Dhaka মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আর কারো কাছে হাত পেতে ঝাড়ি খেতে হবে না : প্রধানমন্ত্রী

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময় : ০১:৩৬:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৩
  • ১৮৯ জন দেখেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণে শোকের মাসে সর্বজনীন পেনশন চালু করা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যারা বয়স্কভাতা পান না, তারাও এই সর্বজনীন পেনশনের সুবিধা পাবেন। আর কারো কাছে হাত পেতে ঝান্ডা (ঝাড়ি) খেতে হবে না।

বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হয়ে এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সংযুক্ত ছিল গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট ও রংপুর জেলা প্রশাসন এবং সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ যখন বৃদ্ধ হয়ে পড়েন, যখন কর্মক্ষমতা থাকে না। তখন এই পেনশন খুব কাজে দেবে। বৃদ্ধ হয়ে গেলে অনেক সময় ছেলেমেয়েরাও দেখতে চায় না। এখন আর সেই অবস্থা থাকবে না।

তিনি বলেন, তৃণমূল থেকে উন্নয়নের যে পরিক্রমা শুরু হয়েছে, তাতে নতুন সংযোজন সার্বজনীন পেনশন স্কিম। সরকারি চাকরিজীবীরা তো চাকরি শেষে কিছু টাকা পান, কিন্তু সমাজের সবারই কিছুটা হলেও আর্থিক সচ্ছলতা থাকা উচিত। সেজন্যই সার্বজনীন পেনশান স্কিম। সরকারি চাকরিজীবীরা এ পেনশন পাবেন না। এর বাইরের জনগোষ্ঠী সর্বজনীন পেনশন পাবেন। এর মাধ্যমে সমাজে বৈষম্য দূর হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আপাতত সর্বজনীন পেনশনে থাকবে চারটি স্কিম – প্রবাসী নাগরিকদের জন্য প্রবাসী স্কিম, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের জন্য প্রগতি স্কিম, স্বকর্মে নিয়োজিতদের জন্য সুরক্ষা স্কিম এবং স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য সমতা স্কিম।

এ স্কিম প্রস্তুত করতে অনেক চড়াই-উৎরাই পার হতে হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের সব মানুষের জন্য এই স্কিম চালু করতে পারা নিঃসন্দেহে বড় উদ্যোগ। আওয়ামী লীগ যা অঙ্গীকার করে, তা বাস্তবায়ন করে। সর্বজনীন পেনশন স্কিম তার প্রমাণ।

শেখ হাসিনা বলেন, শোকের মাসেই আমরা এই পেনশন স্কিম উদ্বোধন করছি। কারণ আমার পিতা হয়তো দেখবেন। তিনি খুশি হবেন। তার প্রিয় দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য আমরা সর্বজনীন পেনশন চালু করছি। এতে তাদের অর্থনৈতিক সুরক্ষা থাকবে। কারও কাছে হাত পাততে হবে না। এর মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণে আরও একধাপ এগিয়ে গেলো বাংলাদেশ। এটি আওয়ামী লীগের একটি অর্জন। আওয়ামী লীগ যা অঙ্গীকার করে, তা বাস্তবায়ন করে। সর্বজনীন পেনশন স্কিম তার প্রমাণ।

তিনি বলেন, জাতির পিতার হত্যার পর দেশের অবস্থা এমন করা হয়েছে, না ছিল ভোটের অধিকার, না ছিল ভাতের অধিকার। আমরা সে অবস্থার পরিবর্তন করতে চেয়েছি। সে লক্ষ্যে, কাজ করছি। মনে রাখতে হবে, জাতির পিতা যে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, সেটা যাতে ব্যর্থতায় পর্যবসিত না হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি চাকরিজীবীরা এই পেনশন পাবেন না। কারণ, তারা তো চাকরি শেষে কিছু টাকা পান, কিন্তু এর বাইরের জনগোষ্ঠী সর্বজনীন পেনশন পাবেন। সমাজের সবারই কিছুটা হলেও আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকা উচিত। সেজন্যই সর্বজনীন স্কিম। এর মাধ্যমে সমাজে বৈষম্য দূর হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রস্তুত করতে অনেক চড়াই-উৎরাই পার হতে হয়েছে। দেশের সব মানুষের জন্য এই পেনশন স্কিম চালু করতে পারা নিঃসন্দেহে বড় উদ্যোগ। ইতোমধ্যে মানুষের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে, দারিদ্র্যের হার কমেছে, ঠিকানাবিহীন মানুষের সংখ্যা কমছে।

সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশের ওপর দিয়ে অনেক ঝড় বয়ে গেছে। একদিকে করোনা অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এরই মধ্যে মিলিটারি ডিক্টেটরদের হাতে গড়া দলের ধ্বংসযজ্ঞ। এসব মোকাবিলা করে দেশ এগিয়ে নিচ্ছি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দারিদ্র্য ও অতিদারিদ্র্য দূরীকরণ, সামাজিক নিরাপত্তাসহ সব খাতে সেবা দিচ্ছি।

তিনি বলেন, বাবা-মা-ভাই সবই তো হারিয়েছি। আমার তো কেউ নাই। ১৯৮১ সালে দেশে এসে কাউকে তো দেখিনি, যারা আমায় বিদায় দিয়েছে। কিন্তু আমি পেয়েছি, এই দেশের মানুষকে আমার পাশে। আমি মনে করি, এই দেশের মানুষই আমার আপনজন। এদেশের প্রতিটি মানুষের জীবনকে অর্থবহ করে তাদের জীবনমান উন্নত করতে চাই। আমার বাবারও এটিই লক্ষ্য ছিল।

প্রায় ১০ কোটি মানুষের পেনশন সুবিধার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জকের দিনটি আমাদের অনন্য সাধারণ দিন। কারণ বাংলাদেশের ইতিহাসে এই দিনটি স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আজ আমরা আমাদের উন্নয়নের পরিকল্পনা, সেখানে তৃণমূলের মানুষ, অবহেলিত মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারছি।

সর্বজনীন পেনশন সুবিধা প্রণয়নের কারণ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সরকারি অফিসাররা পেনশন পায়। তাদের অবসর জীবন-যাপনে তাদের একটা সুরক্ষা আছে। কিন্তু আমাদের সাধারণ মানুষ যখন কর্মক্ষমতা হারায় তখন তো তাদের আর কোনো সুযোগ থাকে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা—বিভিন্ন ভাতা চালু করি। এর কারণ হলো, অন্তত একজন বয়োবৃদ্ধ যেন তার বাড়িতে স্থান পায়। তার হাতে যেন কিছু টাকা থাকে, তিনি যেটা খরচ করতে পারেন। সংসার বা পরিবারের কাছে তার একটা মূল্য থাকে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, অনেক আগে, আমি বাংলাদেশে আসার পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একটা উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কারণ আওয়ামী লীগের নেতারা সব সময় খুব নির্যাতিত হয়েছে। সব সময় তাদের ওপর কারাযন্ত্রণা, তাদের ছেলে-মেয়েরা কষ্ট ভোগ করেছে, তাদের ওপর অকথ্য অত্যাচার, তাদের ধরে নিয়ে নির্যাতন, মেরে ফেলা, গুম করে ফেলা। এই অবস্থা থেকে আমাদের নেতাকর্মী ও তাদের পরিবারের সুরক্ষার জন্য আমরা একটা উদ্যোগ নিয়েছিলাম। সেটা হচ্ছে আওয়ামী ফাউন্ডেশন গঠন করে তার মাধ্যমে এ ধরনের একটি পেনশন ব্যবস্থা আমরা কিন্তু প্রবর্তন করি।

মোট ৬টি স্কিমের মধ্যে আজ চারটি স্কিম চালু হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাকিগুলো সুবিধাজনক সময়ে চালু করা হবে। এর আওতায় ১৮-৫০ বছর বয়সী একজন সুবিধাভোগী, ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এবং ৫০ বছরের অধিক বয়সের কেউ ন্যূনতম ১০ বছর পর্যন্ত প্রতিবছর চাঁদা দিয়ে আজীবন পেনশন স্কিম ভোগ করতে পারবেন।

এসময় সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যাপক অর্থ বরাদ্দ দেয়ার কথাও জানান শেখ হাসিনা। দেশের স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে না দেয়ার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন তিনি। বলেন, দেশের মানুষই আমার আপনজন। এই চিন্তা থেকেই দেশ পরিচালনা করছি। বাবার রেখে যাওয়া কাজ যাতে সম্পন্ন করে দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন এবং ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করতে পারি। সেই দোয়া চাই সবার কাছে। দেশের স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে দেবো না; ব্যর্থ হতে দেয়া হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যাংক-মোবাইল-নগদ সব পদ্ধতিতেই এই পেনশন স্কিম এর লেনদেন করা যাবে। এই স্কিমের মাধ্যমে মানুষের জীবনমান আরো উন্নত করতে পারবেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অর্থবিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতেমা ইয়াসমিন।

জানা গেছে, সর্বজনীন পেনশনে রয়েছে ৪টি স্কিম। প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য প্রবাস স্কিম। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের প্রগতি স্কিম। স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য সুরক্ষা স্কিম। স্বকর্মে নিয়োজিত স্বল্প আয়ের নাগরিকদের জন্য সমতা স্কিম।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মাইলস্টোনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, আহত ৩

আর কারো কাছে হাত পেতে ঝাড়ি খেতে হবে না : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০১:৩৬:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণে শোকের মাসে সর্বজনীন পেনশন চালু করা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যারা বয়স্কভাতা পান না, তারাও এই সর্বজনীন পেনশনের সুবিধা পাবেন। আর কারো কাছে হাত পেতে ঝান্ডা (ঝাড়ি) খেতে হবে না।

বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হয়ে এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সংযুক্ত ছিল গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট ও রংপুর জেলা প্রশাসন এবং সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ যখন বৃদ্ধ হয়ে পড়েন, যখন কর্মক্ষমতা থাকে না। তখন এই পেনশন খুব কাজে দেবে। বৃদ্ধ হয়ে গেলে অনেক সময় ছেলেমেয়েরাও দেখতে চায় না। এখন আর সেই অবস্থা থাকবে না।

তিনি বলেন, তৃণমূল থেকে উন্নয়নের যে পরিক্রমা শুরু হয়েছে, তাতে নতুন সংযোজন সার্বজনীন পেনশন স্কিম। সরকারি চাকরিজীবীরা তো চাকরি শেষে কিছু টাকা পান, কিন্তু সমাজের সবারই কিছুটা হলেও আর্থিক সচ্ছলতা থাকা উচিত। সেজন্যই সার্বজনীন পেনশান স্কিম। সরকারি চাকরিজীবীরা এ পেনশন পাবেন না। এর বাইরের জনগোষ্ঠী সর্বজনীন পেনশন পাবেন। এর মাধ্যমে সমাজে বৈষম্য দূর হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আপাতত সর্বজনীন পেনশনে থাকবে চারটি স্কিম – প্রবাসী নাগরিকদের জন্য প্রবাসী স্কিম, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের জন্য প্রগতি স্কিম, স্বকর্মে নিয়োজিতদের জন্য সুরক্ষা স্কিম এবং স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য সমতা স্কিম।

এ স্কিম প্রস্তুত করতে অনেক চড়াই-উৎরাই পার হতে হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের সব মানুষের জন্য এই স্কিম চালু করতে পারা নিঃসন্দেহে বড় উদ্যোগ। আওয়ামী লীগ যা অঙ্গীকার করে, তা বাস্তবায়ন করে। সর্বজনীন পেনশন স্কিম তার প্রমাণ।

শেখ হাসিনা বলেন, শোকের মাসেই আমরা এই পেনশন স্কিম উদ্বোধন করছি। কারণ আমার পিতা হয়তো দেখবেন। তিনি খুশি হবেন। তার প্রিয় দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য আমরা সর্বজনীন পেনশন চালু করছি। এতে তাদের অর্থনৈতিক সুরক্ষা থাকবে। কারও কাছে হাত পাততে হবে না। এর মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণে আরও একধাপ এগিয়ে গেলো বাংলাদেশ। এটি আওয়ামী লীগের একটি অর্জন। আওয়ামী লীগ যা অঙ্গীকার করে, তা বাস্তবায়ন করে। সর্বজনীন পেনশন স্কিম তার প্রমাণ।

তিনি বলেন, জাতির পিতার হত্যার পর দেশের অবস্থা এমন করা হয়েছে, না ছিল ভোটের অধিকার, না ছিল ভাতের অধিকার। আমরা সে অবস্থার পরিবর্তন করতে চেয়েছি। সে লক্ষ্যে, কাজ করছি। মনে রাখতে হবে, জাতির পিতা যে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, সেটা যাতে ব্যর্থতায় পর্যবসিত না হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারি চাকরিজীবীরা এই পেনশন পাবেন না। কারণ, তারা তো চাকরি শেষে কিছু টাকা পান, কিন্তু এর বাইরের জনগোষ্ঠী সর্বজনীন পেনশন পাবেন। সমাজের সবারই কিছুটা হলেও আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকা উচিত। সেজন্যই সর্বজনীন স্কিম। এর মাধ্যমে সমাজে বৈষম্য দূর হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রস্তুত করতে অনেক চড়াই-উৎরাই পার হতে হয়েছে। দেশের সব মানুষের জন্য এই পেনশন স্কিম চালু করতে পারা নিঃসন্দেহে বড় উদ্যোগ। ইতোমধ্যে মানুষের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে, দারিদ্র্যের হার কমেছে, ঠিকানাবিহীন মানুষের সংখ্যা কমছে।

সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশের ওপর দিয়ে অনেক ঝড় বয়ে গেছে। একদিকে করোনা অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এরই মধ্যে মিলিটারি ডিক্টেটরদের হাতে গড়া দলের ধ্বংসযজ্ঞ। এসব মোকাবিলা করে দেশ এগিয়ে নিচ্ছি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দারিদ্র্য ও অতিদারিদ্র্য দূরীকরণ, সামাজিক নিরাপত্তাসহ সব খাতে সেবা দিচ্ছি।

তিনি বলেন, বাবা-মা-ভাই সবই তো হারিয়েছি। আমার তো কেউ নাই। ১৯৮১ সালে দেশে এসে কাউকে তো দেখিনি, যারা আমায় বিদায় দিয়েছে। কিন্তু আমি পেয়েছি, এই দেশের মানুষকে আমার পাশে। আমি মনে করি, এই দেশের মানুষই আমার আপনজন। এদেশের প্রতিটি মানুষের জীবনকে অর্থবহ করে তাদের জীবনমান উন্নত করতে চাই। আমার বাবারও এটিই লক্ষ্য ছিল।

প্রায় ১০ কোটি মানুষের পেনশন সুবিধার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জকের দিনটি আমাদের অনন্য সাধারণ দিন। কারণ বাংলাদেশের ইতিহাসে এই দিনটি স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আজ আমরা আমাদের উন্নয়নের পরিকল্পনা, সেখানে তৃণমূলের মানুষ, অবহেলিত মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারছি।

সর্বজনীন পেনশন সুবিধা প্রণয়নের কারণ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সরকারি অফিসাররা পেনশন পায়। তাদের অবসর জীবন-যাপনে তাদের একটা সুরক্ষা আছে। কিন্তু আমাদের সাধারণ মানুষ যখন কর্মক্ষমতা হারায় তখন তো তাদের আর কোনো সুযোগ থাকে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা—বিভিন্ন ভাতা চালু করি। এর কারণ হলো, অন্তত একজন বয়োবৃদ্ধ যেন তার বাড়িতে স্থান পায়। তার হাতে যেন কিছু টাকা থাকে, তিনি যেটা খরচ করতে পারেন। সংসার বা পরিবারের কাছে তার একটা মূল্য থাকে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, অনেক আগে, আমি বাংলাদেশে আসার পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একটা উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কারণ আওয়ামী লীগের নেতারা সব সময় খুব নির্যাতিত হয়েছে। সব সময় তাদের ওপর কারাযন্ত্রণা, তাদের ছেলে-মেয়েরা কষ্ট ভোগ করেছে, তাদের ওপর অকথ্য অত্যাচার, তাদের ধরে নিয়ে নির্যাতন, মেরে ফেলা, গুম করে ফেলা। এই অবস্থা থেকে আমাদের নেতাকর্মী ও তাদের পরিবারের সুরক্ষার জন্য আমরা একটা উদ্যোগ নিয়েছিলাম। সেটা হচ্ছে আওয়ামী ফাউন্ডেশন গঠন করে তার মাধ্যমে এ ধরনের একটি পেনশন ব্যবস্থা আমরা কিন্তু প্রবর্তন করি।

মোট ৬টি স্কিমের মধ্যে আজ চারটি স্কিম চালু হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাকিগুলো সুবিধাজনক সময়ে চালু করা হবে। এর আওতায় ১৮-৫০ বছর বয়সী একজন সুবিধাভোগী, ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এবং ৫০ বছরের অধিক বয়সের কেউ ন্যূনতম ১০ বছর পর্যন্ত প্রতিবছর চাঁদা দিয়ে আজীবন পেনশন স্কিম ভোগ করতে পারবেন।

এসময় সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যাপক অর্থ বরাদ্দ দেয়ার কথাও জানান শেখ হাসিনা। দেশের স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে না দেয়ার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন তিনি। বলেন, দেশের মানুষই আমার আপনজন। এই চিন্তা থেকেই দেশ পরিচালনা করছি। বাবার রেখে যাওয়া কাজ যাতে সম্পন্ন করে দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন এবং ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করতে পারি। সেই দোয়া চাই সবার কাছে। দেশের স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে দেবো না; ব্যর্থ হতে দেয়া হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যাংক-মোবাইল-নগদ সব পদ্ধতিতেই এই পেনশন স্কিম এর লেনদেন করা যাবে। এই স্কিমের মাধ্যমে মানুষের জীবনমান আরো উন্নত করতে পারবেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অর্থবিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতেমা ইয়াসমিন।

জানা গেছে, সর্বজনীন পেনশনে রয়েছে ৪টি স্কিম। প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য প্রবাস স্কিম। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের প্রগতি স্কিম। স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য সুরক্ষা স্কিম। স্বকর্মে নিয়োজিত স্বল্প আয়ের নাগরিকদের জন্য সমতা স্কিম।