Dhaka রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হিংসা ও আক্রোশ থেকে তারেক-জুবাইদাকে সাজা: মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের সাজা ‘হিংসা ও আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ।

বুধবার (২ আগস্ট) সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানকে সাজা দেওয়াটা আওয়ামী দুঃশাসনের কোনো ব্যতিক্রমী ঘটনা বলে কারও মনে হয়নি। এর মধ্যদিয়ে অবৈধ আওয়ামী সরকারের ফরমায়েশি রায়ের আরেকটি দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো কেবল। ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে সরকার তার কোনো প্রতিপক্ষ রাখতে চায় না। বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে নীলনকশা বাস্তবায়ন করছে সরকার।

মির্জা ফখরুল বলেন, তারেক রহমান এবং তার স্ত্রীকে যে সাজা দেওয়া হবে তা নিয়ে কারো সংশয় ছিল না। কারণ বিরোধী দলের প্রধান নেতাদের নির্মূল করতে যেভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করা হয়, সেই নীলনকশা ধরেই সরকারপ্রধান এগিয়ে যাচ্ছেন। রাষ্ট্রক্ষমতা আঁকড়ে রাখা আওয়ামী সরকার তাদের কোনো প্রতিপক্ষ রাখতে চায় না।

তিনি বলেন, সরকারপ্রধান নিজেকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী রাখতে চান। সেজন্য আইন আদালত ও প্রশাসনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে রাজনৈতিক প্রধান প্রতিপক্ষকে নির্মূল করতে বদ্ধপরিকর হয়েছেন। আজ এই ফরমায়েশি রায় দেওয়ার ঘটনা দেশকে গণতন্ত্রশূন্য করার ধারাবাহিক চক্রান্তের অংশ।

তিনি আরো বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানসহ দেশজুড়ে বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে শুধুমাত্র নব্য বাকশালী দুঃশাসনকে চিরস্থায়ী রাখতে। সেজন্য আইন আদালতকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের এক দমনযন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। ন্যায়বিচার করার কারণে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে মামলা থেকে খালাস দেয়ায় বিচারক মোতাহার আর দেশে থাকতে পারেননি। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বিচার বিভাগে সরকারি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে ‘গানপয়েন্টে’ দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের সময় রামদা, লাঠিসোঁটা ও রড নিয়ে হামলা করে আওয়ামী ক্যাডার’রা যা মানুষের হাতে হাতে মোবাইলে ভিডিওতে দৃশ্যমান হয়েছে। অথচ মামলা হয় বিএনপির কয়েক বছর আগে মৃত, কারাবন্দী ও বিদেশে অবস্থানরত নেতাকর্মীদের নামে। মামলা দেয়ার পুলিশী তামাশা এখন সর্বমহলে হাস্যকর বিষয় হয়ে উঠেছে। মৃত বিএনপি নেতাকে ‘গায়েবি জীবিত’ করে গায়েবি মামলা দেয়া যেন এখন পুলিশের নিত্যদিনের রুটিনে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী নেতাদের চেতনার স্তরে সুবিচার বলে কোনো জায়গা নেই।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই রায় যে শেখ হাসিনার নির্দেশ মোতাবেক হয়েছে তার বড় প্রমাণ আদালতে প্রায় ৪৯ লাখ মামলার জট থাকলেও আলোর গতিতে চলেছে এই মামলার কার্যক্রম। রাত ৮টা ৯টা পর্যন্ত একতরফাভাবে সাজানো সাক্ষীকে দিয়ে শেখানো বুলি বলানো হয়েছে আদালতে। একমাসে এই মামলাটির জন্য প্রতিদিন শুনানি করে ৪২ জন সাক্ষী দ্রুত গতিতে নিজেরা নিজেরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেছেন। আমাদের আইনজীবীরা এ ধরনের অস্বাভাবিক বিচার কার্যের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করতে গেলে তাদের ওপর পুলিশ ও সরকারদলীয় আইনজীবীরা একাধিকবার হামলা চালিয়েছে। তাদেরকে আদালত কক্ষ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। গোটা দেশবাসী অবাক বিস্ময়ে হতবাক হয়ে প্রত্যক্ষ করেছে কিভাবে তামাশার বিচারের নামে ক্যামেরা ট্রায়াল চালানো হয়েছে। আজকের ফরমায়েশি রায় সরকারপ্রধানের হিংসা ও আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ। দেশজুড়েই যখন আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। তারেক রহমানের নেতৃত্বে জনগণের মধ্যে যে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে সেটিকে বিভ্রান্ত করতে অবৈধ আওয়ামী সরকারের এটি একটি কূটচাল। একদফার চলমান আন্দোলনকে নেতৃত্বশূন্য করতে আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে প্রতিহিংসা মেটানো হয়েছে। যেমনটি করেছে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ডদিয়ে। বিনাশ ও সংকীর্ণতার পথ অবলম্বন করে তারা ন্যায়বিচারকে দেশান্তরিত করেছে। দেশের জনগণ বিচারের নামে এই প্রহসন, এই ফরমায়েশি রায় ঘৃণ্যাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।

তিনি বলেন, আপনারা জানেন, ২০০৭ সালে তথাকথিত ওয়ান ইলেভেনের জরুরি সরকার প্রতিপক্ষ দমনে দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে জিয়া পরিবারকে হেয় এবং রাজনৈতিক পরিমন্ডল থেকে উচ্ছেদ করার গভীর চক্রান্তে মেতে বাংলাদেশের অগণন মানুষের সমর্থনধন্য দেশনায়ক তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা: জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণরুপে মিথ্যে, বানোয়াট ও কাল্পনিক অভিযোগে মামলাটি দিয়েছিল। কারণ তথাকথিত জরুরি সরকার ছিল বর্তমান আওয়ামী লীগেরই আন্দোলনের ফসল। জরুরি সরকারের সময়ে শেখ হাসিনার নামে ১৫টি দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির মামলা করা হলেও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর প্রধানমন্ত্রী পদের ক্ষমতা ব্যবহার করে অনুগত বিচারপতিদের দিয়ে সবগুলো মামলা প্রত্যাহার করিয়ে নেন শেখ হাসিনা। কোনো মামলায় তাকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়নি। অথচ তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমানের এই মামলা চলার মতো কোনো আইনগত ভিত্তি-উপাদান না থাকা সত্ত্বেও হিংসা চরিতার্থ করার আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দিয়ে শেখ হাসিনা তার নীলনকশা কার্যকর করার জন্য চটজলদি জোড়াতালি দিয়ে প্রতিহিংসা পূরণের রায় বের করা হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ঠিকানা ও মানুষের প্রানপ্রিয় নেতা তারেক রহমানের রাজনৈতিক উত্থান সহ্য করতে পারছে না আওয়ামী লীগ। ঈর্ষা-প্রতিহিংসায় জ্বলেপুড়ে যাচ্ছেন জবরদস্তি করে জনগণের ঘাড়ে চেপে বসা শেখ হাসিনা। তাঁকে বিনাশ এবং তাঁর জনপ্রিয়তা ও উজ্জল ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য হেন অপকর্ম নেই যা করছে না এই ভোটারবিহীন সরকার। তিনি বাংলার মানুষের ভাগ্য বদলের লড়াইয়ে প্রধান দিশারী। তাঁর অনন্য দেশপ্রেম, জনকল্যানে মনোযোগ, ধীশক্তি, প্রজ্ঞা, দুরদৃস্টি, সততা আর বিচক্ষনতা এক ব্যাপক গণভিত্তি লাভ করেছে। সেই কারণেই শেখ হাসিনা টার্গেট করেছে তারেক রহমানকে।

তিনি আরো বলেন, ইতোপূর্বে কয়েকটি মিথ্যা মামলায় তারেক রহমানকে ফরমায়েশী রায়ে সাজা প্রদান করা হয়েছে। ইতিপূর্বে তারেক রহমান একটি মামলায় নিম্ন আদালতে খালাস পেয়েছিলেন। মানিলন্ডারিং মামলায় তারেক রহমানকে সাজা দেয়ার জন্য বিচারক মোতাহার হোসেনকে সরকারের লিখিত রায়ে সই করার জন্য তৎকালীন আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক এবং যুগ্ম সচিব বিকাশ কুমার সাহা অস্ত্র দিয়ে তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। সরকারের অন্যায় হুকুম অমান্য করে বিচারক হিসেবে সঠিক রায় দেয়ার ফলে মোতাহার হোসেন বর্তমানে বিদেশে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। সেই রায় উচ্চ আদালতে টেনে নিয়ে ওই মামলায় হাইকোর্ট তারেক রহমানকে সাত বছর সশ্রম সাজা ও ২০ কোটি টাকা জরিমানা করে। এই অবৈধ সরকার ১০ ট্রাক অস্ত্র ধরার মামলায় তারেক রহমানকে জড়িত দেখিয়েছে বিচার ও আইনের সকল নিয়ম কানুন লংঘন করে। এইসব মামলার এফআইআর বা চার্জশীটে তারেক রহমানের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। এমনকি একজন আসামীকে ৪ শ’ দিনের অধিক রিমান্ডে শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে অচেতন অবস্থায় একটি জবানবন্দী জোগাড় করলেও পরে তিনি কোর্টে তা প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু আজ্ঞাবহ আদালত তা প্রত্যাহার না করে নির্দোষ তারেক রহমানকে অভিযুক্ত দেখিয়ে বিচারের নামে প্রহসন করেছে। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার ষোড়শ সংশোধনীর রায় মনোপুত না হওয়ায় সরকারের সর্বোচ্চ মহলের নির্দেশে তাকে অপমান অপদস্ত করে অস্ত্রের মুখে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেন। এসব ঘটনায় বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশে ভেঙ্গেপড়া বিচার ব্যবস্থার স্বরুপ উন্মোচিত হয়েছে। কোনো বিচারক সরকারের হুকুমের বাইরে গিয়ে ন্যায়বিচার করার সাহস হারিয়েছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির বহুল আলোচিত হত্যা মামলা আদালতে তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য ৯৯ বার পেছানো হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ ৭৩ বার পেছানো হয়েছে। এরকম বহু আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর মামলা হিমাগারে ফেলে রেখে দেশনায়ক তারেক রহমান ও তার সহধর্মিনী ডা. জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে এই সাজানো মিথ্যা মামলার কার্যক্রম ১মাস ২০ দিনে শেষ করা ও আদেশ দেওয়ার মানে হলো জিয়া পরিবারকে রাজনীতি থেকে নির্মূল করা। প্রধানমন্ত্রী হিংসার প্রয়োগে দ্বিধা করেননি। ২১ আগস্ট মামলায় তারেক রহমানকে চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা ছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্দোলনের ফসল মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকারের সময়ও এ মামলার চার্জশিটে তারেক রহমানের নাম ছিল না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাদের একান্ত অনুগত, বিশ্বস্ত ও দলীয় লোক আব্দুল কাহার আকন্দকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয় শুধু তারেক রহমানকে উক্ত মামলায় জড়িত করার জন্য।

তিনি বলেন, তারেক রহমান বাংলাদেশের একজন বিপুল জনপ্রিয় জাতীয় নেতা। দল পরিচালনায় তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠিত। তাঁর দক্ষতা, যোগ্যতা ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতা অনন্য। তার নেতৃত্বে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন এখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে। অন্যদিকে ডা. জুবাইদা রহমান একদিকে যেমন জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ অন্যদিকে তিনিও দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী বর্ণাঢ্য পরিবারের সন্তান। মেধাবী চিকিৎসক জুবাইদা রহমান পড়ালেখা করেছেন সেরা চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে। তাঁর পিতা মরহুম মাহবুব আলী খান বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান। সুতরাং তারেক রহমান ও ডা: জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে মামলার রায় জনগন মানে না। এসব করে বিএনপির চলমান আন্দোলন দমন করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী, আপনি হিংসার পথে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনের মজলুম নেতা তারেক রহমানকে নতজানু করতে পারবেন না।

আজকে সরকার নিয়ন্ত্রিত আদালতের মাধ্যমে তারেক রহমান এবং তার সহধর্মিনী ডাঃ জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে ফরমায়েশি রায় প্রদানের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় সাজা প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

আড়াই বছরেও শেষ হয়নি সেতু নির্মাণ কাজ, দুর্ভোগে এলাকাবাসী

হিংসা ও আক্রোশ থেকে তারেক-জুবাইদাকে সাজা: মির্জা ফখরুল

প্রকাশের সময় : ১০:৪৮:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ অগাস্ট ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের সাজা ‘হিংসা ও আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ।

বুধবার (২ আগস্ট) সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানকে সাজা দেওয়াটা আওয়ামী দুঃশাসনের কোনো ব্যতিক্রমী ঘটনা বলে কারও মনে হয়নি। এর মধ্যদিয়ে অবৈধ আওয়ামী সরকারের ফরমায়েশি রায়ের আরেকটি দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো কেবল। ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে সরকার তার কোনো প্রতিপক্ষ রাখতে চায় না। বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে নীলনকশা বাস্তবায়ন করছে সরকার।

মির্জা ফখরুল বলেন, তারেক রহমান এবং তার স্ত্রীকে যে সাজা দেওয়া হবে তা নিয়ে কারো সংশয় ছিল না। কারণ বিরোধী দলের প্রধান নেতাদের নির্মূল করতে যেভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করা হয়, সেই নীলনকশা ধরেই সরকারপ্রধান এগিয়ে যাচ্ছেন। রাষ্ট্রক্ষমতা আঁকড়ে রাখা আওয়ামী সরকার তাদের কোনো প্রতিপক্ষ রাখতে চায় না।

তিনি বলেন, সরকারপ্রধান নিজেকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী রাখতে চান। সেজন্য আইন আদালত ও প্রশাসনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে রাজনৈতিক প্রধান প্রতিপক্ষকে নির্মূল করতে বদ্ধপরিকর হয়েছেন। আজ এই ফরমায়েশি রায় দেওয়ার ঘটনা দেশকে গণতন্ত্রশূন্য করার ধারাবাহিক চক্রান্তের অংশ।

তিনি আরো বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানসহ দেশজুড়ে বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে শুধুমাত্র নব্য বাকশালী দুঃশাসনকে চিরস্থায়ী রাখতে। সেজন্য আইন আদালতকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের এক দমনযন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। ন্যায়বিচার করার কারণে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে মামলা থেকে খালাস দেয়ায় বিচারক মোতাহার আর দেশে থাকতে পারেননি। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বিচার বিভাগে সরকারি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে ‘গানপয়েন্টে’ দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের সময় রামদা, লাঠিসোঁটা ও রড নিয়ে হামলা করে আওয়ামী ক্যাডার’রা যা মানুষের হাতে হাতে মোবাইলে ভিডিওতে দৃশ্যমান হয়েছে। অথচ মামলা হয় বিএনপির কয়েক বছর আগে মৃত, কারাবন্দী ও বিদেশে অবস্থানরত নেতাকর্মীদের নামে। মামলা দেয়ার পুলিশী তামাশা এখন সর্বমহলে হাস্যকর বিষয় হয়ে উঠেছে। মৃত বিএনপি নেতাকে ‘গায়েবি জীবিত’ করে গায়েবি মামলা দেয়া যেন এখন পুলিশের নিত্যদিনের রুটিনে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী নেতাদের চেতনার স্তরে সুবিচার বলে কোনো জায়গা নেই।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই রায় যে শেখ হাসিনার নির্দেশ মোতাবেক হয়েছে তার বড় প্রমাণ আদালতে প্রায় ৪৯ লাখ মামলার জট থাকলেও আলোর গতিতে চলেছে এই মামলার কার্যক্রম। রাত ৮টা ৯টা পর্যন্ত একতরফাভাবে সাজানো সাক্ষীকে দিয়ে শেখানো বুলি বলানো হয়েছে আদালতে। একমাসে এই মামলাটির জন্য প্রতিদিন শুনানি করে ৪২ জন সাক্ষী দ্রুত গতিতে নিজেরা নিজেরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেছেন। আমাদের আইনজীবীরা এ ধরনের অস্বাভাবিক বিচার কার্যের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করতে গেলে তাদের ওপর পুলিশ ও সরকারদলীয় আইনজীবীরা একাধিকবার হামলা চালিয়েছে। তাদেরকে আদালত কক্ষ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। গোটা দেশবাসী অবাক বিস্ময়ে হতবাক হয়ে প্রত্যক্ষ করেছে কিভাবে তামাশার বিচারের নামে ক্যামেরা ট্রায়াল চালানো হয়েছে। আজকের ফরমায়েশি রায় সরকারপ্রধানের হিংসা ও আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ। দেশজুড়েই যখন আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। তারেক রহমানের নেতৃত্বে জনগণের মধ্যে যে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে সেটিকে বিভ্রান্ত করতে অবৈধ আওয়ামী সরকারের এটি একটি কূটচাল। একদফার চলমান আন্দোলনকে নেতৃত্বশূন্য করতে আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে প্রতিহিংসা মেটানো হয়েছে। যেমনটি করেছে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ডদিয়ে। বিনাশ ও সংকীর্ণতার পথ অবলম্বন করে তারা ন্যায়বিচারকে দেশান্তরিত করেছে। দেশের জনগণ বিচারের নামে এই প্রহসন, এই ফরমায়েশি রায় ঘৃণ্যাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।

তিনি বলেন, আপনারা জানেন, ২০০৭ সালে তথাকথিত ওয়ান ইলেভেনের জরুরি সরকার প্রতিপক্ষ দমনে দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে জিয়া পরিবারকে হেয় এবং রাজনৈতিক পরিমন্ডল থেকে উচ্ছেদ করার গভীর চক্রান্তে মেতে বাংলাদেশের অগণন মানুষের সমর্থনধন্য দেশনায়ক তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা: জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণরুপে মিথ্যে, বানোয়াট ও কাল্পনিক অভিযোগে মামলাটি দিয়েছিল। কারণ তথাকথিত জরুরি সরকার ছিল বর্তমান আওয়ামী লীগেরই আন্দোলনের ফসল। জরুরি সরকারের সময়ে শেখ হাসিনার নামে ১৫টি দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির মামলা করা হলেও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর প্রধানমন্ত্রী পদের ক্ষমতা ব্যবহার করে অনুগত বিচারপতিদের দিয়ে সবগুলো মামলা প্রত্যাহার করিয়ে নেন শেখ হাসিনা। কোনো মামলায় তাকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়নি। অথচ তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমানের এই মামলা চলার মতো কোনো আইনগত ভিত্তি-উপাদান না থাকা সত্ত্বেও হিংসা চরিতার্থ করার আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দিয়ে শেখ হাসিনা তার নীলনকশা কার্যকর করার জন্য চটজলদি জোড়াতালি দিয়ে প্রতিহিংসা পূরণের রায় বের করা হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ঠিকানা ও মানুষের প্রানপ্রিয় নেতা তারেক রহমানের রাজনৈতিক উত্থান সহ্য করতে পারছে না আওয়ামী লীগ। ঈর্ষা-প্রতিহিংসায় জ্বলেপুড়ে যাচ্ছেন জবরদস্তি করে জনগণের ঘাড়ে চেপে বসা শেখ হাসিনা। তাঁকে বিনাশ এবং তাঁর জনপ্রিয়তা ও উজ্জল ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য হেন অপকর্ম নেই যা করছে না এই ভোটারবিহীন সরকার। তিনি বাংলার মানুষের ভাগ্য বদলের লড়াইয়ে প্রধান দিশারী। তাঁর অনন্য দেশপ্রেম, জনকল্যানে মনোযোগ, ধীশক্তি, প্রজ্ঞা, দুরদৃস্টি, সততা আর বিচক্ষনতা এক ব্যাপক গণভিত্তি লাভ করেছে। সেই কারণেই শেখ হাসিনা টার্গেট করেছে তারেক রহমানকে।

তিনি আরো বলেন, ইতোপূর্বে কয়েকটি মিথ্যা মামলায় তারেক রহমানকে ফরমায়েশী রায়ে সাজা প্রদান করা হয়েছে। ইতিপূর্বে তারেক রহমান একটি মামলায় নিম্ন আদালতে খালাস পেয়েছিলেন। মানিলন্ডারিং মামলায় তারেক রহমানকে সাজা দেয়ার জন্য বিচারক মোতাহার হোসেনকে সরকারের লিখিত রায়ে সই করার জন্য তৎকালীন আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক এবং যুগ্ম সচিব বিকাশ কুমার সাহা অস্ত্র দিয়ে তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। সরকারের অন্যায় হুকুম অমান্য করে বিচারক হিসেবে সঠিক রায় দেয়ার ফলে মোতাহার হোসেন বর্তমানে বিদেশে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। সেই রায় উচ্চ আদালতে টেনে নিয়ে ওই মামলায় হাইকোর্ট তারেক রহমানকে সাত বছর সশ্রম সাজা ও ২০ কোটি টাকা জরিমানা করে। এই অবৈধ সরকার ১০ ট্রাক অস্ত্র ধরার মামলায় তারেক রহমানকে জড়িত দেখিয়েছে বিচার ও আইনের সকল নিয়ম কানুন লংঘন করে। এইসব মামলার এফআইআর বা চার্জশীটে তারেক রহমানের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। এমনকি একজন আসামীকে ৪ শ’ দিনের অধিক রিমান্ডে শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে অচেতন অবস্থায় একটি জবানবন্দী জোগাড় করলেও পরে তিনি কোর্টে তা প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু আজ্ঞাবহ আদালত তা প্রত্যাহার না করে নির্দোষ তারেক রহমানকে অভিযুক্ত দেখিয়ে বিচারের নামে প্রহসন করেছে। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার ষোড়শ সংশোধনীর রায় মনোপুত না হওয়ায় সরকারের সর্বোচ্চ মহলের নির্দেশে তাকে অপমান অপদস্ত করে অস্ত্রের মুখে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেন। এসব ঘটনায় বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশে ভেঙ্গেপড়া বিচার ব্যবস্থার স্বরুপ উন্মোচিত হয়েছে। কোনো বিচারক সরকারের হুকুমের বাইরে গিয়ে ন্যায়বিচার করার সাহস হারিয়েছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির বহুল আলোচিত হত্যা মামলা আদালতে তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য ৯৯ বার পেছানো হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ ৭৩ বার পেছানো হয়েছে। এরকম বহু আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর মামলা হিমাগারে ফেলে রেখে দেশনায়ক তারেক রহমান ও তার সহধর্মিনী ডা. জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে এই সাজানো মিথ্যা মামলার কার্যক্রম ১মাস ২০ দিনে শেষ করা ও আদেশ দেওয়ার মানে হলো জিয়া পরিবারকে রাজনীতি থেকে নির্মূল করা। প্রধানমন্ত্রী হিংসার প্রয়োগে দ্বিধা করেননি। ২১ আগস্ট মামলায় তারেক রহমানকে চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা ছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্দোলনের ফসল মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকারের সময়ও এ মামলার চার্জশিটে তারেক রহমানের নাম ছিল না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাদের একান্ত অনুগত, বিশ্বস্ত ও দলীয় লোক আব্দুল কাহার আকন্দকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয় শুধু তারেক রহমানকে উক্ত মামলায় জড়িত করার জন্য।

তিনি বলেন, তারেক রহমান বাংলাদেশের একজন বিপুল জনপ্রিয় জাতীয় নেতা। দল পরিচালনায় তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠিত। তাঁর দক্ষতা, যোগ্যতা ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতা অনন্য। তার নেতৃত্বে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন এখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে। অন্যদিকে ডা. জুবাইদা রহমান একদিকে যেমন জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ অন্যদিকে তিনিও দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী বর্ণাঢ্য পরিবারের সন্তান। মেধাবী চিকিৎসক জুবাইদা রহমান পড়ালেখা করেছেন সেরা চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে। তাঁর পিতা মরহুম মাহবুব আলী খান বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাবেক প্রধান। সুতরাং তারেক রহমান ও ডা: জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে মামলার রায় জনগন মানে না। এসব করে বিএনপির চলমান আন্দোলন দমন করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী, আপনি হিংসার পথে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনের মজলুম নেতা তারেক রহমানকে নতজানু করতে পারবেন না।

আজকে সরকার নিয়ন্ত্রিত আদালতের মাধ্যমে তারেক রহমান এবং তার সহধর্মিনী ডাঃ জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে ফরমায়েশি রায় প্রদানের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় সাজা প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি।