশিত ছিল।

ভুক্তভোগীদের পরিবার বলেছে, তারা হয়তো কখনোই সত্যিটা জানতে পারবে না কেন এমন হয়েছে। অবিভাবকদের একটি যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘একটি শিশু হারানো মানে একটি হৃদয়বিদারক অভিজ্ঞতা, যেটির মধ্য দিয়ে কোনো অভিভাবকই যেতে চায় না।’ বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ‘কিন্তু এই বিশেষ পরিস্থিতিতে একটি শিশু হারানো বা একটি শিশুর ক্ষতি করা অকল্পনীয়।’

মামলার রায়ের দিন আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে অস্বীকার করেন লুসি। প্রায় ৭৬ ঘণ্টার দীর্ঘ আলোচনার পর ৮ আগস্ট বিচারক প্যানেল প্রথম অভিযোগের রায় পড়েছিলেন। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন লুসি। ১১ আগস্ট দোষী সাব্যস্ত করে দ্বিতীয় রায় পড়ার সময়ও মাথা নিচু করে কেঁদেছিলেন তিনি। ২০২২ সালের অক্টোবরে লুসি লেটবির বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। সে সময় প্রসিকিউশন তাকে ‘বিপথগামী’ হিসেবে আখ্যা দেয়। হাসপাতালে শিশুদের অকাল মৃত্যু উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে দুই বছরের তদন্তের পর চেস্টারের পুলিশ লুসিকে অভিযুক্ত করে।

১০ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এই বিচারকে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে দীর্ঘতম হত্যা-সংক্রান্ত বিচার বলা হচ্ছে। অবশেষে এতদির পর ৭ খুনের জন্য ওই নার্সকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। আগামী সোমবার ম্যানচেস্টার ক্রাউন কোর্টে লুসি লেটবির দণ্ড ঘোষণা করা হবে। সূত্র : বিবিসি, সিএনএন।