নিজস্ব প্রতিবেদক :
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত পলাতক পাঁচ আসামির তথ্য কোনও নাগরিক যদি দেন তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে তাকে পুরস্কৃত করা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে আব্দুল মোমেন।
সোমবার (১৪ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সাংবাদিক ফোরাম আয়োজিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ড. এ. কে আব্দুল মোমেন বলেন, ৭৫-এর পরের সরকার বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িত সব আসামিকে বিভিন্ন দেশে নিয়োগ দিয়ে পাঠিয়ে দেয়। তারা যখন বুঝতে পারে যে তাদের বিরুদ্ধে দেশে কোনও একসময় মামলা হবে, তারপর তারা ভিন্ন নামে আত্মগোপনে চলে যায়। আমি দেশবাসীকে বলতে চাই, আপনারা কেউ যদি এই পাঁচ জনের তথ্য দিতে পারেন তাহলে সরকার আপনাদের পুরস্কৃত করবে।
তিনি বলেন, সাত জন হত্যাকারীর মধ্যে সরকার দুই জনের তথ্য পেয়েছে। বাকি পাঁচ জন এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। যে দুজনের তথ্য পেয়েছি তাদের মধ্যে একজন রাশেদ চৌধুরী, আমেরিকায় থাকে। আরেকজন থাকে কানাডায়। তাদের জন্য আমরা অনেক চিঠিপত্র লিখেছি। স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়েও আমরা আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু তারা সবসময় বলে এই ইস্যুটা তাদের অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে আছে। দুই বছর আগে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস থেকে আমাদের বলেছে, বাংলাদেশে যে মামলা হয়েছিল সেই মামলার তথ্য দিতে। আমরা সেসব তথ্য তাদের দিয়েছি।
তিনি বলেন, আর কানাডায় যে আসামি পলাতক আছে তার বিষয়ে কানাডা সরকার কোনও তথ্য দিচ্ছে না। এ বিষয়ে আমরা কানাডায় একটা মামলাও করেছি। কানাডার আদালত বলেছে, সে যেখানে আছে বা অবস্থান করছে সে বিষয়ে তথ্য দিতে কোনও বাধা নেই। আদালতের নির্দেশ থাকার পরও কানাডা সরকার সে তথ্য আমাদের কাছে পৌঁছায় না। কানাডার সরকার বারবার অজুহাত দেখায়। এই দুজন সম্পর্কে আমরা জানি। আর বাকি পাঁচ জন সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কানাডা এমন ব্যবস্থা করেছে, যেন সব মার্ডারাররা (হত্যাকারী) ওখানে গিয়ে আশ্রয় নেবে। তারা হত্যাকারীদের নিরাপদ আশ্রয়দাতা হয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি নুর চৌধুরীও সেখানে আশ্রয় পেয়েছে। কিন্তু কানাডার মতো দেশ, আমেরিকার মতো দেশ; যেখানে আইন অনেক শক্তিশালী, তারা হত্যাকারীর নিরাপদ আশ্রয়স্থল হতে পারে না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, কানাডা আমেরিকার মতো দেশ, যেখানে আইন অত্যন্ত শক্তিশালী, যারা আইনের দেশ তারা কখনও খুনিদের আশ্রয় দিতে পারে না। তারা এমন সব খুনিকে আশ্রয় দিয়েছে, যারা একটা দেশের রাষ্ট্রপতি এবং তার সমস্ত পরিবারকে হত্যা করেছে। দুনিয়ার অনেক দেশেই অভ্যুত্থান হয়, সেখানে হয়তো বা রাষ্ট্রপতিকেই শুধু হত্যা করে। কিন্তু আমাদের দেশের অভ্যুত্থানে শুধু রাষ্ট্রপতি নয়, তার পুরো বংশকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে।
সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফেরানো নিয়ে আমাদের কাছে প্রায়ই জানতে চাওয়া হয়। আমি যতটুকু জানি- ১৫ আগস্টের যে ঘাতক তাদের মধ্যে পাঁচজনকে এনে বিচারের সম্মুখীন করে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে। ২০২০ সালের দিকে আরেকজনকে ধরা হয়। তাকেও ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। বাকি যে সাতজন তাদের মধ্যে পাঁচজনের হদিস মেলেনি। আর দুজন হলো- রাশেদ চৌধুরী ও নুর চৌধুরী। রাশেদ আছে আমেরিকায়, নুর কানাডায়।
রাশেদ-নুরকে ফেরানোর জন্য অনেক চিঠিপত্র লেখা হয়েছে জানিয়ে ড. মোমেন বলেন, এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়েও আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে আমরা চিঠি দিয়েছি। তারা সবসময় আমাদের বলেন, এ ইস্যুটা তাদের অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে আছে। অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস আমাদের দুবছর আগে অর্থাৎ ট্রাম্প প্রশাসনের সময় উনি (মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল) চাইলেন যে, বঙ্গবন্ধু হত্যার যে কেসটা হয়েছিল, সেটার বিস্তারিত তথ্য চেয়েছিলেন। আমরা সব তথ্য তাদের দিয়েছি। এরপর যতবার আমি স্টেট ডিপার্টমেন্টে অ্যাপ্রোচ করেছি, তারা বলেন, এটা অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে আছে। আর নতুন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
নুর চৌধুরীকে ফেরাতে কানাডার আদালতে মামলাও করা হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, কানাডায় থাকা নুর চৌধুরীর অবস্থানও কানাডা সরকার বলতে চায় না। এজন্য আমরা কানাডার আদালতে মামলাও করেছি। বিচারক রায় দিয়েছেন যে, তার (নুর) অবস্থান জানাতে কানাডার সরকারের কোনো আপত্তি থাকা উচিত নয়। তবুও কানাডা সরকার ওর তথ্য আমাদের দেয় না।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবাহান চৌধুরী। প্রধান অতিথি উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম, সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল, বিএফইউজে সভাপতি ওমর ফারুক, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, ডিইউজে সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, সম্পাদক ফোরামের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম রতন, সাংবাদিক নেতা মানিক লাল ঘোষ প্রমুখ।