Dhaka মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নিরপত্তার জন্য জিডি করলেন সাঈদীর চিকিৎসক

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীকে চিকিৎসা দেওয়া চিকিৎসককে ফেসবুক মেসেঞ্জারে হত্যার হুমকি দেওয়া অভিযোগ উঠেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃদরোগ বিভাগের অধ্যাপক এস এম মোস্তফা জামান নিরপত্তার জন্য এই জিডি করেন। সাঈদীর বিশেষজ্ঞ মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ছিলেন ডা. মোস্তফা জামান।

হত্যার হুমকির বিষয়ে মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) দিনগত মধ্যরাতে নিজে ধানমন্ডি মডেল থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ডা. মোস্তফা জামান।

বুধবার (১৬ আগস্ট) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. পারভেজ ইসলাম।

তিনি জানান, সাঈদীকে চিকিৎসা দেওয়া এক চিকিৎসক একটি জিডি করেছেন। তাতে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেছেন তিনি। আমরা আদালতের অনুমতি নিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে দেখব।

সাধারণত ডায়েরিতে ওই চিকিৎসক উল্লেখ করেছেন, তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃদরোগ বিভাগের অধ্যাপক চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত আছেন। ১৩ আগস্ট দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী অসুস্থ অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। হৃদরোগ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক চৌধুরী মেশকাত আহমেদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪ আগস্ট রাত ৮টা ৪০ মিনিটে সাঈদী মারা যান। তিনিও বিশেষজ্ঞ টিমের সদস্য হিসেবে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু কতিপয় ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও ইউটিউবে বিভিন্ন আইডি থেকে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছেন। এছাড়াও তার ফেসবুকের মেসেঞ্জারে ক্ষুদে বার্তায় হুমকি দেওয়া হয়েছে। এতে ভীত-শঙ্কিত হয়ে নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করেছেন তিনি।

জিডিকারী চিকিৎসক গণমাধ্যমকে বলেন, এখন কোন রোগী বা ব্যক্তি আসুক সেটা ধর্ম বর্ণ গোত্র তিনি রাজনীতিবিদ বা যাই হোন না কেন আমরা সবার জন্য সমান চিকিৎসা দিয়ে থাকি এবং চিকিৎসা সেবার যে আদর্শ সেটা সমুন্নত রেখে চিকিৎসা দেই। সাঈদীর ক্ষেত্রেও একই কাজ করা হয়েছে। এর কোনো ব্যত্যয় হয়নি। আমরা রোগীকে সঠিক চিকিৎসা দিয়েছি। তাকে কোনো প্রকার ভুল বা অপচিকিৎসা দেওয়া হয়নি, যা প্রোপাগণ্ডা ছড়ানো হচ্ছে তা হয়নি। তারপরও আমাকে নিয়ে নানা প্রোপাগণ্ডা ছড়ানো হয়েছে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। এজন্য তিনি জিডি করেছেন।

ডা. মোস্তফা জামান বলেন, মঙ্গলবার সারাদিন তাকে উদ্দেশ্য করে ‘মিথ্যা গুজব’ ছড়ানো হয়েছে, তাকে ‘হত্যাকারী’ বলা হয়েছে, যা ‘সত্য নয়’। অনেকে জীবননাশের, প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে। তারই প্রেক্ষিতে জিডি করতে এসেছি।ৃ আমি গত ২৬ বছর ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছি। রোগীদের সেবায় নিয়োজিত আছি। আশা করছি, যারা এসব প্রপাগান্ডা করছেন, তারা ভুল বুঝবেন।

রোববার (১৩ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বুকে ব্যথাজনিত সমস্যার কারণে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে প্রথমে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। সেখানে তার ইসিজিসহ যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় পাঠানো হয়। রোববার রাত ১০টা ৪০ মিনিটে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয় সাইদীকে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার (১৪ আগস্ট) দিনগত রাত ৮টা ৪০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।

২০১০ সালের ২৯ জুন রাজধানীর শাহীনবাগের বাসা থেকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় সাঈদীকে। পরে ওই বছরের ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, ধর্মান্তর করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের আটটি অভিযোগের মধ্যে দুটি অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। পরে তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তার মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেন। এতদিন ওই সাজা ভোগ করছিলেন তিনি।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মাইলস্টোনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, আহত ৩

নিরপত্তার জন্য জিডি করলেন সাঈদীর চিকিৎসক

প্রকাশের সময় : ১১:৪৩:১১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীকে চিকিৎসা দেওয়া চিকিৎসককে ফেসবুক মেসেঞ্জারে হত্যার হুমকি দেওয়া অভিযোগ উঠেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃদরোগ বিভাগের অধ্যাপক এস এম মোস্তফা জামান নিরপত্তার জন্য এই জিডি করেন। সাঈদীর বিশেষজ্ঞ মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ছিলেন ডা. মোস্তফা জামান।

হত্যার হুমকির বিষয়ে মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) দিনগত মধ্যরাতে নিজে ধানমন্ডি মডেল থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ডা. মোস্তফা জামান।

বুধবার (১৬ আগস্ট) সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. পারভেজ ইসলাম।

তিনি জানান, সাঈদীকে চিকিৎসা দেওয়া এক চিকিৎসক একটি জিডি করেছেন। তাতে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেছেন তিনি। আমরা আদালতের অনুমতি নিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে দেখব।

সাধারণত ডায়েরিতে ওই চিকিৎসক উল্লেখ করেছেন, তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃদরোগ বিভাগের অধ্যাপক চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত আছেন। ১৩ আগস্ট দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী অসুস্থ অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। হৃদরোগ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক চৌধুরী মেশকাত আহমেদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪ আগস্ট রাত ৮টা ৪০ মিনিটে সাঈদী মারা যান। তিনিও বিশেষজ্ঞ টিমের সদস্য হিসেবে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু কতিপয় ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও ইউটিউবে বিভিন্ন আইডি থেকে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছেন। এছাড়াও তার ফেসবুকের মেসেঞ্জারে ক্ষুদে বার্তায় হুমকি দেওয়া হয়েছে। এতে ভীত-শঙ্কিত হয়ে নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করেছেন তিনি।

জিডিকারী চিকিৎসক গণমাধ্যমকে বলেন, এখন কোন রোগী বা ব্যক্তি আসুক সেটা ধর্ম বর্ণ গোত্র তিনি রাজনীতিবিদ বা যাই হোন না কেন আমরা সবার জন্য সমান চিকিৎসা দিয়ে থাকি এবং চিকিৎসা সেবার যে আদর্শ সেটা সমুন্নত রেখে চিকিৎসা দেই। সাঈদীর ক্ষেত্রেও একই কাজ করা হয়েছে। এর কোনো ব্যত্যয় হয়নি। আমরা রোগীকে সঠিক চিকিৎসা দিয়েছি। তাকে কোনো প্রকার ভুল বা অপচিকিৎসা দেওয়া হয়নি, যা প্রোপাগণ্ডা ছড়ানো হচ্ছে তা হয়নি। তারপরও আমাকে নিয়ে নানা প্রোপাগণ্ডা ছড়ানো হয়েছে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। এজন্য তিনি জিডি করেছেন।

ডা. মোস্তফা জামান বলেন, মঙ্গলবার সারাদিন তাকে উদ্দেশ্য করে ‘মিথ্যা গুজব’ ছড়ানো হয়েছে, তাকে ‘হত্যাকারী’ বলা হয়েছে, যা ‘সত্য নয়’। অনেকে জীবননাশের, প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে। তারই প্রেক্ষিতে জিডি করতে এসেছি।ৃ আমি গত ২৬ বছর ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছি। রোগীদের সেবায় নিয়োজিত আছি। আশা করছি, যারা এসব প্রপাগান্ডা করছেন, তারা ভুল বুঝবেন।

রোববার (১৩ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বুকে ব্যথাজনিত সমস্যার কারণে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে প্রথমে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। সেখানে তার ইসিজিসহ যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় পাঠানো হয়। রোববার রাত ১০টা ৪০ মিনিটে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয় সাইদীকে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার (১৪ আগস্ট) দিনগত রাত ৮টা ৪০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।

২০১০ সালের ২৯ জুন রাজধানীর শাহীনবাগের বাসা থেকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় সাঈদীকে। পরে ওই বছরের ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, ধর্মান্তর করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের আটটি অভিযোগের মধ্যে দুটি অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। পরে তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তার মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেন। এতদিন ওই সাজা ভোগ করছিলেন তিনি।