Dhaka বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিচারপ্রার্থীরা এদেশের মালিক : প্রধান বিচারপতি

যশোর জেলা প্রতিনিধি : 

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, আইনজীবী ও বিচারক একে অপরের পরিপূরক। বিচার বিভাগকে গতিশীল করতে হলে মামলার জট কমিয়ে আনতে হবে। বিচারপ্রার্থী মানুষ এদেশের মালিক। তার যেন এখানে বসে তাদের বিচার কাজ পরিচালনার সহায়তা পেতে পারেন। তারা দূরদূরান্ত থেকে আসেন, নারীরা আসেন, তাদের বিশ্রামের জন্য এই ন্যায়কুঞ্জ।

শনিবার (৫ আগস্ট) সকালে যশোর জেলা আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, বিচার বিভাগ এমন হওয়া উচিত যেখানে মানুষ স্বল্প সময়ে স্বল্প খরচে ন্যায়বিচার পাবে। এমন একটি পরিবেশ আমরা করতে পারি। এটি কেবল জজদের একার পক্ষে সম্ভব নয়, আইনজীবীদেরও সহযোগিতা থাকতে হবে। মামলা জটের কারণে আমরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছি।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ত্রিশ লক্ষ মানুষ রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ উপহার দিয়ে গেছেন। তাদের রক্তের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে। যেভাবেই হোক রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিতে হবে। বিচার বিভাগকে গতিশীল করতে হবে। মানুষ যদি বছরের পর বছর আদালতের বারান্দায় ঘোরে, যদি ন্যায়বিচার না পায়, তাহলে ওই ব্যক্তি যদি বলে এদেশে বিচার-আচার নাই, সেটা কী অন্যায় হবে।

মামলার জট প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, যশোর আদালতে ২০ বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেছে এমন মামলা পেন্ডিং আছে। এটার মানে আমরা গত ২০ বছরে ওই লোকগুলোকে বিচার দিতে পারিনি। এরজন্য দায়ী কে? আমি মনে করি বিচারক ও আইনজীবী দুজনই দায়ী। আর কিছুটা দায়ী হতে পারে প্রসেস। যে প্রসেসে বিচার হয়। সেবাপ্রার্থীদের কষ্টের কথা ভেবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সহজেই মামলা ডিসপোজাল হয়, সেই চেষ্টা করুন। আমরা আদালতের বারান্দা থেকে যদি একদিন আগেও কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে পারি, তবে তিনি স্বস্তি পাবেন। এজন্য আপনাদেরকে অনুরোধ করি, আসুন আমরা চেষ্টা করে দেখি।

তিনি বলেন, এ দেশের মানুষকে এগিয়ে নিতে হলে জুডিশিয়ারিকে শক্তিশালী করতে হবে। আর জুডিশিয়ারিকে শক্তিশালী করতে হলে বার ও বেঞ্চের মধ্যে একটা গভীর বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। অন্যথায় ন্যায়বিচার সম্পন্ন সম্ভব হবে না।

আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, আসুন সবাই মিলে একসাথে কাজ করি। পরিশ্রম করে জুডিসিয়ারির গতি বৃদ্ধি করি। বিচারপ্রার্থীকে আর যাতে বছরের পর বছর, ২০-৩০ বছর আদালতের বারান্দায় ঘুরতে না হয়। আইনজীবী হতে হলে কঠোর পরিশ্রম করা ছাড়া বিকল্প নেই। আমাদের ঘোড়ার মত পরিশ্রম করতে হবে, সন্যাসীর মত সাধক হতে হবে।

নবীন আইনজীবী উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সফল হতে হলে কঠোর পরিশ্রমের বিকল্প নেই। আমাদের ঘোড়ার মতো পরিশ্রম করতে হবে, সন্যাসীর মতো সাধক হতে হবে। আপনাদের হতে হবে একজন মোশারফ হোসেন খান, একজন নুরুল ইসলাম, সৈয়দ হাসান ইমামের মতো। এটা হতে গেলে অবশ্যই কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে। আইনজীবী হতে গেলে সততার কোনো বিকল্প নেই। কোনো আইনজীবীর মধ্যে অসততা থাকলে তিনি বেশি দূর উঠতে পারবেন না।

তিনি বলেন, আইনজীবী হতে গেলে সততার কোন বিকল্প নেই। কোন আইনজীবীর মধ্যে অসততা থাকলে তিনি বেশি দূর উঠতে পারবেন না।

অর্থনীতির চালিকাশক্তি দেশের কৃষক-শ্রমিকের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুদ্ধপরবর্তী সময়ে দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের খাবারের সংস্থান হতো না। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের কথা অনেকের মনে আছে। কিন্তু আজ সাড়ে ১৭ কোটি মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করছেন দেশের কৃষক-শ্রমিক, বিশেষ করে গার্মেন্টস শ্রমিক আর প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধারা। তারাই দেশের অর্থনীতিকে সচল করে রেখেছেন। আর আমরা যারা শিক্ষিত মানুষ আছি, যারা আইনজীবী, বিচারক– আমরা যদি আমাদের দায়িত্ব পুরোপুরি পালন না করি, জুডিশিয়ারির গতি বাড়াতে না পারি, তাহলে মনে হবে তারাই (কৃষক-শ্রমিক) আসল মানুষ, তারাই দেশ গড়ছেন। আর আমরা ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছি।

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইসহাকের সভাপতিত্বে সভায় বক্তৃতা করেন সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ নাজমুল আলম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা ও দায়রা জজ শেখ নাজমুল আলম, স্পেশাল জেলা জজ মো. সামছুল হক, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক গোলাম কবীর, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিদা জাহাঙ্গীর, জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদার, পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার প্রমুখ।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

বিচারপ্রার্থীরা এদেশের মালিক : প্রধান বিচারপতি

প্রকাশের সময় : ০৩:৩০:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ অগাস্ট ২০২৩

যশোর জেলা প্রতিনিধি : 

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, আইনজীবী ও বিচারক একে অপরের পরিপূরক। বিচার বিভাগকে গতিশীল করতে হলে মামলার জট কমিয়ে আনতে হবে। বিচারপ্রার্থী মানুষ এদেশের মালিক। তার যেন এখানে বসে তাদের বিচার কাজ পরিচালনার সহায়তা পেতে পারেন। তারা দূরদূরান্ত থেকে আসেন, নারীরা আসেন, তাদের বিশ্রামের জন্য এই ন্যায়কুঞ্জ।

শনিবার (৫ আগস্ট) সকালে যশোর জেলা আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, বিচার বিভাগ এমন হওয়া উচিত যেখানে মানুষ স্বল্প সময়ে স্বল্প খরচে ন্যায়বিচার পাবে। এমন একটি পরিবেশ আমরা করতে পারি। এটি কেবল জজদের একার পক্ষে সম্ভব নয়, আইনজীবীদেরও সহযোগিতা থাকতে হবে। মামলা জটের কারণে আমরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছি।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ত্রিশ লক্ষ মানুষ রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ উপহার দিয়ে গেছেন। তাদের রক্তের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে। যেভাবেই হোক রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিতে হবে। বিচার বিভাগকে গতিশীল করতে হবে। মানুষ যদি বছরের পর বছর আদালতের বারান্দায় ঘোরে, যদি ন্যায়বিচার না পায়, তাহলে ওই ব্যক্তি যদি বলে এদেশে বিচার-আচার নাই, সেটা কী অন্যায় হবে।

মামলার জট প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, যশোর আদালতে ২০ বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেছে এমন মামলা পেন্ডিং আছে। এটার মানে আমরা গত ২০ বছরে ওই লোকগুলোকে বিচার দিতে পারিনি। এরজন্য দায়ী কে? আমি মনে করি বিচারক ও আইনজীবী দুজনই দায়ী। আর কিছুটা দায়ী হতে পারে প্রসেস। যে প্রসেসে বিচার হয়। সেবাপ্রার্থীদের কষ্টের কথা ভেবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সহজেই মামলা ডিসপোজাল হয়, সেই চেষ্টা করুন। আমরা আদালতের বারান্দা থেকে যদি একদিন আগেও কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে পারি, তবে তিনি স্বস্তি পাবেন। এজন্য আপনাদেরকে অনুরোধ করি, আসুন আমরা চেষ্টা করে দেখি।

তিনি বলেন, এ দেশের মানুষকে এগিয়ে নিতে হলে জুডিশিয়ারিকে শক্তিশালী করতে হবে। আর জুডিশিয়ারিকে শক্তিশালী করতে হলে বার ও বেঞ্চের মধ্যে একটা গভীর বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। অন্যথায় ন্যায়বিচার সম্পন্ন সম্ভব হবে না।

আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, আসুন সবাই মিলে একসাথে কাজ করি। পরিশ্রম করে জুডিসিয়ারির গতি বৃদ্ধি করি। বিচারপ্রার্থীকে আর যাতে বছরের পর বছর, ২০-৩০ বছর আদালতের বারান্দায় ঘুরতে না হয়। আইনজীবী হতে হলে কঠোর পরিশ্রম করা ছাড়া বিকল্প নেই। আমাদের ঘোড়ার মত পরিশ্রম করতে হবে, সন্যাসীর মত সাধক হতে হবে।

নবীন আইনজীবী উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সফল হতে হলে কঠোর পরিশ্রমের বিকল্প নেই। আমাদের ঘোড়ার মতো পরিশ্রম করতে হবে, সন্যাসীর মতো সাধক হতে হবে। আপনাদের হতে হবে একজন মোশারফ হোসেন খান, একজন নুরুল ইসলাম, সৈয়দ হাসান ইমামের মতো। এটা হতে গেলে অবশ্যই কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে। আইনজীবী হতে গেলে সততার কোনো বিকল্প নেই। কোনো আইনজীবীর মধ্যে অসততা থাকলে তিনি বেশি দূর উঠতে পারবেন না।

তিনি বলেন, আইনজীবী হতে গেলে সততার কোন বিকল্প নেই। কোন আইনজীবীর মধ্যে অসততা থাকলে তিনি বেশি দূর উঠতে পারবেন না।

অর্থনীতির চালিকাশক্তি দেশের কৃষক-শ্রমিকের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুদ্ধপরবর্তী সময়ে দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের খাবারের সংস্থান হতো না। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের কথা অনেকের মনে আছে। কিন্তু আজ সাড়ে ১৭ কোটি মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করছেন দেশের কৃষক-শ্রমিক, বিশেষ করে গার্মেন্টস শ্রমিক আর প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধারা। তারাই দেশের অর্থনীতিকে সচল করে রেখেছেন। আর আমরা যারা শিক্ষিত মানুষ আছি, যারা আইনজীবী, বিচারক– আমরা যদি আমাদের দায়িত্ব পুরোপুরি পালন না করি, জুডিশিয়ারির গতি বাড়াতে না পারি, তাহলে মনে হবে তারাই (কৃষক-শ্রমিক) আসল মানুষ, তারাই দেশ গড়ছেন। আর আমরা ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছি।

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইসহাকের সভাপতিত্বে সভায় বক্তৃতা করেন সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ নাজমুল আলম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা ও দায়রা জজ শেখ নাজমুল আলম, স্পেশাল জেলা জজ মো. সামছুল হক, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক গোলাম কবীর, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিদা জাহাঙ্গীর, জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদার, পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার প্রমুখ।