Dhaka সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাজবাড়ীতে চার বছরের শেষ হয়নি সেতু নির্মাণ কাজ

রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি : 

রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের মান্নান গাছির খেয়াঘাট এলাকায় পদ্মা নদীর ক্যানালের ওপর নির্মিত ব্রিজটির নির্মাণকাজ চার বছরের শেষ হয়নি। এতে ওই অঞ্চলের মানুষ সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ব্রিজের একপাশে কাঠের তৈরি মই দিয়ে ব্রিজে উঠে অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে। আবার কেউ কেউ ভয়ের কারণে পাশে খেয়া নৌকা দিয়ে পার হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মান্নান গাছির খেয়াঘাট দিয়ে ওই এলাকার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ নিয়মিত যাতায়াত করে থাকে। পদ্মা নদীর ক্যানালের উপর ব্রিজটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে ফরিদপুর সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের সঙ্গে গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হবে। খেয়াঘাটের দুই পাশে একাধিক হাট-বাজার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ অঞ্চলের মানুষ যেমন স্বাস্থ্য সেবার জন্য নিয়মিত ফরিদপুরে যাতায়াত করে থাকে, তেমনি ওপারের মানুষও লেখাপড়া-বাজার ঘাটসহ নানা প্রয়োজনে গোয়ালন্দে এসে থাকে। এজন্য দীর্ঘদিন ধরেই দুই অঞ্চলের মানুষ সেখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিল। স্থানীয়দের যাতায়তের সুবিধার জন্য ব্রিজ নির্মাণ শুরু হলেও বর্তমানে নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। তাই খেয়া নৌকাই ওই অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা।

গোয়ালন্দ উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, বরিশালের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ২ কোটি ৮৪ লাখ ৯ হাজার ১২৫ টাকায় ব্রিজটি নির্মাণের কাজ পেয়েছে। ২০১৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ব্রিজটির নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হয়। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ২৬ জুলাই। দ্বিতীয় দফায় পুনরায় সময় বাড়িয়ে ৪ জুন ২০২৩ তারিখে শেষ হবার কথা থাকলেও দীর্ঘ দিনেও ব্রিজটির নির্মাণকাজ শেষ হয়নি।

ক্যানালের ওপারের ফরিদপুর সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের আনন্দ বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুর রব শেখ বলেন, এলাকায় কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় আমাদের এলাকার শিক্ষার্থী গোয়ালন্দের উজানচর ইউনিয়নের মঙ্গলপুর দাখিল মাদ্রাসা, সাহাজদ্দিন মাতুব্বর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জামতলা হাই স্কুলে লেখাপড়া করে। ব্রিজটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন না হওয়ায় তাদেরকে প্রতিনিয়ত যাতায়াতের ভোগান্তি পোহাতে হয়।

মই বেয়ে ব্রিজ পার হওয়া সুফিয়া খতুন নামের এক নারী বলেন, প্রতিদিন বিভিন্ন কাজে আমার ৭-৮ বার ওপার যেতে হয়। নৌকায় প্রতিবার পার হতে ৫ টাকা করে দিতে হয়। তাহলে প্রতিদিন তো আর ৩০-৪০ টাকা দিয়ে নৌকায় পার হওয়া সম্ভব নয়, এ কারণে মই বেয়ে ঝুঁকি নিয়ে এভাবেই পার হচ্ছি।

মান্নান গাছির খেয়া ঘাটের নৌকার মাঝি আ. সাত্তার খাঁ বলেন, নৌকায় শুধু মানুষ যাতায়াত করে। ভারি কোনো পণ্য নেওয়া সম্ভব না। রাতে নৌকা দিয়ে পারাপার করে জরুরি রোগী হাসাপাতালে নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক কষ্ট পোহাতে হয়। অনেক সময় রেগী খুব সংকটাপন্ন হয়ে হয়ে।

উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম মৃধা বলেন, দীর্ঘ ৫ বছর যাবত ব্রিজের কাজ চলছে, ব্রিজ করতে কি এতো সময় লাগে লাগে? মাঝে মাঝে দেখি কাজ চলে আবার বন্ধ হয়ে যায়। আমরা রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলীর নিকট বলেছি, তিনি এ ব্যাপারে কয়েকবার উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারকে দ্রুত কাজ শেষ করার কথা বলেছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতিতে হাজার হাজার মানুষের কষ্ট ও দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার দেশের অনেক উন্নয়ন করেছে। সরকারের এ উন্নয়ন কাজে বাঁধা প্রদান করতে কোন এক মহল উঠে পড়ে লেগেছে। আমরা চাই এ ব্রিজটির কাজ দ্রুত শেষ করে মানুষের কষ্ট দুর্দশা দূর হোক।

উজানচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন মৃধা বলেন, ব্রিজটির নির্মাণকাজ কিছুদিন বন্ধ থাকার পর আবার চালু হয়। পরে আবার হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায় কাজ৷ আমি ইঞ্জিনিয়ারসহ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বারবার তাগিদ দিলেও কোনো কাজ হচ্ছে না।

এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা প্রকৌশলী বজলুর রহমান খান বলেন, মান্নান গাছির ব্রিজের কাজ বন্ধ থাকার পর কয়েদিন খুব ভালোই চলছিল। হঠাৎ বিল সংক্রান্ত ঝামেলার জন্য কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আমরা রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী মহোদয়ের নিকট বিষয়টি জানিয়েছি, আশা করছি বিল সংক্রান্ত ঝামেলা খুব দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের কাজে কোনো গাফিলতি নেই। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজে কোনো অনিয়ম এবং কাজ না করলে আমরা সেই ব্যাপারে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি। আশা করি দ্রুত কাজ শুরু হবে এবং মানুষের কষ্ট লাঘব হবে।

এদিকে রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী গোয়ালন্দ উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ বন্ধ হয়ে থাকা এবং যথা সময়ে শেষ না হওয়ায় উপজেলা প্রকৌশলী বজলুর রহমানের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সংস্কার না হওয়ায় খানাখন্দে চলাচলে অনুপযোগী, দুর্ভোগ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের

রাজবাড়ীতে চার বছরের শেষ হয়নি সেতু নির্মাণ কাজ

প্রকাশের সময় : ০১:৫৫:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৩

রাজবাড়ী জেলা প্রতিনিধি : 

রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের মান্নান গাছির খেয়াঘাট এলাকায় পদ্মা নদীর ক্যানালের ওপর নির্মিত ব্রিজটির নির্মাণকাজ চার বছরের শেষ হয়নি। এতে ওই অঞ্চলের মানুষ সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ব্রিজের একপাশে কাঠের তৈরি মই দিয়ে ব্রিজে উঠে অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে। আবার কেউ কেউ ভয়ের কারণে পাশে খেয়া নৌকা দিয়ে পার হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মান্নান গাছির খেয়াঘাট দিয়ে ওই এলাকার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ নিয়মিত যাতায়াত করে থাকে। পদ্মা নদীর ক্যানালের উপর ব্রিজটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে ফরিদপুর সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের সঙ্গে গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হবে। খেয়াঘাটের দুই পাশে একাধিক হাট-বাজার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ অঞ্চলের মানুষ যেমন স্বাস্থ্য সেবার জন্য নিয়মিত ফরিদপুরে যাতায়াত করে থাকে, তেমনি ওপারের মানুষও লেখাপড়া-বাজার ঘাটসহ নানা প্রয়োজনে গোয়ালন্দে এসে থাকে। এজন্য দীর্ঘদিন ধরেই দুই অঞ্চলের মানুষ সেখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিল। স্থানীয়দের যাতায়তের সুবিধার জন্য ব্রিজ নির্মাণ শুরু হলেও বর্তমানে নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। তাই খেয়া নৌকাই ওই অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা।

গোয়ালন্দ উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, বরিশালের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ২ কোটি ৮৪ লাখ ৯ হাজার ১২৫ টাকায় ব্রিজটি নির্মাণের কাজ পেয়েছে। ২০১৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ব্রিজটির নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হয়। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ২৬ জুলাই। দ্বিতীয় দফায় পুনরায় সময় বাড়িয়ে ৪ জুন ২০২৩ তারিখে শেষ হবার কথা থাকলেও দীর্ঘ দিনেও ব্রিজটির নির্মাণকাজ শেষ হয়নি।

ক্যানালের ওপারের ফরিদপুর সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের আনন্দ বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুর রব শেখ বলেন, এলাকায় কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় আমাদের এলাকার শিক্ষার্থী গোয়ালন্দের উজানচর ইউনিয়নের মঙ্গলপুর দাখিল মাদ্রাসা, সাহাজদ্দিন মাতুব্বর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জামতলা হাই স্কুলে লেখাপড়া করে। ব্রিজটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন না হওয়ায় তাদেরকে প্রতিনিয়ত যাতায়াতের ভোগান্তি পোহাতে হয়।

মই বেয়ে ব্রিজ পার হওয়া সুফিয়া খতুন নামের এক নারী বলেন, প্রতিদিন বিভিন্ন কাজে আমার ৭-৮ বার ওপার যেতে হয়। নৌকায় প্রতিবার পার হতে ৫ টাকা করে দিতে হয়। তাহলে প্রতিদিন তো আর ৩০-৪০ টাকা দিয়ে নৌকায় পার হওয়া সম্ভব নয়, এ কারণে মই বেয়ে ঝুঁকি নিয়ে এভাবেই পার হচ্ছি।

মান্নান গাছির খেয়া ঘাটের নৌকার মাঝি আ. সাত্তার খাঁ বলেন, নৌকায় শুধু মানুষ যাতায়াত করে। ভারি কোনো পণ্য নেওয়া সম্ভব না। রাতে নৌকা দিয়ে পারাপার করে জরুরি রোগী হাসাপাতালে নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক কষ্ট পোহাতে হয়। অনেক সময় রেগী খুব সংকটাপন্ন হয়ে হয়ে।

উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম মৃধা বলেন, দীর্ঘ ৫ বছর যাবত ব্রিজের কাজ চলছে, ব্রিজ করতে কি এতো সময় লাগে লাগে? মাঝে মাঝে দেখি কাজ চলে আবার বন্ধ হয়ে যায়। আমরা রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলীর নিকট বলেছি, তিনি এ ব্যাপারে কয়েকবার উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারকে দ্রুত কাজ শেষ করার কথা বলেছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতিতে হাজার হাজার মানুষের কষ্ট ও দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার দেশের অনেক উন্নয়ন করেছে। সরকারের এ উন্নয়ন কাজে বাঁধা প্রদান করতে কোন এক মহল উঠে পড়ে লেগেছে। আমরা চাই এ ব্রিজটির কাজ দ্রুত শেষ করে মানুষের কষ্ট দুর্দশা দূর হোক।

উজানচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন মৃধা বলেন, ব্রিজটির নির্মাণকাজ কিছুদিন বন্ধ থাকার পর আবার চালু হয়। পরে আবার হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায় কাজ৷ আমি ইঞ্জিনিয়ারসহ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বারবার তাগিদ দিলেও কোনো কাজ হচ্ছে না।

এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা প্রকৌশলী বজলুর রহমান খান বলেন, মান্নান গাছির ব্রিজের কাজ বন্ধ থাকার পর কয়েদিন খুব ভালোই চলছিল। হঠাৎ বিল সংক্রান্ত ঝামেলার জন্য কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আমরা রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী মহোদয়ের নিকট বিষয়টি জানিয়েছি, আশা করছি বিল সংক্রান্ত ঝামেলা খুব দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের কাজে কোনো গাফিলতি নেই। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজে কোনো অনিয়ম এবং কাজ না করলে আমরা সেই ব্যাপারে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি। আশা করি দ্রুত কাজ শুরু হবে এবং মানুষের কষ্ট লাঘব হবে।

এদিকে রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী গোয়ালন্দ উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ বন্ধ হয়ে থাকা এবং যথা সময়ে শেষ না হওয়ায় উপজেলা প্রকৌশলী বজলুর রহমানের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।