ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি :
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের সব প্রতিষ্ঠানকে কবর দিয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনাসহ কোনো নেতাকে বিনা কারণে জেলে যেতে হয়নি। অথচ বিনা অপরাধে আমার নামে শতাধিক মামলা। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জেলে আটক করে রেখেছে। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।
বুধবার (১৬ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টায় ঠাকুরগাঁও শহরের কালিবাড়ী মির্জা রুহুল আমীন পৌর মিলনায়তনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রোগমুক্তির জন্য দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, এ সরকার সব ক্ষেত্রে দলীয়করণ করেছে। প্রশাসনকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে আছে। ডিসি, এসপি, ইউএনও, ওসিদের নতুন করে বদলি করছে। যারা আওয়ামী লীগের কথা শুনবে তাদেরই এ জায়গাগুলোতে নিয়ে গেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমানে ডিসি, এসপি, পুলিশের কথা যদি শোনেন তাহলে মনে হবে পুলিশ আওয়ামী লীগের বাবা। কুমিল্লায় একজন ওসি আওয়ামী লীগের হয়ে ভোট চাচ্ছেন। ওই ওসি সাধারণ ভোটারদের বলছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ভোট না দিলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সংবিধানে স্পষ্ট বলা আছে, কোনো সরকারি কর্মকর্তা রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করতে পারবে না। ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে তাদের কাজ করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের এমপির বিরুদ্ধে কখনও কথা বলিনি, আমার রুচিতে বাধে। পত্র-পত্রিকায় দেখতে পাই এবং অভিযোগ শুনি, হাসপাতালের টেন্ডার বাক্স নিজ বাড়িতে নিয়ে যান।
তিনি বলেন, চিন্তাই করতে পারি না, একজন এমপি পার্লামেন্ট মেম্বার, তার দায়িত্ব হচ্ছে পার্লামেন্টে গিয়ে জনগণের পক্ষে কথা বলা। জনগণের পক্ষে আইন তৈরি করবেন এবং জনগণের পক্ষে কথা বলবেন। হাসপাতালের টেন্ডার হয়, সেখানে তিনি নিজেই থাকেন, যেকোনও জায়গায়, যেখানে টেন্ডার, যেখানে টাকা সেখানে গিয়ে ধপ করে বসেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতারা হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে বিদেশে বেগমপাড়া, মালয়েশিয়া, ইংল্যান্ডে, আমেরিকায় বাড়ি করছেন- তারা তো একবারও বলেন না আওয়ামী লীগের এই নেতারা ব্যাংকে টাকার পাহাড় গড়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনাদের দূরে যাওয়ার দরকার নেই, ঠাকুরগাঁওতে দেখেন ১৪-১৫ বছর আগে আওয়ামী লীগের যারা নেতা, সবার কথা বলি না- বড় বড় নেতা যারা আছে তাদের কী ছিল সম্পদ আর এখন কী হয়েছে।
তিনি বলেন, চাল, ডাল, তেল, ডিমসহ নিত্যপণ্যের দাম অনেক বেশি। ৭৫ বছর বয়সে পৃথিবীর অনেক দেশের লুটপাট দেখেছি। বাংলাদেশের লুটপাট সব দেশকে ছাড়িয়ে গেছে। উন্নয়নের কথা বলে নিজেদের উন্নয়ন করছে আওয়ামী লীগ। শিক্ষিত না হলে জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। এ জন্য তারা শিক্ষাব্যবস্থাকে ধংস করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা ঘুষ খাচ্ছে। কোথাও কোনো ন্যায়বিচার নেই। বিএনপির লোকদের ছেলেমেয়েদের চাকরি হয় না, এমনকি সেনাবাহিনীতেও চাকরি হয় না। বর্তমানে ডিএনএ টেস্ট করে চাকরি দেওয়া হচ্ছে। সবখানে দলীয়করণ আর দলীয়করণ।
মির্জা ফখরুল সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। তিনি মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। আপনারা অবৈধভাবে আর ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। থাকতে দেওয়া হবে না। আজকে শুধু আমরা নয় আন্তর্জাতিক বিশ্ব বলছে, তোমাদের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। এবার সবার অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন মেনে নেওয়া হবে না। আমরাও মানব না। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, খন্দকার মোশতাক আওয়ামী লীগের মহান নেতাকে হত্যা করেছে। বর্তমান সরকারের এমপি মন্ত্রীরা মোশতাকের নেতৃত্বে শপথ নিয়েছে। এ সরকার মহান নেতার খুনিদের এমপি মন্ত্রী করেছে। তখন বিএনপির জন্ম হয়নি। প্রেসিডেন্ট জিয়া তখন ছিলেন ডেপুটি চিফ। তার হাতে তখন ক্ষমতা ছিল না।
মির্জা ফখরুল বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, বর্তমান আন্দোলনকে আরও বেগবান করতে হবে। এ সরকার আবারও অবৈধভাবে নির্বাচন করলে আমাদের কচুকাটা করবে।
দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভায় জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, সহ-সভাপতি নুর করিম, আল মামুন আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. পয়গাম আলী, আনসারুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. জাফরুল্লাহ, পৌর বিএনপির সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরিফ, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদ, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবু হোসেন তুহিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।